চন্দ্র ও সেন রাজবংশ সম্পর্কে আলোচনা কর

চন্দ্র ও সেন রাজবংশ সম্পর্কে আলোচনা কর
চন্দ্র ও সেন রাজবংশ সম্পর্কে আলোচনা কর

চন্দ্র ও সেন রাজবংশ সম্পর্কে আলোচনা কর

  • অথবা, চন্দ্র ও সেন বংশসমূহের বর্ণনা দাও

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বিভিন্ন রাজবংশের উল্লেখ আছে। আর যেসব রাজবংশ প্রাচীন বাংলায় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন তাদের মধ্যে চন্দ্র ও সেন রাজবংশ অন্যতম। 

ধারণা করা হয়, পালবংশের শাসনামলেই বাংলার কোনো এক অঞ্চলে বা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় চন্দ্র রাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। 

কিন্তু সঠিক তাম্রশাসন ও অন্যান্য উৎসের অভাবে চন্দ্র বংশের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। আর পালবংশের শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেনরা বাংলায় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। 

নিম্নে চন্দ্র ও সেন বংশ সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো :

চন্দ্ররাজবংশ : চন্দ্র রাজবংশ সম্পর্কে জানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো চন্দ্র রাজবংশের শাসনামলের প্রাপ্ত তাম্রশাসন। বর্তমানে চন্দ্রবংশের ইতিহাস পুনর্গঠনে তৎকালীন সময়ের তাম্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। 

কুমিল্লার ময়নামতিতে প্রাপ্ত তিনটি এবং পূর্বে কয়েকখানি লিপি থেকে চন্দ্রবংশের ইতিহাস সম্মন্ধে বিস্তারিত জানা যায়। 

এছাড়াও ঢাকার প্রাপ্ত একটি ও সিলেটের পশ্চিমভাগে প্রাপ্ত একটি তাম্রশাসम চন্দ্রবংশের ইতিহাস পুনর্গঠনে বেশ অবদান রাখে। 

চন্দ্রবংশের রাজাদের প্রাপ্ত লিপিসমূহ ও সমসাময়িক অন্যান্য তথ্য জানা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় চন্দ্র বংশীয় সাতজন রাজার নাম পাওয়া যায়, যাদের প্রথম পাঁচজন স্বাধীনভাবে প্রায় ১০০ বছরকাল প্রাচীন বাংলা শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

→ সেন রাজবংশ : প্রাচীন বাংলার অন্যান্য রাজবংশের মধ্যে সেন রাজবংশ ছিল অন্যতম। একাদশ শতাব্দীর প্রথম ..দিকে প্রাচীন বাংলার একটি নতুন বংশ হিসেবে সেন রাজবংশের উদ্ভব হয়। 

সেন রাজাগণের পূর্ব পুরুষ দাক্ষিণাত্যের অন্তর্গত কর্ণাটক দেশের অধিবাসী ছিলেন বলে মনে করা হয় এবং বাংলায় সামন্ত চক্রের বিদ্রোহের সময় পাল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে সেন রাজবংশের পত্তন ঘটে। 

এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিজয় সেন। তিনি ধীরে ধীরে বাংলায় একটি শক্তিশালী রাজবংশের পত্তন করেন। সেন রাজবংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার উৎসগুলোর মধ্যে শিলালিপি ও তাম্রশাসন বিশেষ অবদান রাখে। 

লক্ষণ সেনের ৮টি তাম্রশাসন থেকে বাংলায় সেন বংশের রাজত্বকাল সম্পর্কে বেশ কিছু জানা যায়। এছাড়াও বিজয়সেনের ব্যারাকপুরের তাম্রশাসন ও লিপিমালা এবং নৈহাটি, ভাগলপুরের তাম্রশাসন থেকে সেন বংশ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। 

তবে নৈহাটি লিপি অনুসারে যেন রাজারা ছিল চন্দ্র বংশীয়। গয়া জেলায় প্রাপ্ত লিপিমালা থেকে জানা যায় যে, লক্ষ্মণ সেন গৌড়, কামরূপ, কলিঙ্গ, ও কাশী জয় করেন। 

তাছাড়া বিক্রমপুরে প্রাপ্ত তাম্রপই ও দেওপাড়া লিপি থেকে বিজয়সেনের রাঢ় দেখা, শাসন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। 

সেন রাজবংশের, শিলালিপি থেকে ও সেন রাজবংশ সম্বন্ধে মোটামুটি জানা যায়, সেন বংশের শিলালিপিতে সেন বংশকে ব্রাহ্ম ক্ষত্রিয় বংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চন্দ্র ও সেন রাজবংশের সমসাময়িক বিভিন্ন উৎস থেকে উক্ত দুটি রাজবংশের ইতিহাস সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করা যায়। 

চন্দ্র ও সেন রাজবংশের ইতিহাস পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন সময়ের শিলালিপি ও তাম্রশাসন। 

এ দুটি উৎসের সাহায্যে চন্দ্র ও সেন রাজবংশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু জানা যায়। এগুলো ছাড়াও মুদ্রা, মূর্তি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভাস্কর্য প্রভৃতি থেকেও উক্ত দুটি রাজবংশ সম্বন্ধে জানা যায় । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ