রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনা করো । রাজনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর

রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনা করো । রাজনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর
রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনা করো । রাজনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর

রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনা করো । রাজনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর

উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনীতির ধারণা বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিজের পরিবেশ পরিমণ্ডল ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে রাজনীতির ধারণাটির ব্যাখ্যা করেছেন।

রবার্ট ডাল বলেছেন, "Politics is one of the unavoidable facts of human existence. Everyone is involved in some fashion at some time in some kind of political system.

রাজনীতির প্রকৃতি (Nature of politics) : সাম্প্রতিক কালের সমাজব্যবস্থায় রাজনীতির এক সর্বব্যাপী প্রকৃতি লক্ষ্য করা যায়। অধ্যাপক ফাইনার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "In modern society politics is ubiqutous. ধারাবাহিকভাবে রাজনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচিত হল ।

১. রাজনৈতিক কার্যকলাপ : ফাইনারের অভিমত অনুসারে রাজনীতির মধ্যে কার্যাবলির ধারণা বর্তমান রাজনীতি হল আসলে এক ধরনের আচরণ বা কার্যাবলি। 

অর্থাৎ রাজনীতি বলতে রাজনৈতিক কার্যকলাপকে বুঝায়। এ ধরনের কার্যকলাপ বেসরকারি সংস্থার কার্যাবলির মধ্যেও দেখা যায়। আবার পরিবারে রাজনৈতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি হয়। 

Prof. Allan R. Ball তাঁর 'Modern Politics and Government' শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, "Politics is an activity, not a moral prescription, it is a universal activity."

২. সংকীর্ণ ধারণা : সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণা অনুসারে রাজনৈতিক কার্যকলাপ বলতে পলীয় রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত কার্যকলাপকে বুঝায়। 

সংকীর্ণ ধারণার সাথে তৎকালীন গ্রিক দার্শনিকদের চিন্তাচেতনাসমূহ বেশি প্রতিফলিত হয়। রাষ্ট্র সম্পর্কিত কার্যকলাপ এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত বিষয়।

৩. আধুনিক ধারণা : বর্তমানে মনে করা হয় যে, কেবলমাত্র সরকারি সংস্থা, পার্লামেন্ট, নির্বাচন, মন্ত্রিসভা প্রভৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত কার্যাবলিই হল রাজনৈতিক কাজকর্ম এবং মনে করা হয় যে, অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের যাবতীয় আচরণ বা কাজকর্ম রাজনৈতিক কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত নয়। 

তা হল রাজনীতির সংকীর্ণ ধারণা থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপের আধুনিক ধারণা অনেক বেশি ব্যাপক।

৪. ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিষয় : ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সাথে রাজনীতির সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক কালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট ডাল (Robert Dahl) এর অভিমত অনুসারে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব বা শাসন হল রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মূল কথা। 

Harold Lasswell এর মতানুসারে, “ক্ষমতার সংগঠন' ও অংশীদার সম্পর্কিত আলোচনাই রাজনীতি।” The study of the shaping and sharing of power.)

৫. রাষ্ট্র ও রাজনীতি : রাষ্ট্র ও রাজনীতি একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। অনেকের মতানুসারে আলোচা দু'টি শব্দ যমজ সম্পর্কে আবদ্ধ। 

সেজন্য রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা রাজনীতির সাথে সাথে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

৬. ক্ষমতার প্রয়োগ : আধুনিক রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হল ক্ষমতার অবাধ প্রয়োগ। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। 

সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পর্ক বহুবিধ। বাধ্য করা, বাধ্য হওয়া, বিবাদ বিসংবাদ ও মীমাংসা সর্বক্ষেত্রে একটা ক্ষমতার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় ।

৭. মতভেদ ও মীমাংসা : রাজনৈতিক কার্যাবলি বলতে মতভেদ এবং এ মতভেদের মীমাংসার সাথে সম্পর্কযুক্ত কার্যকলাপকে বুঝায়। এ রকম কার্যকলাপ যে কোন পর্যায়েই পরিলক্ষিত হয়। 

অধ্যাপক বল বলেন, "It (Political activity) involves disagreements and the reconcilation of those disagreements and therefore can occur at any level".

৮. বিরোধ ও সংঘর্ষ : অস্টিন রেনি বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতির ধারণা, বিচার বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতানুসারে পরস্পর বিরোধী স্বার্থ সাধনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে যে কোন রকমের বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে। সকল সমাজেই বিরোধ ও সংঘর্ষ রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত।

৯. রাজনৈতিক কোন্দল বা দ্বন্দ্ব : সমাজবৃদ্ধ মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দুর্ভাগ্যজনক হলেও অনেক সময় সেটা অসম্ভাবী হয়ে উঠে। 

অস্টিন রেনি বলেছেন, "Political conflict is not an unfortunate temporary aberration from the room of perfect cooperation and harmony."

১০. সর্বদলীয় সরকারের অংশগ্রহণ : অধ্যাপক বলের অভিমত অনুসারে বলা যায়, রাজনৈতিক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদলীয় সরকারের ধারণা বিভ্রান্তির পরিচায়ক। কোয়ালিশন বা সর্বদলীয় সরকার হল রোগ উপসর্গের চিকিৎসার ন্যায় ।

১১. একদলীয় ব্যবস্থার মতভেদ : বহুদলীয় ব্যবস্থার ন্যায় একদলীয় ব্যবস্থায়ও মতভেদ ও বিরোধ বর্তমান থাকে। অধ্যাপক বল বলেন, "Single party status do not signify and end to disagreement between political leaders".

১২. ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে মতভেদ : ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য বা বৈষম্য মতভেদ ও বিরোধের কারণ সৃষ্টি করে। শ্বেতকায় ব্যক্তিবর্গের কৃষ্ণকায় মনুষ্য গোষ্ঠীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। 

তাছাড়া সম্পদের অপ্রতুলতা, অর্থনৈতিক ক্রিয়া, অভাব মোচন প্রভৃতি রাজনৈতিক কার্যকলাপের সাথে সংযুক্ত।

উপসংহার : উপরিউক্ত প্রকৃতিসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার প্রয়োগ হল রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। 

বর্তমান অর্থনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে সমাজব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের বৈচিত্র্য অনুযায়ী রাজনৈতিক কার্যকলাপের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। 

অধ্যাপক মিলার বলেছেন, "Conflict lies at the heart of politics. In a world of universal agreement, there would be no room for it." 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ