আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে গৃহীত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলো আলোচনা কর
আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে গৃহীত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলো আলোচনা কর
প্রশ্ন ২:৩২ | আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে গৃহীত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলো আলোচনা কর ।
অথবা, আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার ফলে আমেরিকায় সমাজসেবামূলক যেসব সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়েছিল তার বর্ণনা দাও।
উত্তর ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে সংঘটিত অর্থনৈতিক মন্দা আমেরিকার গোটা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবন ব্যবস্থাকে ওলটপালট করে দেয়। মন্দা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য, বেকারত্ব সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যার ফলশ্রুতিতে বিদ্যমান সাহায্য কার্যক্রমে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপ্রতুলতা প্রমাণিত হয়। সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমেরিকার বিদ্যমান সরকারি সমাজসেবামূলক কার্যক্রম ও বেসরকারি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে গৃহীত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলো আলোচনা কর |
© আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে গৃহীত সমাজসেবামূলক কার্যক্রম : নিয়ে আমেরিকায় ১৮৭৩ সালের মন্দার প্রেক্ষিতে গৃহীত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলো আলোচনা করা হলো-
১. দান সংগঠন সমিতি : মন্দা পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সমাজসেবা ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়। সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে কোনো প্রতিষ্ঠিত নিয়ম না থাকায় সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং অর্থের অপচয় ঘটতে থাকে । ঠিক এরূপ পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের অনুকরণ ও অনুসরণে গড়ে তোলা হয় দান সংগঠন সমিতি। আমেরিকাতে ১৮৭৭ সালে এস. হাফফ্রেস গার্টিন (S. Humphreys Gurteen) দান সংগঠন সমিতি গড়ে তোলেন। ফ্রিডল্যান্ডারের ভাষায় আমেরিকায় দান সংগঠন সমিতির উদ্দেশ্য হচ্ছে, Its aim was to help the poor more effectively by avoiding the wasting of money competition and duplication of work a mong the relief societies. অর্থের অপচয় রোধ এবং সাহায্য পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যকার কার্যক্রমের মধ্যে প্রতিযোগিতা, দ্বৈততা রোধ করে কার্যকরভাবে দরিদ্রদের সাহায্য করা।
আমেরিকার উদ্ভূত পরস্থিতি মোকাবিলায় দান সংগঠন সমিতি যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
ক. দরিদ্রতার কারণ অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম : দান সংগঠন সমিতির অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম দারিদ্র্যের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে তার সমস্যার স্থায়ী সমাধান দেওয়ার জন্য সবেচেয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তৎকালে দরিদ্রতার জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হয়। যেমন— অলসতা, শারীরিক অক্ষমতা, অজ্ঞতা, উদাসীনতা, পাপাচার, জুয়াখেলা, রোগ ইত্যাদি ।
খ. আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা : ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব করে। মন্দা পরবর্তী বিরূপতা মোকাবিলায় COS এর প্রস্তুতি করা আইন প্রণয়নের খাতগুলো হলো স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়ন, যক্ষ্মা প্রতিরোধ, দরিদ্রদের বাসস্থান, বস্তি পুনর্গঠন ইত্যাদি। এসব নেতিবাচক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য Cos বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়নের সুপারিশ করে ।
গ. চাকরিসংক্রান্ত কার্যক্রম : মন্দা পরবর্তী বেকারত্ব সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য দান সংগঠন সমিতির সক্ষম বেকার ও ভবঘুরেদের কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য COS কর্মসংস্থান ব্যুরো স্থাপন করে, নিয়োগকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এসবের মাধ্যমে সক্ষমদের বিভিন্ন কারখানায় কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয় । এছাড়াও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার জন্য ঋণদান সমিতি, লন্ড্রি স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় ।
ঘ. পুনর্বাসনমূলক কার্যাবলি : দান সংগঠন সমিতি অক্ষম, বিকলঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করে যা মন্দা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনীয় ভূমিকা পালন করে।
২. সেটেলমেন্ট হাউজের কার্যক্রম : ১৮৭৩ সালের পরবর্তী সময়ে মন্দাজনিত জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সেটেলমেন্ট হাউজ আন্দোলন বা বসতি আন্দোলন গড়ে তোলা হয় ১৮৮৭ সালে। মন্দা পরবর্তী দরিদ্র শ্রেণির ভরণপোষণ ও পুনর্বাসনে সেটেলমেন্ট হাউজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন সময়কার জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, বিনোদন, কর্মসংস্থানসহ মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে আমেরিকার সেটেলমেন্ট হাউজের ভূমিকা অনস্বীকার্য । নিম্নে আমেরিকার ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সেটেলমেন্ট হাউজ আন্দোলন বা সমবসতি আন্দোলনের গুরুত্ব বা অবদান আলোচনা করা হলো-
ক. সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম : বসতি কেন্দ্রের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় মূলত শ্রমজীবী ও নিম্নশ্রেণির মানুষের সমাজকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। এসব সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থানের ব্যবস্থা, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, গ্রহণযোগ্য মজুরি নিশ্চিত করা ইত্যাদি ।
খ. সম্প্রীতি ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করা : ১৮৭৩ সালের মন্দা পরবর্তী নেতিবাচক অবস্থা সামাজিক সম্পর্কের শৃঙ্খলাকে নড়বড়ে করে দেয়। সামাজিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বসতি আন্দোলন শ্রমজীবী ও নিম্নশ্রেণির মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলে
গ. শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ : ১৮৭৩ সালের মন্দা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বসতি আন্দোলন তার লক্ষ্য দলের পুনর্বাসনের জন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশকে অধিক গুরুত্ব দেয়। ব্যক্তিকে শিক্ষিত করা হলে সে আত্মসচেতন হয়ে নিজের জন্য করণীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পারবে। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা সমিতি, কিন্ডারগার্টেন ও সাংস্কৃতিক সংঘ গড়ে তোলা হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা আমেরিকায় বেকারত্ব ও দারিদ্র্যকে বাড়িয়েছে বহুগুণে। ফলে বিদ্যমান সমাজসেবামূলক কার্যক্রম উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছিল । যার কারণে চলমান সরকারি বেসরকারি সমাজসেবামূলক কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ৷ উদ্ভূত এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমেরিকার দান সংগঠন সমিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।