নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর

নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর
নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর

নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর 

  • অথবা, নৃবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর। 
  • অথবা, বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : নৃবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের একটি নবীন শাখা এবং মানুষ সম্পর্কিত পঠনপাঠন ও গবেষণা এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় । মূলত নৃবিজ্ঞানে মানুষের সার্বিক জীবনযাপনের প্রতিফলন ঘটে। 

এটি একদিকে যেমন মানুষের উৎপত্তি, প্রাণিরাজ্যে তার অবস্থান, জৈবিক গঠনপ্রণালি ও বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে।

নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা : নিম্নে নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো : 

১. সমাজ কাঠামো জানতে : সামাজিক নৃবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো সমাজ কাঠামো। সমাজের অতীত কাঠামোর স্বরূপ ও ধারার প্রকৃতি ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকে। 

আদিম সমাজ থেকে আধুনিক সমাজের বাস্তব কাঠামো বিশ্লেষণে নৃবিজ্ঞানীগণ অধিক যত্নশীল। নৃবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সমাজের সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, পারস্পরিক সম্পর্ক প্রভৃতি সমাজ কাঠামোর বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় ।

২. দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানতে : নৃবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমরা দেশের অর্থনীতির সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। নৃবিজ্ঞান উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, সঞয় প্রভৃতি সম্পর্কে গবেষণা করে। 

এছাড়া মানুষ কীভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে, কীভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, চাষাবাদ করে প্রভৃতি সম্পর্কে নৃবিজ্ঞান আলোচনা করে ।

৩. রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণে : নৃবিজ্ঞান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও তার কার্যকলাপ নিয়েও আলোচনা করে । নৃবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায়, কীভাবে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা যায়, রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য, আদিম রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস, দলপতির ভূমিকা ও রাজনৈতিক সংকট দূরীকরণ প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায় ।

৪. সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে : সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে নৃবিজ্ঞান পাঠের ভূমিকা অপরিসীম । বিশেষ কোনো সমাজের সংস্কৃতি কীভাবে ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে আলোচনা করে নৃবিজ্ঞান। 

সংস্কৃতি বংশানুক্রমে কীভাবে বয়ে চলে এবং শৈশব ও বার্ধক্য বিস্তৃতকাল ধরে সব মানুষই সংস্কৃতির বিস্তারে, স্থায়িত্বে, পুনর্বিচারে কীভাবে অবদান রাখে, তা নৃবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়। তাই বলা যায়, মানব সংস্কৃতির ধারণার্জনে নৃবিজ্ঞানের গুরুত্ব অত্যধিক । 

৫. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনের মান উন্নয়নে : আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা দারিদ্র্য তথা উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে নৃবিজ্ঞানীর গবেষণার ফলাফলকে কাজে লাগান। 

কেননা একজন নৃবিজ্ঞানী প্রত্যক্ষ, অংশগ্রহণ ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো সমাজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান সম্পর্কে ঐ সমাজবাসীর আচার, বিশ্বাস ও মনোভাব সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জন করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৃবিজ্ঞান হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা দ্বারা আদিম মানবসমাজ থেকে শুরু করে বর্তমান অবধি মানুষের দৈহিক গঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আচারব্যবহার প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। সুতরাং মানবজাতির জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নৃবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ