হুমায়ুন কিভাবে বাংলা জয় করেন বর্ণনা কর

হুমায়ুন কিভাবে বাংলা জয় করেন বর্ণনা কর
হুমায়ুন কিভাবে বাংলা জয় করেন বর্ণনা কর

হুমায়ুন কিভাবে বাংলা জয় করেন বর্ণনা কর

উত্তর : ভূমিকা : মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন। উত্তর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠার অনেক দিন পর বাংলায় তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

হুমায়ুন বাংলার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ এবং আফগান নেতা শেরশাহের ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে তিনি বাংলা অভিযানের পরিকল্পনা করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ১৫৩৮ সালে বাংলা অভিযান পরিচালনা করেন।

হুমায়ুনের বাংলা অভিযান : নিয়ে হুমায়ুনের বাংলা অভিযান আলোচনা করা হলো :

১. হুমায়ুনের চুনার দুর্গ জয় : শেরশাহ যখন গৌড় অবরোধ করেছিলেন তখন হুমায়ুন চুনার দুর্গ অবরোধ করতে ব্যস্ত। রিয়াজ উস-সালাতিন এ বলা হয়েছে যে হুমায়ূন আগ্রায় থাকাকালে বাংলার সুলতান মাহমুদ, শাহ শেরশাহের বিরুদ্ধে সাহায্যের আবেদন করেন। 

কিন্তু হুমায়ুন গৌড়ে না গিয়ে চুনার দুর্গে পৌঁছান। এরপর তিনি চুনার দুর্গ অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। অতঃপর ১৫৩৭ সালে হুমায়ুন শেরশাহের শক্তি কেন্দ্র চুনার দুর্গটি অধিকার করেন। হুমায়ুনের চুনার দুর্গটি দখল করতে প্রায় ৬ মাস লেগেছিল।

২. সম্রাট হুমায়ুনের গৌড় অধিকার : হুমায়ুন চুনার দুর্গ জায় করার পর গৌড় দখলের পরিকল্পনা করেন। হুমায়ুন বিহার অভিযানের প্রাক্কালে শেরশাহ এক হিন্দু রাজার নিকট থেকে কৌশলে রোটাস দুর্গ দখল করেন। 

সম্রাট হুমায়ুন তখন বাংলায় প্রবেশের আয়োজন করেন তখন শেরশাহ গৌড়ের সমস্ত ধনসম্পদ রোটাস দুর্গে স্থানান্তরিত করেন। 

এরপর শেরখানের পুত্র জালাল খান তেলিয়াগিরি গিরিপথ একমাস আটকে রেখে অবশেষে পদ ছেড়ে দেন। অতঃপর হুমায়ুন বিনা বাধায় বাংলায় প্রবেশ করেন এবং ১৫৩৮ সালে বাংলার রাজধানী গৌড় দখল করেন। 

গৌড়ের সুরম্য প্রাসাদাবলি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে হুমায়ুন খুবই মুগ্ধ হন এবং তিনি এর নাম রাখেন জান্নাতবাদ। তিনি প্রায় ৬ মাস গৌড়ে অবস্থান করেন এবং আমোদ ফুর্তিতে কাটান।

৩, মুঘল সাম্রাজ্যে গোলযোগ : সম্রাট হুমায়ুন বাংলায় অবস্থানকালে তার সাম্রাজ্যে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এ সময় শেরশাহ বিহার দখল করেন এবং হুমায়ুনের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা হিন্দল দিল্লির সিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। 

এ খবর পেয়ে হুমায়ুন দিল্লির পথে রওনা হন। তিনি জাহাঙ্গীর কুলীকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন ও বিজিত প্রদেশ রক্ষার জন্য ৫০০ মুঘল সৈন্য পৌড়ে রাখার ব্যবস্থা করেন।

৪. চৌসার যুদ্ধ : জাহাঙ্গীর কুলী বেগের হাতে বাংলার শাসন ক্ষমতা অর্পণ করে হুমায়ুন দিল্লির দিকে যাত্রা করেন। 

তিনি বকসারের নিকটে গঙ্গা নদীর তীরে পৌঁছালে চৌসা নামক স্থানে শেরশাহ অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেন। ১৫৩৯ সালে চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হয়ে কোনো রকম প্রাণ রক্ষা করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট হুমায়ুনের বাংলা বিজয় মুঘল ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। 

১৫৩৮ সালে তিনি প্রায় বিনা বাধায় বাংলার রাজধানী গৌড় অধিকার করেন। সাময়িক সময়ের জন্য বাংলা বিজয় হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ