শিলালিপি ও মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি বলতে কী বুঝ

শিলালিপি ও মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি বলতে কী বুঝ
শিলালিপি ও মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি বলতে কী বুঝ

শিলালিপি ও মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি বলতে কী বুঝ

  • অথবা, শিলালিপি ও ব্রাহ্মীলিপি কাকে বলে?
  • অথবা, তাম্রশাসন ও মহাস্থান ব্রাহ্মপিপি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাম্রশাসন বা শিলালিপি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। 

প্রাচীন বাংলার রাজাদের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে সম-সাময়িক বিভিন্ন উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এ বিভিন্ন উৎসের মধ্যে তাম্রশাসন বা শিলালিপি অন্যতম উৎস হিসেবে পরিচিত।

তাম্রশাসন বা শিলালিপি : ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে তাম্রলিপি বা তাম্রশাসনসমূহ খুব বেশি ভূমিকা পালন করে। লোহা, সোনা, রূপা, পিতল, তামা, ব্রোঞ্জ, মাটির জিনিস, ইট, পাথর প্রভৃতি তাম্রশাসনের উল্লেখযোগ্য বাহন হিসেবে পরিচিত। 

এগুলোর মধ্যে তামার ফলই বেশি ভূমিকা রাখে। সম্রাট দেবপাল সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় খালিমপুরের তাম্রফলক থেকে। খালিমপুরের তাম্রপাতে গোপালের পিতার নাম ব্যপট বলে উল্লেখ আছে। 

এছাড়া দেবপালের শুঙ্গের তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, রাজা গোপাল বাংলার অরাজকতার রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে বাংলায় পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

বানগড় ও কমৌলির তাম্রলিপি থেকে জানা যায়। যে, পাল রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল উত্তর বাংলায়। দেবপালের তাম্রশাসন থেকে জানা যে, ধর্মপালের পর দেবপাল বেশ কৃতিত্বের সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। 

গঙ্গেয় লিপি থেকে জানা যায় যে, রাজা শশাঙ্ক সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে স্বাধীন গৌড়ের অধিপতি হয়েছিলেন। 

তাছাড়া কুমিল্লার ময়নামতিতে প্রাপ্ত তিনটি তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় দেব রাজবংশের উদ্ভব হয়। 

এছাড়াও লক্ষ্মণ সেনের ৮টি তাম্রশাসন থেকে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে জানতে পারি। আর এসব লিপির পাঠোদ্ধারে কানিংহাম ও ফ্লিট প্রমুখ পণ্ডিতের অবদান রয়েছে।

মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপিমালা : ইতিহাসের উৎসগুলোর মধ্যে মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপিমালার গুরুত্ব খুব বেশি। মহাস্থানগড়ে আবিষ্কৃত লিপিমালার সাহায্যে জানা যায় যে, প্রাচীন বাংলায় মৌর্য শাসন বিদ্যমান ছিল। 

কারণ মৌর্য রাজারা ব্রাহ্মীলিপি ব্যবহার করতেন। তৎকালীন মৌর্যদের শাসনকর্তার নাম ছিল মহামাত্র। এ লিপি থেকে আরো জানা যায় যে, উত্তরবঙ্গে অবস্থিত মহাস্থানগড় ছিল মৌর্য শাসকদের রাজধানী।

 যার অপর আর একটি নাম হলো : 'পুণ্ড্রনগর'। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ফলে মহাস্থানগড়ে অনেক শিলালিপি পাওয়া গেছে যা মৌর্য শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। 

মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপির সাহায্যে পাওয়া যায় তৎকালীন মৌর্যদের অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকসহ আরো অনেক মূল্যবান তথ্য।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে উৎস বা উপাদানসমূহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আর তাম্রলিপি এবং ব্রাহ্মলিপিও অন্যতম একটি উৎস। বাংলার ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে তাম্রলিপি, ও ব্রাহ্মলিপি খুব বেশি ভূমিকা রাখে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ