টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর

টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর
টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর

টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : 'টেকসই' শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Susteinable । যা ক্রিয়াবাচক Sustain থেকে এসেছে। Sustain শব্দটি আবার ল্যাটিন শব্দ Sustinere থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হলো কোনো অবস্থা ধরে রাখা, যেভাবে আছে সেভাবে রাখা অক্ষত রাখা ইত্যাদি। 

টেকসই উন্নয়ন বলতে এমন উন্নয়নকে বুঝায় যাতে সম্পদ ব্যবহৃত হবে ঠিকই কিন্তু সম্পদের মজুতকে অক্ষত রাখতে সাহায্য করবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করবে। 

অন্যভাবে বলা যায় যে, পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি সাধন ছাড়াই প্রাকৃতিক সম্পদ এমনভাবে ব্যবহৃত হবে যাতে বর্তমান প্রজন্মে চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা প্রদানে সক্ষম। 

টেকইস উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় যেমন— পরিবেশগত হিসাব নিকাশ, পরিবেশগত সম্পদ, তথা বিভিন্ন উপাদানের যথার্থ ও দক্ষতাপূর্ণ ব্যবহার, সংরক্ষণ, নীতি নৈতিকতা ইত্যাদি চলে আসে। 

নিম্নে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হলো-

টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সম্পর্ক : টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বিদ্যমান। 

অর্থাৎ টেকসই উন্নয়নের সাথে পরিবেশগত উন্নয়নে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। টেকসই উন্নয়ন বলতে এমন উন্নয়নকে বুঝায় যাতে অর্থ ব্যবহৃত হবে কিন্তু অর্থের মজুতকে অক্ষুণ্ণ রেখে এবং এর সুফল অব্যাহত থাকবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মব্যাপী। 

অন্যভাবে বলা যায় যে, পরিবেশের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে ভবিষ্যৎ প্রজনের চাহিদা পূরণে সক্ষম তাকে টেকসই উন্নয়ন বলে। 

অর্থাৎ যে উন্নয়ন বর্তমান পরিবেশের বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদনকে স্থির রেখে ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয় এবং তা প্রজন্মের পর প্রজন্যে চলতে থাকবে তাকে টেকসই উন্নয়ন বলে। 

যেহেতু পরিবেশের সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানব কল্যাণে নিয়োজিত সেহেতু যে উন্নয়ন এ সকল উপাদানের কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি না করে যুগ যুগ ধরে মানবজাতিকে সুবিধা দিয়ে থাকে। যে উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়ন বলে।

অন্যদিকে, আমাদের চারপাশে উপরে নিচে, মাটি, পানি, বন-জঙ্গল, মরুভূমি, সমুদ্র ও পাহাড়-পর্বত, আলো-বাতাস, অন্ধকার, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, জীব-জন্তু, ইত্যাদির পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমাদের পরিবেশ। 

অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রতিটি জীবের চারপাশে ভূমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলে তাদের জীবন ধারণের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সংশ্লিষ্ট জৈবিক ও অজৈবিক যা কিছু রয়েছে তার সমষ্টিগত অবস্থানকে পরিবেশ বলে ।

মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু এ সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। 

পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এতে করে পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের উপরই বর্তায়। 

এমনকি সাধারণ উন্নয়ন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন হুমকির সম্মুখীন হয়। এতে করে প্রতীয়মান হয় যে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশে আবার উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে। 

এ ধরনের বিপরীতমুখী সম্পর্ক দীর্ঘদিন বিরাজ করলে উন্নয়ন ও পরিবেশ এক পর্যায়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। 

আর তার থেকে জন্ম নেয় টেকসই উন্নয়নের ধারণা। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হয়। 

একজন অভিভাবক যেমন তার সন্তানকে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্বযত্নে আগলে রেখে যাবতীয় কার্যসম্পাদন করে থাকে, ঠিক তেমনি টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশকে সম্পূর্ণরূপে দূষণযুক্ত রেখে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে ।

টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন দিক যেমন- উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একমাত্র টেকসই উন্নয়নই পারে পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে উন্নয়ন।কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে। 

এতে করে টেকসই উন্নয়ন যেমন: পরিবেশকে সুরক্ষা করে, তেমনি পরিবেশগত উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা করে থাকে। অর্থাৎ একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশগত হিসাব নিকাশের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজমান। 

আর বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবিদ ও বৈজ্ঞানিকগণের মতে টেকসই উন্নয়নই হলো আধুনিক মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার চাবিকাঠি। 

কেননা টেকসই উন্নয়ন হলে পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। আর পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত হলে মানুষ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। 

এতে করে পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকবে, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ থাকবে, ভারসাম্য বজায় থাকবে, প্রাকৃতিক সম্পদ অক্ষত থাকবে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ