পালবংশ সম্পর্কিত লিপিমালাসমূহ আলোচনা কর

পালবংশ সম্পর্কিত লিপিমালাসমূহ আলোচনা কর
পালবংশ সম্পর্কিত লিপিমালাসমূহ আলোচনা কর

পালবংশ সম্পর্কিত লিপিমালাসমূহ আলোচনা কর

  • অথবা, যেসব লিপিমালার সাহায্যে পালবংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় সেগুলো ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস জানতে হলে কোনো না কোনো উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। তেমনি প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন উৎস বা উপাদানের উপর নির্ভর করতে হয়। 

আর এসব উপাদানসমূহ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান। লিখিত উপাদানের মধ্যে সাহিত্য, জীবনী, দলিলপত্র প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য আর অলিখিত উপাদানের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, স্মৃতিস্তম্ভ, সৌধ, ইমারত, মুদ্রা, মূর্তি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

যাহোক পালবংশ সম্পর্কে জানার উৎসগুলোর মধ্যে তাম্রশাসন বা লিপিমালার গুরুত্ব অনেক বেশি ।

→ পালবংশ সম্পর্কিত লিপিমালা : পালবংশের উত্থান ও . তাদের রাজত্ব সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না তারপরও তাম্রশাসনের মাধ্যমে অনেক কিছু অনুমান করা যায়। 

পালবংশ সম্পর্কিত লিপিমালাসমূহ নিম্নরূপ :

১. খালিমপুর তাম্রশাসন : পালবংনের ইতিহাস রচনায় খালিমপুর তাম্রশাসন ছিল অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম। খালিমপুরের তাম্রশাসনে গোপালের পিতার নাম ব্যাপট বলে উল্লেখ আছে।

এছাড়াও খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে পাল সম্রাট ধর্মপাল সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। তাই বলা যায় পালবংশের ইতিহাস রচনায় খাদিমপুর তাম্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।

২. ভঙ্গের তাম্রশাসন : পাল সাম্রাজ্যের ইতিহাস জানার জন্য অন্যতম আরো একটি লিপিমালা হলো- দেবপালের শুঙ্গের ভয়েশাসন। এ তাম্রশাসন থেকে দেবপালের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু যায়।

এছাড়াও দেবপালের গুঙ্গের তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, রাজা গোপাল যে, বাংলার অরাজকতার রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে পাল সাম্রাজ্যের গোড়া পত্তন করেন।

৩. বানগড় ও কমৌলির তাম্রলিপি : পাল রাজাদের তাম্রশাসনসমূহের মধ্যে বানগড় ও কমৌলির তাম্রশাসন অন্যতম। এ তাম্রলিপি থেকে পাল রাজবংশ ও পাল রাজাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। বানগড় ও কমৌলি তাম্রলিপিতে উল্লেখ আছে যে, পাল রাজাদের আদিবাস স্থান ছিল উত্তর বাংলায়।

৪. ময়নামতির তাম্রশাসন : কুমিল্লা জেলার ময়নামতিতে প্রাপ্ত তিনটি তাম্রশাসন ছিল প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উৎস। এ তাম্রশাসন থেকে পাল ও দেব রাজবংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। 

অষ্টম শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলার দিক্ষণ-পূর্ব অঞ্চলে দেব রাজবংশের উদ্ভব ঘটে। ময়নামতিতে প্রাপ্ত এ তাম্রশাসনের মাধ্যমে দেব রাজবংশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।

৫. রাষ্ট্রকূট রাজের প্রশস্তি : রাষ্ট্রকূট রাজ্যের প্রশস্তিতে বর্ণনা আছে যে, ধর্মপাল ও চক্রাধ উভয়েই তৃতীয় গোবিন্দের আনুগত্য স্বীকার করেন। 

এছাড়াও বিভিন্ন তন্ত্রশাসন ৰা লিপিমালা থেকে ধর্মপাল সম্পর্কে আমরা আরো অনেক কিছু জানতে পারি। দেবপাল যে, বাংলায় কীর্তিমূলক অনেক তথ্য তাঁর তাম্রশাসন থেকে জানতে পারি।

৬. গরুড় গুডলিপি : পালবংশের ইতিহাস পুনর্গঠনে লিপিমালাসমূহের মধ্যে বরুড় স্তলিপি অন্যতম। এ লিপিতে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি উৎকূল ধ্বংস, গুর্জরদের পর্পখর্ব ও হুন গর্ব হরণ করেছিলেন। এছাড়াও এ লিপিমালার থেকে দেবপাল সম্পর্কে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য জানা যায়।

৭. ড. আব্দুল মমিনের মতামত : তাম্রশাসন সম্পর্কে ড. আব্দুল মমিন চৌধুরী একটি বিশেষ মত প্রকাশ করেছেন। তিনি ধর্মপাল সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেন যে, “খালিমপুরের | তাম্রলিপিতে ধর্মপালের উপর সামন্ত রাজাদের সম্পর্কে অভিনয়েক্তি আছে"।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যের অভাবে পাল রাজবংশের শাসনামলের বিস্তারিত ইতিহাস জানা না গেলেও তৎকালীন সময়ের যেসব উপাদান আমরা পাই, তা থেকে পাল রাজবংশের ইতিহাস পুনর্গঠনে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আর এসব উৎস বা উপাদানগুলোর মধ্যে তাম্রশাসন বা লিপিমালা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হিসেবে পরিচিত। যার মাধ্যমে আমরা পালবংশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ