মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো
মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

  • অথবা, মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে লিখ। 

উত্তর : ভূমিকা : মুঘল শাসনকাল ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। মুঘল শাসনামলে সকল শ্রেণির মানুষ তার নিজ নিজ স্বাধীনতা ভোগ করতো। সমাজে সবাই সুখে- শান্তিতে বসবাস করতো। 

হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ভারতবর্ষে মুঘল আমলে যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো ছিল। সমাজে তারা একে অপরের সহযোগী হিসেবে বসবাস করতো। ছিল না কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা। 

মুঘল শাসকবর্গ প্রজাহিতৈষী ছিলেন।প্রজাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতেন। এভাবেই মুঘল শাসন আমল ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া মুঘল শাসকরা সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করে। 

নিয়ে মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা আলোচিত হলো :

১. সামন্ত সমাজ : মুঘল আমল জুড়েই ভারতবর্ষে সামন্ত্রপ্রথা বিরাজ করছিল। অর্থাৎ ভূমির মালিকানা শাসকবর্গের হাতে থাকলেও প্রজাগণ নিজের ইচ্ছামতো তা চাষাবাদ করতে পারতো এবং একটা নির্ধারিত খাজনা শাসকবর্গকে দিতে হতো।

এ সামস্ত সমাজে অভিজাত তথা শাসকশ্রেণি ব্যাপক সুবিধা ভোগ করতো। তারা খুবই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতো। 

কারণ তাদের বেতন-ভাতা ছিল খুব বেশি। তাই তারা খুবই আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতো। এমনকি প্রচুর দাস-দাসী রাখতো। ফলে তাদের নৈতিকতার অভাব ছিল।

২. অভিজাত শ্রেণি : মুঘল শাসনামলে অভিজাত শ্রেণি বলতে মূলত আফগান, তুর্কি প্রভৃতি স্থান হতে আগত সম্প্রদায়কে বোঝাত। আর এই অভিজাত সম্প্রদায় ছিল মূলত মুঘল শাসনের কেন্দ্রবিন্দু।

সমাজের উঁচু শ্রেণি বলতে এই অভিজাতরা ছিল। এই অভিজাতরাও খুবই আয়েশী জীবনযাপন করতো। এরাও তাদের মহলে বিবাহিত স্ত্রী ছাড়াও দাসী রাখত। নারী সুরায় ডুবে থাকতো।

৩. মধ্যবিত্ত শ্রেণি : মুঘল শাসনামলে শাসক বা অভিজাত শ্রেণির নিচে ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এরা ছিল মূলত ব্যবসায়ী, দোকানদার, বৃত্তিজীবী, চিকিৎসক ইত্যাদি। 

মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রা ছিল খুবই অনাড়ম্বর। এরা খুবই সাদামাটা জীবনযাপন করতো। কারণ আয় ছিল খুবই সীমিত। 

তাই ব্যবসায় সামান্য ক্ষতি বা পণ্যের মূল্য উঠানামা করতো তাহলে এই শ্রেণি কষ্টে পড়ে যেত। এদের জীবনযাত্রার মান নিচু ছিল।

৪. সাধারণ লোকের জীবনযাত্রা : মুঘল শাসনামলে সাধারণ লোকের জীবনযাত্রা ছিল একেবারেই গতানুগতিক, তারা দিনে আনে দিনে খাই। এদের জীবনে তেমন কোনো উল্লাস বা আনন্দ উৎসব ছিল না। 

এরা মূলত ক্ষেত্রে খামারে কাজ করতো। কৃষক, কামার, তাঁতি, শ্রমিক প্রভৃতি ছিল এ শ্রেণিভুক্ত। এদের তেমন কোনো ভালো কাপড় বা ভালো খাবার জুটতো না। কোনো মতে এরা দিনাতিপাত করতো।

৫. জাতিভেদ প্রথা : মুঘল আমলেও জাতিভেদ প্রথাও লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে শাসকবৃন্দ তথা অভিজাত শ্রেণি নিচু শ্রেণির সাথে মেলামেশা করতো না। 

তারা নিজেদের অভিজাত শ্রেণি ভেবে সবসময় দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। সাধারণত অভিজাত শ্রেণির লোকজন প্রশাসনের উঁচু পদে নিয়োগ লাভ করতো। চণ্ডালদের সমাজে অস্পৃশ্য বলা হতো।

৬. মুসলিম সমাজে শ্রেণিবিভাগ : মুঘল আমলে হিন্দু সমাজের পাশাপাশি মুসলিম সমাজে শ্রেণিভেদ ছিল। এই উপমহাদেশের অর্থাৎ ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকজনকে নিচু শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। 

আর উঁচু তথা অভিজাত শ্রেণি ছিল সৈয়দ, পাঠান, পশতুন প্রভৃতি লোকজন। যারা মূলত এই উপমহাদেশের অভিবাসী ছিল। 

তারা পারস্য, আফগান, তুর্কি প্রভৃতি স্থান হতে ভারতবর্ষে এসেছিল। এরা বর্ণে উজ্জ্বল ফর্সা ছিল। এটাও জাতিভেদ প্রথার অন্যতম কারণ ছিল।

৭. নারীদের অবস্থা : মুঘল আমলে নারীদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল। সমাজের সর্বস্তরে নারীর বিচরণ ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার হতে সম্রাজ্ঞী পর্যন্ত নারীরা এ সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। 

তবে অভিজাত শ্রেণির চেয়ে নিম্নশ্রেণির নারীরা এ সময় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতো। রানি যোধাবাই, গোল্ডয়ানার রানি দুর্গাবতী, আহমেদ নগরের রানি চাঁদ সুলতানা, নূরজাহান, মমতাজা মহল, জাহানারা বেগম সবাই তাঁদের নিজ নিজ যোগ্যতায় ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।

৮. হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক : মুঘল আসলে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো ছিল। একে অপরের বিপদে-আপদে সহযোগিতা করতো। 

দুই সম্প্রদায়ের মানুষের ভিতরে হানাহানি বা ভেদাভেদ ছিল না। আর এটায় মুঘল শাসকবর্গের অনেক অবদান ছিল। তারা সাম্রাজ্য শাসনের সুবিধার জন্য হিন্দু-মুসলিম সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতো।

সম্রাট আকবর তার নিজ শাসনের উঁচু পদে হিন্দুদের নিয়োগ দিয়েছিল। তাছাড়া তিনি হিন্দু বিবাহও করেন। ফলে ঐ সময় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক ভালো ছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল আমলে বাংলা তথা ভারতবর্ষের সামাজিক অবস্থা অনেক ভালো ছিল। সমাজে কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছিল না। সবাই মিলেমিশে বসবাস করতো। 

সমাজে নারীর অবস্থাও সে সময় ছিল অনেক উপরে। এমনকি সাম্রাজ্য পরিচালনা পর্যন্ত হতো নারীর হুকুমে। মুঘল শাসকরা উদার প্রকৃতির ছিলেন। 

তাই সাধারণত কোনো দুর্যোগে প্রজারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও মুঘল শাসকরা করতেন। 

তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে সমাজ মোটামুটি গতিশীল ছিল। যে যার পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। সমাজে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। যদি তোমাদের আজকের মুঘল যুগের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ