শিক্ষা ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখ
শিক্ষাক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখ | নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান কী
প্রশ্ন ৩.১৪ | শিক্ষাক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখ ।
অথবা, নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান কী?
উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা আদায়ে বেগম রোকেয়া একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করাকে তাঁর জীবনের মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর শিক্ষামূলক কার্যক্রম ও কর্মতৎপরতা দিয়ে সমাজকে করেছিলেন গোঁড়ামিমুক্ত। নারী শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে তিনি যে উন্নততর সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন তা বর্তমান সমাজের মানুষও ভোগ করছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখ নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান কী |
● শিক্ষাক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান : নিম্নে শিক্ষাক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান উল্লেখ করা হলো-
১. শিক্ষানুরাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন : বেগম রোকেয়া ছিলেন চরম শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। তিনি রক্ষণশীল ও পর্দাপ্রথার আধিক্যের মধ্যে থেকেও সকল বিপত্তি উপেক্ষা করে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্জন করেন। বেগম রোকেয়া তাঁর শিক্ষানুরাগের কারণে আরবি, ফারসি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছিলেন । তার শিক্ষানুরাগী মনোভাব দ্বারা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়। এভাবে বেগম রোকেয়া শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
২. সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা : বেগম রোকেয়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত নারীদেরকে সুকন্যা, সুগৃহিনী, সুমাতা ও সর্বোপরি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর প্রথমে ভাগলপুরে ৫ জন শিশু ছাত্রীকে নিয়ে 'সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় শিক্ষার প্রতি নারীদের অনুরাগ বৃদ্ধি পায় এবং এ স্কুলের ছাত্রীসংখ্যা ১৯১৫ সালে ৮৫ জনে ১৯২৭ সালে ১১৪ জনে উন্নীত হয় ।
৩. নারী শিক্ষার প্রসারে অর্থ দান : বেগম রোকেয়া শিক্ষাবিস্তারের জন্য অর্থ দানের মাধ্যমেও অবদান রেখেছেন। ভাগলপুরে স্কুল প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, কলকাতায় স্কুলের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা বাজেয়াপ্ত প্রভৃতি অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি বিনা বেতনে স্কুলের দায়িত্ব পালন করেন এবং নিজের গচ্ছিত অর্থ শিক্ষার প্রসারে স্কুলে দান করেন ।
৪. মহিলা সমিতি গঠন : নারীসমাজের সার্বিক কল্যাণসাধনের জন্য বেগম রোকেয়া ১৯১৬ সালে “আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম” প্রতিষ্ঠা করেন। এ সমিতির মাধ্যমে বেগম রোকেয়া শিক্ষাবঞ্চিত নারীদের একত্রিত করে শিক্ষার প্রতি অনুরক্ত করে তোলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজসংস্কার আন্দোলন আকাশে বেগম রোকেয়া একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তিনি তাঁর মন ও মনন দিয়ে এদেশের মানুষের বিশেষ করে নারীদের শিক্ষাবিস্তারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। আজকের নারীরা যে তুলনামূলক অধিক অধিকার ভোগ করছে তার ভিত্তিমূল স্থাপন করেছিলেন বেগম রোকেয়া ।