প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে মুদ্রার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে মুদ্রার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে মুদ্রার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে মুদ্রার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর

  • অথবা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে মুদ্রা অবদান সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
  • অথবা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে মুদ্রার তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভূমিকা অপরিসীম। এ সকল নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন হলো মুদ্রা। 

মুদ্রার মাধ্যমে সমসাময়িক অর্থনীতি, রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মানুষের জীবনযাপন সম্পর্কে জানা যায়। বিভিন্ন ধরনের মুদ্রায় বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে। 

কিছু মুদ্রায় রাজার নাম উল্লেখ থাকে। আবার মুদ্রা জারির স্থান, রাজধানী ইত্যাদি সম্পর্কে মুদ্রায় তথ্য পাওয়া যায়। সুতরাং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে মুদ্রা সমসাময়িক সভ্যতা সংস্কৃতির ইতিহাস উন্মোচন করে।

প্রাচীন মুদ্রা আবিষ্কার : বাংলার প্রাচীন আমলের যে সকল মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাষা ও কয়েকটি রৌপ্যের, মহাস্থানগড়, ওয়ারী-বটেশ্বর, বানগড় ও অন্যান্য স্থানে এ মুদ্রাগুলো পাওয়া গেছে। 

এ সকল মুদ্রার সংখ্যা প্রায় ১৭২টি। মুদ্রাগুলোর ছাচ, হরফ, লেখা, আঁকা ছবি থেকে অনেকটা অনুমান করা যায় মুদ্রাগুলো কোনো ধাতুতে নির্মিত।

- মুদ্রার গুরুত্ব : প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে সংক্ষেপে মুদ্রার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-

১. সময় নিরূপণ : প্রত্নতাত্ত্বিক মুদ্রাগুলোর পাঠোদ্ধার থেকে ঐতিহাসিক তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব। সাল, তারিখ সম্বলিত মুদ্রাগুলো সময় নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। 

সাধারণত অনুমান করা হয় যে, যেখানে কোনো রাজার মুদ্রা পাওয়া গেছে সে এলাকা তার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। শুঙ্গদের পর কৃষান রাজাদের মুদ্রা থেকে কুষান বংশের শাসন সম্পর্কে জানা যায়। 

তাছাড়া ঢাকা জেলার বেলার গ্রামে অনেক প্রাচীন মুদ্রা পাওয়া গেছে, যা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার চন্দ্র বংশীয় রাজাদের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায়। সেন রাজাদের রাজত্বকাল সম্পর্কিত অনেক মুদ্রা পাওয়া গেছে নেহাটি ও ভাগলপুরে।

২. সভ্যতার স্তর অনুধাবন : প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে মুদ্রা সে সময়কার সভ্যতার স্তর বা পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে সাহায্য করে। মুদ্রাগুলোর হাট, হরফ, লেখা, আঁকা ছবি থেকে অনেক কিছু অনুমান করা যায়। 

যে ধাতুতে মুদ্রা নির্মিত সেটার ধরন থেকে সভ্যতার স্তর সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। উন্নত ধরনের ধাতু দ্বারা কোনো মুদ্রা নির্মিত হলে সে সময়ের উন্নত সভ্যতার পরিচয় জানা যায়।

৩. সাংস্কৃতিক পার্থক্য : দুটি দেশের মুদ্রার তুলনা করলে অনেক সময় উভয়ের সংস্কৃতির অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। গুপ্ত যুগের মুদ্রার উপর রোমান মুদ্রার প্রভাবের কথা বলা যায়। 

অনুরূপ তুলনা অনেক সময় তারিখ নির্ধারণে সাহায্য করে। যেমন- প্রথম কনফিসের একশ্রেণির মুদ্রার সঙ্গে রোম সম্রাট ক্লডিয়াসেরও মুদ্রার সাদৃশ্য থেকে কুষান রাজবংশের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে অনুমান করা যায়।

৪. মুদ্রার তুলনা : কখনো কখনো একই রাজবংশের বিভিন্ন রাজার প্রবর্তিত মুদ্রার তুলনামূলক আলোচনা করে এর দ্বারা তাদের ক্রমপারম্পর্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়। 

দ্বিতীয় কদফিসের মুদ্রার তুলনায় কনিষ্কের মুদ্রা অধিকতর পরিণত। সুতরাং কনিষ্ক -এদের পরবর্তী এই ধারণা সত্য মনে হয়। 

গ্রিক আক্রমণের পর থেকে রাজার নাম খোদাই করা মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। ব্যাকন্দ্রীয় গ্রিকগণ সর্বপ্রথম এ ধরনের মুদ্রার প্রচলন করেন বিধায় শিল্পোৎকর্ষের দিক থেকে এ মুদ্রাগুলোই শ্রেষ্ঠ। 

শক এবং বান্নবগণ গ্রিক মুদ্রার অনুকরণ করেন। ভারত ইতিহাসে এ মুদ্রাগুলোর গুরুত্বও কম নয়। কেননা রাজতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্র শাসিত রাজ্য সম্পর্কিত তথ্য এগুলো থেকে পাওয়া যায়। 

মালব এবং মৌধেয়গণের জন্য প্রধান অবলম্বন এ মুদ্রা। সাতবাহন বংশ বিষয়ক পৌরাণিক বিবরণ দ্বারা পরিক্ষিত হয়।

৫. অর্থনৈতিক অবস্থা : প্রাচীন ইতিহাস উদ্ধারে মুদ্রার গুরুত্বের অন্যতম একটি কারণ হলো মুদ্রার মাধ্যমে সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। 

মুদ্রাগুলো তাম্র ও রৌপ্যের ধাতু দ্বারা নির্মিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট রাজার অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। মুদ্রার মান ভালো হলে বুঝা যায় যে, তৎকালীন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল। 

সেখানে মুদ্রা পাওয়া যায় মনে করা হয় যেখানে বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল আর যদি অন্য অঞ্চলের হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেখানের সাথে অন্য অঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। 

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর মুদ্রার গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পায়। হর্ষবর্ধনের কিংবা পাল প্রতিহার চালুক্য রাষ্ট্রকুট বংশের মুদ্রা নেহায়েতই অকিঞ্চিৎকর তা সত্ত্বেও কোনো কোনো অঞ্চলে নতুন শ্রেণির মুদ্রা তখনো প্রচলিত হয়েছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে মুদ্রা অসামান্য অবদান রাখে। কারণ একটি রাজ্যের প্রকৃত অবস্থা শনাক্ত হয় তার অর্থনৈতিক অবস্থা কেবল ছিল তার মাধ্যমে। অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত না হলে রাজ্যের বাকি সকল কিছুর উন্নতি স্তিমিত হয়। 

সুতরাং রাজ্যের প্রয়োজনে অতীতে রাজা বাদশাহরা যে সকল মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতো তা বর্তমানে ইতিহাস উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং হাজার বছরের ঐতিহ্যকে বর্তমান সময়ের মানুষের সম্মুখে পেশ করে ইতিহাস সম্পর্কে জানার কৌতূহল মিটিয়ে দিচ্ছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ