গিয়ারিং কি - মূলধন গিয়ারিং অনুপাত সংক্ষেপে জেনে নিন

প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই কোম্পানির ঋণ এবং মূলধন সম্পর্কে সঠিক অনুপাত পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন।

গিয়ারিং কি - মূলধন গিয়ারিং অনুপাত সংক্ষেপে জেনে নিন
গিয়ারিং কি - মূলধন গিয়ারিং অনুপাত সংক্ষেপে জেনে নিন

সেই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে গিয়ারিং এবং মূলধন গিয়ারিং অনুপাত।গিয়ারিং কি এবং মূলধন গিয়ারিং অনুপাত সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। 

গিয়ারিং কি

গিয়ারিং হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের লিভারেজ পরিমাপ করার একটি প্রক্রিয়া। গিয়ারিং একটা কোম্পানির  ঋণ ও ইকুইটির মধ্যে সম্পর্কের অনুপাত নির্ণয় করে। একটি কোম্পানি যখন গিয়ারিং করা হয় তখন সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এবং প্রতিষ্ঠানটি কতটা আর্থিকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেটি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । 

যে কোম্পানিতে গিয়ারিং এর অনুপাত উচ্চপর্যায়ে রয়েছে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তখন গিয়ারিং এর মাত্রা অনুযায়ী উচ্চ মাএার রিটার্ন দিতে হয়। 

গিয়ারিং এর অনুপাত নির্ণয় করার জন্য নির্দিষ্ট একটি সূত্র ব্যবহার করা হয় গিয়ারিং অনুপাত = ঋণ/ ঋণের সঙ্গে শেয়ার মূলধন যোগ করে যে ফলাফলটি বের হয় সেটি গিয়ারিং অনুপাত। 

গিয়ারিং প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন- একক গেয়ারিং আটসাট গিয়ারিং, ভারী গিয়ারিং।বিভিন্ন ধরনের গিয়ারিং বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গেয়ারিং পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে কোম্পানির ঋণ এবং শেয়ার মূলধনের অনুপাত বিভিন্ন হিসাবে গণনা করা হয়। 

গিয়ারিংয়ে এমন কিছু সুবিধা আছে যা শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও গিয়ারিং এর ফলে কোম্পানি তার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং নতুন সম্পদ অর্জনের সহায়তা করে।

গিয়ারিং নিয়ে সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে।যেমন- গিয়ারিং করার পর যদি কোম্পানি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে শেয়ার হোল্ডাররা কোন ধরনের রিটার্ন পাবে না।এছাড়া এর ফলে কোম্পানিও ঝুকির সম্মুখীন হতে পারে।

মূলধন গিয়ারিং অনুপাত

মূলধন গেয়ারিং অনুপাত নির্ণয় করার সূত্রটি হচ্ছে- স্থির খরচ যুক্ত তহবিলের সঙ্গে সাধারণ শেয়ার মালিকানা স্বত্ব ভাগ করে যে ফলাফলটি পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে মূলধন গিয়ারিং অনুপাত। 

স্থির খরচ যুক্ত তহবিলের উদাহরণ হলো- ঋণপত্র, ঋণ, এবং  বন্ড। সাধারণ শেয়ার মালিকানা স্বত্ব নির্ণয়ের জন্য যা করতে হবে সেটি হচ্ছে সাধারন শেয়ার মূলধনের সঙ্গে সাধারণ সঞ্চিতি এবং সংরক্ষিত আয়ের জের যোগ করে ফলাফলটি বের করতে হবে। 

চলুন তাহলে মূলধন গিয়ারিং অনুপাতের একটি উদাহরণ জেনে নেয়া যাক-

ধরে নেয়া যাক এখানে স্থির খরচ যুক্ত তহবিল-

৩,৫০,০০০ হাজার টাকা। সাধারণ শেয়ার মালিকানা স্বত্ব- ৫,৫০,০০০ টাকা। 

স্থির খরচ যুক্ত তহবিল

————————————

সাধারণ শেয়ার মালিকানা স্বত্ব

   ৩,৫০,০০০ টাকা

= ————————

 ৫,৫০,০০০ টাকা

অনুপাত = ১ঃ৫। 

মূলধন গিয়ারিং অনুপাতের ফর্মুলা:

১/ ঋণ থেকে ইক্যুইটি অনুপাত = মোট ঋণ / মোট ইক্যুইটি

২/ টাইমস সুদ অর্জিত =আয় আগ্রহের আগে ও করের / মোট সুদ

৩/ ইকুইটি অনুপাত = ইক্যুইটি / সম্পদ

৪/ ঋণ অনুপাত = মোট ঋণ / মোট সম্পদ . 

Gearing Ratio Formula:

1)  Gearing Ratio = Total Debt/Total Equity 

2)  Gearing Ratio = EBIT/ Total Interest

3)  Gearing Ratio = Total Debt/ Total Assets

মূলধন গিয়ারিং অনুপাতের উচ্চ অনুপাত হচ্ছে ৫০ পার্সেন্ট, এবং নিম্ন অনুপাত হচ্ছে ২৫ পার্সেন্ট।

মূলধন গিয়ারিং অনুপাত আর্থিক ঝুঁকির নির্দেশ দিতে সহায়তা করে। যখন কোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মনে হয় তখন মূলধন গিয়ারিং অনুপাত সেটি সহজেই তার সূএ অনুযায়ী নির্ণয় করে দিতে পারে। 

মূলধন গিয়ারিং অনুপাতের বেশিরভাগ অংশগুলো ব্যালেন্স শিট থেকে সংগ্রহ করা হয়। একটি কোম্পানির মুনাফা ও ক্ষতির ওপর নির্ভর করে (EBET) পাওয়া যায়। 

মূলধন গিয়ারিং অনুপাত গণনা করতে হলে সমীকরণে শুধুমাত্র একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। 

যদি মূলধন গিয়ারিং অনুপাত বেশি থাকে তাহলে বিবেচনা করা হয় যে সেই কোম্পানি উচ্চ মাত্রায় আথিকভাবে লাভবান হতে পারে এবং যদি ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা থাকে তাহলে ব্যবসা সংবেদনশীল হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

এর বিশেষ একটি কারণ রয়েছে সেটি হচ্ছে- কোম্পানিতে উচ্চ হারে লিভারেজ থাকায় শেয়ার হোল্ডারদের ইকুইটির চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি থাকে। 

যে সকল প্রতিষ্ঠানে বা কোম্পানিগুলোতে মূলধন গিয়ারিং অনুপাতের পরিমাণ বেশি সেখানে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য বেশি পরিমাণে ঋণের ব্যবস্থা আছে। অন্যদিকে যেখানে মূলধন গিয়ারিং অনুপাত এর সংখ্যা কম সেখানে ইকুইটির সংখ্যা বেশি থাকে। 

বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিগুলো এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করে যে তারা কি পরিমানে ঋণ ইস্যু করবে অথবা এই বিষয়ে কিভাবে আগানো যায়। 

আশা করি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি গিয়ারিং এবং মূলধন গিয়ারিং অনুপাত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারবেন এবং আপনার যদি নিজস্ব কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই মূলধন গিয়ারিং অনুপাতের সূত্র অনুযায়ী আপনার প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারবেন যার ফলে আপনি আপনার অবস্থা অনুযায়ী ঋণ নিতে পারবেন এবং ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ