বল্লালচরিত গ্রন্থের কাহিনির আলোকে কৌলিন্য প্রথার প্রসার আলোচনা কর

বল্লালচরিত গ্রন্থের কাহিনির আলোকে কৌলিন্য প্রথার প্রসার আলোচনা কর
বল্লালচরিত গ্রন্থের কাহিনির আলোকে কৌলিন্য প্রথার প্রসার আলোচনা কর

বল্লালচরিত গ্রন্থের কাহিনির আলোকে কৌলিন্য প্রথার প্রসার আলোচনা কর

  • অথবা, বল্লালচরিত গ্রন্থের আলোকে ‘কৌলিন্য প্রথার' প্রসার সম্বন্ধে যা জান লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : বিজয় সেনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বল্লাল সেন বাংলার সেন রাজবংশের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি আনুমানিক ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি বিভিন্ন ধরনের কর্মের জন্য অমর হয়ে আছেন। তাঁর সমাজসংস্কারমূলক একটি কাজ হচ্ছে তিনি হিন্দু সমাজের মধ্যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন। আর এজন্যই তিনি ইতিহাসে বিশেষভাবে পরিচিত। 

নিম্নে প্রশ্নালোকে আলোচনা করা হলো :

[] বল্লালচরিত গ্রন্থের কাহিনির আলোকে 'কৌলিন্য প্রথার' প্রসার : ‘বল্লালচরিত' গ্রন্থটি রচনা করেন আনন্দ ভট্ট। এ গ্রন্থটি হতে বল্লাল সেনের রাজ্যত্বকালের সম্পর্কে জানা যায়। 

বল্লাল সেনের রাজত্বকালে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাবলি আনন্দ ভট্ট তার এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার। 

এ কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বল্লালচরিতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বল্লাল সেনও দম্ভপুরের বিরুদ্ধে অভিযান করে বার বার ব্যর্থ হন। 

এতে তিনি বল্লভানন্দের নিকট থেকে এক কোটি নিঙ্ক মুদ্রা ধার করেন। বার বার পরাজিত হয়ে তিনি সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েন। 

তিনি আবার বল্লভানন্দের নিকট মুদ্রা ধার চেয়ে দূত পাঠান কিন্তু বন্ধুভানন্দ তাকে একটি শর্ত দেন যে, এর বিনিময়ে তিনি তাকে হরিকেলের রাজস্ব আদায় করতে দিবেন। 

কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনি বণিকদের টাকা আত্মসাৎ করেন। ফলে বণিকগণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। বল্লাল সেন বণিকদের উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য তাদেরকে রাজপ্রাসাদে নিমন্ত্রণ করে। 

এ নিমন্ত্রণে শুদ্রদের সাথে বৈশ্যদের খাবারের ব্যবস্থা করলে বণিকগণ আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ দিকে বল্লভান পাল দলে যোগ দেয় এ খবর বল্লাল সেন অবগত হলে ক্রোধান্বিত হয়ে ঘোষণা করেন আজ থেকে বণিকরা শূদ্র বলে গণ্য হবে। 

আর যেসব ব্রাহ্মণ তাদের বাড়িতে পূজা পালন করবে বা তাদেরকে শিল্প স্নান করবে তারা রাজার কোপানালে পতিত হবে। 

এছাড়া তিনি কৈবর্তদের উচ্চতর মর্যাদা এবং মালাকার কুম্ভকার ও কর্মকারদেরকে এ শূদ্রের মর্যাদা দেন। ব্যবসা- বাণিজ্য থেকেও ব্রাহ্মণদের ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দেন। 

এসব কর্মকাণ্ড থেকে এটা খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথা প্রসারের জন্য কতটা কঠোর ছিলেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বল্লাল সেন এক অনবদ্য ব্যক্তিত্ব। বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করে ইতিহাসে যে আলোড়ন সৃষ্টি করে রেখেছেন তা তাকে এক বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে। 

তার রাজত্বকালের ইতিহাস জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপাদান হলো 'বল্লালচরিত'। এতে তাঁর শাসনকালে বিভিন্ন দিকের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাংলার হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন সম্পর্কে বিশদভাবে জানা যায় ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ