বাংলায় মারাঠা আক্রমণের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর

বাংলায় মারাঠা আক্রমণের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর
বাংলায় মারাঠা আক্রমণের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর

বাংলায় মারাঠা আক্রমণের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলায় মারাঠা আক্রমণের প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : অষ্টাদশ শতাব্দীর ভারতের ইতিহাসে বৈদেশিক ভাগ্যান্বেষীগণ এক গুরুত্বপূর্ণ পদে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে অনেকেই অতি সামান্য অবস্থা থেকে নায়েব, সুবাদার, সুবাদার ও নবাব প্রভৃতি গৌরবময় পদে স্বীয় শক্তি ও সামর্থ্যের বলে উন্নীত হন। 

এদের মধ্যে একজন হলেন মীর্জা মুহাম্মদ আলী ওরফে আলীবর্দী খান। তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিমান, শক্তিশালী শাসক। মারাঠাদের সাথে সংঘর্ষ তার রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ।

→ আলীবর্দী খান ও মারাঠা আক্রমণ : ক্ষমতা দখল করে আলীবর্দী খান বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারলেন না। কারণ ১৭৪২ সাল থেকে মারাঠাগণ প্রায় প্রতিবছরই বঙ্গ ও উড়িষ্যা প্রদেশে অভিযান চালিয়ে আসছে। ১৭৫১ সালে আলীবর্দী খানের সাথে সন্ধি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ আক্রমণ অব্যাহত থাকে।

→ মারাঠাদের আক্রমণের প্রেক্ষাপট মারাঠাদের বাংলায় আক্রমণ ও লুটতরাজের জন্য কিছু উপাদান তৎকালীন ভারতবর্ষে বিদ্যমান ছিল। যেমন-

১. মারাঠাদের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি : মারাঠাদের বারবার বাংলা আক্রমণকে উত্তর ভারতে তাদের সাম্রাজ্যবাদের অংশ হিসেবে গণ্য করা যায়। 

এ সম্পর্কে K. K. Datta তার Alivardi Khan and His times গ্রন্থে বলেন, “বঙ্গ মারাঠা আক্রমণের উৎপত্তি সে যুগে মারাঠা সাম্রাজ্যবাদের বিজয়ের মধ্যে খুঁজতে হবে। 

মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান যুগে মারাঠাদের জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিহত হয়েছিল বলে তারা এখন ধ্বংসের মুখে মুঘল সাম্রাজ্যের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চায়। ভারতের উপর প্রাধান্য বিস্তারের জন্য প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালায় ।

২. সরফরাজ খানের আত্মীয়স্বজনদের উস্কানি : আলীবর্দী খান সরফরাজ খানকে হত্যা করে বাংলার নবাবি দখল করায় সরফরাজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব যারা দাক্ষিণাত্যে নির্বাসিত হয়েছিল তারা মারাঠা নেতা রঘুজী ভোসলাকে আলীবর্দী খানের বিরুদ্ধে বঙ্গদেশে আক্রমণ চালানোর জন্য অনুরোধ জানান।

৩. নিযাম-উল-মূলকের কূটনীতি : KK Datta উল্লেখ কান, নিযাম-উল-মূলক আফসজাহ মারাঠা আক্রমণের সম্ভাবনা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য রঘুজীকে বঙ্গে গিয়ে যৌথ আক্রমণের জন্য প্ররোচিত করেন। 

উপরিউক্ত ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে নাগপুরের স্বাধীন মারাঠী প্রধান রঘুজী ভোঁসলা বাংলায় মারাঠা আক্রমণের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আলীবর্দী খানের রাজত্বকালের সিংহভাগই মারাঠা বর্গীদের আক্রমণ, সম্প্রসারণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্বিচারে হত্যা প্রভৃতি মোকাবিলায় ব্যয়িত হয়। 

মারাঠা আক্রমণের ফলে পশ্চিম বাংলার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক দারুণ দুর্যোগ নেমে এসেছিল। মারাঠা হানাদার ও আফগান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘকাল অবিরাম সংগ্রামের ফলে নবাব আলীবর্দীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। 

অবশেষে ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ৮০ বছর বয়সে নবাব আলীবর্দী খান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ