রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর

উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সমাজে বসবাসরত নাগরিকের সামাজিক রাজনৈতিক কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে অন্যদিকে মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করে থাকে। 

যেহেতু উভয় বিষয় সমাগ্রস্থ মানুষের কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে থাকে সেহেতু উভয়ের মধ্যে যেমন- পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে তেমনি বেশ কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো :

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে উপরিউক্ত সম্পর্ক ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে সেগুলো উল্লিখিত হল :

১. ডুরখেইমের অভিমত : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিদ্যার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিপরীত দিক প্রসঙ্গে ডুরখেইম এর মত প্রাণিধানযোগ্য। 

এ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত অনুসারে সমাজতত্ত্বের আলোচনায় মনস্তাত্ত্বিক বিচার বিশ্লেষণ অভিপ্রেত নয়। 

তাঁর মতানুসারে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের অনুশীলনের বিষয় হল সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনা যা মনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।

২. বটোমোরের ব্যাখ্যা : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব ও মনোবিদ্যার মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে অধ্যাপক বটোমোর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতানুসারে এ দু'টি বিষয়ের মধ্যে পরিপূরক হলেও পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত নয়। 

তিনি বলেছেন, "In almost every field of enquiry it could be shown that psychology and political sociology constitute for the most part two separate universe of discourse."

৩. যুদ্ধ ও সংঘর্ষের ক্ষেত্রে : যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সম্পর্কিত অনুশীলন ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব সম্পর্কিত ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। 

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের আলোচনা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বের আলোচনা অপ্রয়োজনীয় প্রতিপন্ন হয়।

৪. সংকীর্ণতা : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ববিদগণ সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে মানবসমাজের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। পক্ষান্তরে, মনোবিজ্ঞানিগণ কেবলমাত্র তার মানসিক গঠন বিন্যাস বিচার বিশ্লেষণ করে।

৫. একক ও বহুমুখিতা : মূলত ব্যক্তির উপর দৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রেই মনোবিজ্ঞানিগণ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি সমগ্র সমাজের উপরই পরিব্যাপ্ত থাকে। এ সমাজের সৃষ্টি হয় বহু ব্যক্তির সমন্বয়ে।

৬. মন ও সমাজ : মানুষের আচার আচরণ ও চিন্তাচেতনা, বিচার বিশ্লেষণের ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানীদের আগ্রহ ও উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। 

অপরদিকে, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের উপজীব্য বিষয় হল বহু ও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। 

অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজ মন্তব্য করেছেন, "...... difference between psychology and sociology is a difference of focus of interest in social reality itself."

উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : মনোবিজ্ঞানীরা মনোবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্রে জোর দেন বিষয়ীগত (Subjective) হেতুসমূহের উপর। 

কিন্তু রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের আলোচনায় সমাজবিজ্ঞানীগণ বিষয়গত (Objective) হেতুর উপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

যেটা অধ্যাপক বটোমোর অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে এ বিষয়টি বিতর্কিত ও অস্পষ্ট। রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের মুখ্য বিষয় হল সমাজ ও রাজনীতি। 

অপরদিকে, মনোবিদ্যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ব্যক্তির মানসিক ক্রিয়াকলাপ। তবে সামাজিক মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে মনোবিদ্যা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিপন্ন হয়।

অধ্যাপক বটোমোর বলেছেন, "Political sociology and psychology do offer alternative accounts of behaviour." 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ