শাজার উদ দারের পরিচয় দাও । শাজার উদ দার কে ছিলেন

শাজার উদ দারের পরিচয় দাও । শাজার উদ দার কে ছিলেন
শাজার উদ দারের পরিচয় দাও । শাজার উদ দার কে ছিলেন

শাজার উদ দারের পরিচয় দাও । শাজার উদ দার কে ছিলেন

উত্তর : ভূমিকা : মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রত্যেক শতাব্দীতে এমন কিছু মহীয়সী নারীর আবির্ভাব ঘটে যারা নিজ মেধা, সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক জ্ঞান দ্বারা ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দিয়েছিলেন। 

এমনই এক যুগ শ্রেষ্ঠ মহীয়সী রমণী ছিলেন শাজার-উদ-দার। যিনি সামান্য ক্রীতদাসী মহিলা থেকে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন এবং আইয়ুবী বংশের ধ্বংসস্তূপের উপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মামলুক রাজবংশের ।

→ শাজার-উদ-দারের পরিচয় : নিম্নে শাজার-উদ-দারের পরিচয় তুলে ধরা হলো :

১. শাজার-উদ-দার-এর পরিচয় : শাজার-উদ-দার ছিলেন একজন তুর্কি ক্রীতদাসী। তিনি ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাকিম বিল্লাহ এর হেরেমের একজন দাসী ছিল। 

পরবর্তীতে তাকে উপহারস্বরূপ পাঠানো হয় মিশরের রাজ দরবারে। ১২৪৯ সালে আইয়ুবী সুলতান আস সালিহ তাকে মুক্তি দিয়ে স্ত্রী হিসেব গ্রহণ করেন। আর এ শাজার-উদ-দার-এর মাধ্যমেই ১২৫০ সালের ২ মে মিশরে মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. সালিহের সাথে বিবাহ : আইয়ুবী সুলতান আস সালিহ তার হেরেম থেকে ক্রীতদাসী শাজার-উদ-দারকে মুক্তি দিয়ে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এভাবে শাজার-উদ-দার তাঁর নতুন জীবন শুরু করেন।

৩. ক্ষমতা লাভ : ১২৪৯ সালে আইয়ুবী সুলতান মালিক আস সালিহ মৃত্যুবরণ করেন। আস সালিহ এর পুত্র ক্ষমতায় বসলে শাজার-উদ-দার তাকে হত্যা করে ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় বসেন।

৪. মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠা : সুলতানা শাজার-উদ-দার ছিলেন একজন ধূর্ত ও উচ্চাভিলাষী মহিলা। তাই তিনি সেনাপ্রধান বাইবার্সের সহায়তায় যুবরাজ তুরান শাহকে হত্যা করে ১২৫০ সালের ২ মে আইয়ুবী বংশের সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

তাঁর ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে মিশরে আইয়ুবী শাসনের পতন ঘটে এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করে নতুন মামলুক রাজবংশের।

৫. শাজার-উদ-দার-এর প্রভাব : যুবরাজ তুরান শাহকে হত্যার মধ্য দিয়ে শাজার-উদ-দার একচ্ছত্র ক্ষমতা লাভ করেন। ফলে তিনি সাম্রাজ্যের খুতবায় তাঁর নাম পাঠ ও মুদ্রায় নিজের নাম খোদাই করার নির্দেশ দেন। 

এভাবে রানী ক্লিওপেট্টা ও জেনোরিয়ার পর তিনি মিশরের ইতিহাসে তৃতীয় মহিলা হিসেবে ক্ষমতার মসনদে বসার গৌরব অর্জন করেছিলেন।

৬. ক্রুসেড যুদ্ধের অবদান : সপ্তম ক্রুসেডে শাজা-উদ-দার এর দৃঢ় মনোবল এবং সঠিক দিকনির্দেশনার কারণে মুসলমানরা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। 

আইয়ুবী সুলতান আইয়ুবী- এর অনুপস্থিতি এবং পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর শাজার-উদ-দার ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে এ ভূমিকা রাখে।

৭. শাজার-উদ-দার-এর পতন : এদিকে সাম্রাজ্যের আমির ওমরাহগণ ক্রমশ শাজারের শাসনের বিদ্রোহী হয়ে উঠলে তিনি কৌশলে সেনাপ্রধান ইজ্জাতদিন আইবেককে বিয়ে করে তাঁর অনুকূলে সিংহাসন ত্যাগ করেন। তাঁর মধ্য দিয়ে তিনি কৌশলে ক্ষমতার কেন্দ্রেই থেকে যান।

৮. শাজারের মৃত্যু : এদিকে ইজ্জাতদিন অন্য আরেকটি বিয়ে করলে শাজার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কৌশলে তিনি ইচ্ছাতদিন আইবেককে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন। ফলে ইজ্জাতদ্দিনের সমর্থকগণ ক্ষুব্ধ হয়ে শাজার-উদ-দারকে ১২৫৭ সালে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শাজার-উদ-দার সভ্যতার ইতিহাসের সেই বিরল রমণীদের অন্যতম। তিনি উচ্চাভিলাষী ও অসীম সাহসিকতার জন্য মিশরে আইয়ুবী বংশের ধ্বংসস্তূপের উপর মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ