প্রাচীন বাংলা সম্পর্কিত ল্যাটিন উৎসের বর্ণনা দাও

প্রাচীন বাংলা সম্পর্কিত ল্যাটিন উৎসের বর্ণনা দাও
প্রাচীন বাংলা সম্পর্কিত ল্যাটিন উৎসের বর্ণনা দাও

প্রাচীন বাংলা সম্পর্কিত ল্যাটিন উৎসের বর্ণনা দাও

  • অথবা, প্রাচীন বাংলার জ্ঞান অর্জন করতে ল্যাটিন উৎসের বর্ণনা দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস জানতে হলে বিভিন্ন উৎস বা উপাদানের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এসব উৎস বা উপাদানসমূহ দুই ভাগে বিভক্ত। 

যথা- লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান। লিখিত উপাদানের মধ্যে সাহিত্য, জীবনী, দলিলপত্র প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আর অলিখিত উপাদানের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মূর্তি, মুদ্রা, ভাস্কর্য, ইমারত ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

লিখিত উৎসসমূহের মধ্যে বিদেশি পর্যটক, পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকালে বহু লেখক তাঁর সঙ্গে ভারতবর্ষে আগমন করেছিলেন। 

যারা তাঁর আক্রমণ সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন। এছাড়াও ল্যাটিন বা রোমান পণ্ডিতরাও তাঁর সম্পর্কে ও বাংলা সম্পর্কে মূল্যবান বিবরণ দিয়েছেন।

ল্যাটিন উৎসসমূহ : ল্যাটিন বা রোমান লেখকগণ বাংলা সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রদান করেছেন তার গুরুত্ব অনেক। ল্যাটিন তথা রোমান পণ্ডিতদের বিভিন্ন বিবরণসমূহ হলো ল্যাটিন উৎস । 

ল্যাটিন পণ্ডিতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভার্জিল, লিনি ও টলেমি প্রমুখগণ। তারা বাংলা সম্পর্কে বিভিন্ন মূল্যবান তথ্য প্রদান করে গেছেন। 

ল্যাটিন লেখকগণ অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। যেমন- প্লিনির রচিত গ্রন্থের নাম হলো : 'Natural History' বা প্রকৃতির ইতিহাস। টলেমির রচিত গ্রন্থের নাম হলো .: 'পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সী'।

• ল্যাটিন উৎসের ভিত্তিতে বাংলার ইতিহাস : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে ল্যাটিন উৎসসমূহ বেশ গুরুত্ব রাখে। ল্যাটিন উৎসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, বাংলায় তখন প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত। অর্থনৈতিকভাবে বাংলা তখন বেশ সমৃদ্ধিশালী ছিল। 

নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. ভার্জিল এর বর্ণনা : ভার্জিল নামক রোমান কবি প্রাচীন বাংলার গঙ্গারিডই রাজ্য সম্পর্কে বিবরণ প্রদান করেন। তিনি গঙ্গারিডইকে সম্পদশালী দেশ বলে তার কবিতায় উল্লেখ করেছেন। তিনি বাংলা সম্পর্কে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন ।

২. প্লিনির বর্ণনা : ল্যাটিন পণ্ডিতদের মধ্যে প্লিনি ছিলেন অন্যতম একজন পণ্ডিত। তিনি বাংলা সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য প্রদান করেছেন। 

তার বর্ণনা থেকে গঙ্গারিডই রাজ্যের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। তার বর্ণনা মতে, পার্থালিম ছিল গঙ্গারিডইর রাজধানী। তিনি গঙ্গারিডই রাজ্যের সৈন্যবাহিনী সম্পর্কেও বিবরণ প্রদান করেন।

৩. টলেমির বর্ণনা : ল্যাটিন তথা রোমান পণ্ডিত টলেমি ছিলেন উল্লেখযোগ্য একজন ভূগোলবিদ। তার রচিত গ্রন্থের নাম হলো : 'পেরিপ্লাস'। 

পেরিপ্লাস গ্রন্থের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, দ্বিতীয় শতকে গঙ্গার ভাটি এলাকায় শক্তিশালী এক রাজ্য গড়ে ওঠেছিল। আর গঙ্গ ছিল এ রাজ্যের রাজধানী ও বিখ্যাত নদীবন্দর। 

পেরিপ্লাস গ্রন্থ থেকে আরো জানা যায় যে, তৎকালীন সময়ে বাংলায় খুব সম্ভবত সোনার খনি পাওয়া গিয়েছিল। এর কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, তৎকালীন সময়ে বাংলায় অনেক স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যেত।

৪. গ্রিকদের বর্ণনা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস জানার অন্যতম আর একটি উপাদান হলো গ্রিক ঐতিহাসিকদের বর্ণনা। রোমান বা ল্যাটিন ঐতিহাসিকদের পাশাপাশি গ্রিকরাও বেশ অবদান রাখে। 

গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকালে অনেক পণ্ডিত তাঁর সঙ্গে ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং তারা আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করেন। 

তাঁরা বাংলার তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির অবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করেন। গ্রিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ডায়াডোরাস, আরিয়ান, প্লুটার্ক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে রোমান বা ল্যাটিন বর্ণনাসমূহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ল্যাটিন উৎসসমূহ প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। 

বিশেষ করে ৪র্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের অনেক উৎস থেকে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। তাই বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে ল্যাটিন উৎসের গুরুত্ব অপরিসীম । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ