প্রাচীন বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

প্রাচীন বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
প্রাচীন বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

প্রাচীন বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যের বিবরণ দাও ।
  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীনকালে বাংলাদেশ বলতে কোনো নাম ছিল না। বাংলাদেশ বলতে এখন যে অঞ্চলটি বোঝায় তখন সে অঞ্চলে কোনো অখণ্ড রাজ্যও ছিল না। 

এদেশ তখন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং এ রাজ্যগুলো বিভিন্ন জনপদ বা রাষ্ট্র নামে অভিহিত হতো। বিভিন্ন জনপদের সমষ্টিই বঙ্গ বা বাংলা। 

এ জনপদগুলোর মধ্যে বঙ্গ, পুণ্ড্র, গৌড়, রাঢ়, বরেন্দ্র, সমতট ও হরিকেল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ সব রাজ্যের সীমাও বিস্তৃতি সঠিক নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ রাজশক্তির হ্রাস- বৃদ্ধির ফলে এদের সীমানা বার বার পরিবর্তিত হয়েছে।

→ প্রাচীন বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : ভূ-প্রাকৃতিক প্রভাব বাংলার আবহাওয়াকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। নদীমাতৃক বাংলার সবুজ শ্যামলিমা, উদার সীমাহীন আকাশ, ষড় ঋতুর বিচিত্র প্রকাশ বাঙালিদের জাতীয় চরিত্র ও ইতিহাসকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। এ বৈশিষ্ট্যই আবহমানকাল ধরে বাঙালির সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে লালন করে চলেছে। 

নিচে বাংলার ভূ- প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :

১. আবহাওয়া : বাংলার আবহাওয়ায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রূপ রয়েছে। যা প্রাচীনকাল থেকেই লালিত হয়ে আসছে। অসংখ্য নদী-নালা নিয়ে ঘেরা বাংলার দু-কূল জুড়ে গড়ে উছেছে কত নগর বন্দর, জনপদ, সেখানে মানুষের হাট বসেছে, পণ্যের মেলা বসেছে, হৃদয়ের আদান-প্রদান চলছে, সভ্যতা কৃষ্টির পরা জেগেছে প্রাণের স্পন্দন। 

আবার এক সময় ধীর শান্ত নদী প্রবল আক্রোশে দুর্বার হয়েছে। বর্ষা ও বন্যার প্রবল জলধারায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে- এক কূল ভেঙে আর এক কূল গড়ে উঠেছে, নিশ্চিহ্ন হয়েছে। 

দীর্ঘদিনের পরিচিত নগর, বন্দর ও জনপদ। এভাবে ভাঙা গড়াকে বুকে নিয়ে জোয়ার-ভাঁটার দেশ বাংলার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে।

২. জলবায়ু : ভূ-প্রাকৃতিক গঠন ও আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য বাংলার জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। 

চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক বর্ণনা দিতে গিয়ে তার জলবায়ুর কথাও উল্লেখ করেছেন। 

“তাবাকাত-ই-নাসিরীতে" উল্লেখিত আছে যে, “বাংলার আবহাওয়া মাঝারি এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্য অত্যন্ত সিক্ত। 

কর্কটক্রান্তি রেখা এদেশের মাঝ বরাবর অতিক্রম করেছে এবং ভূ-প্রাকৃতিকভাবে দেশটি বিষুবরেখার উত্তরে অবস্থিত, সেহেতু এখানকার আবহাওয়া মৃদু ও নাতিশীতোষ্ণ। 

পূর্ব বঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য সেখানকার মাটি আর্দ্র। মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ এ বৃষ্টিপাতের কারণ। 

বাংলার ঋতুচক্রে বর্ষার ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য, তাই বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

৩. নদীমাতৃকতা : বাংলার মূলত গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের বর্ষীপ অববাহিকায় অবস্থিত- পদ্মা, যমুনা করতোয়া, মেঘনা। এদের শাখা নদী, উপনদী এবং জালের মতো ছড়ানো-ছিটানো হাজার হাজার খাল-বিল সুপ্রাচীনকালথেকে এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। 

এসব নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জনপদ, নগর, শহর ও বন্দর। এসব নদ- নদী এদেশের ভূমিকে দিয়েছে উর্বরতা। এসব নদীর ভাঙা-গড়ার সাথে খাপ খাইয়ে এদেশের জনসাধারণ হয়েছে সংগ্রামমুখী।

৪. সীমান্ত প্রকৃতি : বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপোসাগর ও দুর্গম সুন্দরবন, উত্তরে হিমালয়ের শাখাবিশেষ; পূর্বে আসাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা এবং পশ্চিমে রাজমহল ঝাড়খণ্ডের বনভূমি ও বীরভূম মালভূমির পার্বত্য অঞ্চল বলে বিদেশিদের পক্ষে বাংলা বিজয় সহজসাধ্য ছিল না।

৫. বনভূমি : চট্টগ্রামের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি বন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার গজারি বন এবং খুলনায় বন। 

চব্বিশ পরগণার দক্ষিণাংশের এক বিস্তৃত এলাকা ঘনবদের দুর্গম এলাকা হিসেবে প্রাচীনকালে বাংলার ভূ-প্রকৃতিকে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছে। তাই বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রূপের অন্যতম একটি রহস্য হচ্ছে বনভূমি ।

৬. দ্বীপভূমি : ব-দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশই বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বের অধিকাংশ এলাকা নদীবাহিত পলি দিয়ে গঠিত এবং সাগর সীমানায় অবস্থিত বলে বছরের বেশির ভাগ সময়ই এ এলাকা জোয়ারের জলে জলমগ্ন থাকে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্টা বাংলাকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করেছে। প্রাচীন বাংলার আবহাওয়া, জলবায়ু, নদীমাতৃকতা, প্রভৃতি বাংলার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। 

এ প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে বাংলার জনসাধারণ হয়ে উঠেছে দুর্বার ও সংঙ্গামুখী। অপর মনোরম আবহাওয়া এদেশের মানুষকে প্রকৃতিগত ভাবে শান্ত ও কোমল স্বভাবের করে তুলেছে। 

এ দ্বি-মুখী বৈশিষ্ট্য তাদের চারিত্রিক মাধুর্যে এক নতুন অভিনবত্ব দান করেছে। যা তাদের জীবন চলার পথে সহায়ক করেছে। 

এদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে নদী ইতিহাসের ধারায় অনেক বৈশিষ্ট্য ও উপাদান যুগিয়ে আসছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ