প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন

 

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন 

  • অথবা, বাংলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলার কারণ কি?
  • অথবা, বাংলার ইতিহাসে গুপ্তযুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক যুগের পরে গুপ্তদের আগমন ঘটে। গুপ্ত বংশের আদি পুরুষ শ্রীগুপ্ত। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ- পঞ্চম শতকে প্রাচীন ভারতে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

শুধু তাই নয় সাম্রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটান। সভ্যতার বিভিন্ন দিকে গুপ্তরা প্রভূত উন্নতি ঘটায় বলে এ যুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয়। 

শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা- সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের এ যুগ শুধু বাংলায় নয় পুরো উপমহাদেশে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে ।

বাংলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলার কারণ : আমরা জানি, প্রাগৈতিহাসিক কালের ইতিহাস তেমন জানা যায় না। কিন্তু গুপ্তযুগের সময় বিভিন্ন সুত্রে ইতিহাস জানা যায়। এর মধ্যে তারা সাম্রাজ্যে ব্যাপক অবদান রাখেন। 

নিম্নে গুপ্তযুগকে স্বর্ণ যুগ বলার কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো :

১. প্রাচীন জ্ঞান-ভাণ্ডার উদ্ভব : গুপ্ত বংশের রাজাগণ জ্ঞান আহরণের জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন জ্ঞানভাণ্ডার পুনরুদ্ধার করেন। শুধু তাই নয়, এসব জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই তারা উন্নতি সাধন করেছিল।

২. জ্ঞানের পরিধি বিস্তার : গুপ্ত রাজাদের উদারনৈতিক মনোভাবের ফলে চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং জ্ঞানের পরিধির ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

৩. জ্যোতির্বিদ্যা : গুপ্ত আমলে বিজ্ঞানীদের সম্মান করা হতো এবং সে সময়ে জ্যোতির্বিদ্যায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। রাজা সমুদ্রগুপ্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য মানমন্দির নির্মাণ করেন।

৪. ভূগোল : প্রাচীন বাংলার ভৌগোলিক অবস্থার বিভিন্ন দিক নির্ণয় এবং স্থান অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ প্রাচীন বাংলায় গুপ্ত আমলে লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ, তারা ভৌগোলিক দিক নির্ণয়ে অনেক উন্নতি করেন।

৫. চিকিৎসা : প্রাচীন বাংলার গুপ্ত আমলের চিকিৎসকগণ পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিল। তারা বিভিন্ন কঠিন রোগ নিরাময়ের ঔষধ আবিষ্কার করেছিল।

৬. ইতিহাস শাস্ত্র : প্রাক-ঐতিহাসিক কালের ইতিহাস তেমন জানা যায় না। কিন্তু গুপ্ত আমল থেকে ইতিহাসের . ছায়াচিত্র আমরা দেখতে পাই। 

সে সময় ইতিহাস রচনায় রাজারা ঐতিহাসিকদের সাথে করে নিয়ে কোথাও জয় করতে যেতেন। যার ফলে সহজে ইতিহাস রচিত হতো।

৭. শিক্ষা ক্ষেত্রে : গুপ্তরাজারা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সে সময়ে হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য ছিল। রাজাগণ হিন্দু ধর্ম চর্চার জন্য বিভিন্নস্থানে মন্দির কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে গুপ্ত যুগে অনেক উন্নতি হয়েছে।

৮. কৃষিক্ষেত্রে : গুপ্ত আমলে কৃষি ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তা স্মরণ করে রাখার মত। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য শাসকগণ কৃষকদেরকে ভর্তুকি হিসেবে সার দিয়ে উৎসাহিত করত।

৯. ব্যবসা-বাণিজ্যে : গুপ্ত আমলে ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ঘটেছে। সে সময় দূর দেশীয় অনেক দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। আর ব্যবসা বাণিজ্যের ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, গুপ্ত যুগে প্রাচীন বাংলায় সব ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে। তাই এ যুগকে প্রাচীন বাংলার স্বর্ণযুগ বলা যায়। 

এ যুগে তখন বিজ্ঞান, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি দিক দিয়ে উন্নতির জন্য এ যুগকে স্বর্ণযুগ বলা হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ