ধর্মমঙ্গল কী

ধর্মমঙ্গল কী?

ধর্মমঙ্গল কী
ধর্মমঙ্গল কী

উত্তর: পশ্চিম ও দক্ষিণবঙ্গে ধর্ম ঠাকুর নামে এক পুরুষ দেবতার মহিমা কীর্তন করা হয়। যে কাব্যে তাকেই ধর্মমঙ্গলকাব্য বলে। ধর্ম ঠাকুরকে কেন্দ্র করে এখনও উপসম্প্রদায় - আছে। 

অধিকাংশ মঙ্গলকাব্য স্ত্রী দেবতার মহিমা ঘোষণা করলেও ধর্মমঙ্গলে পুরুষ দেবতার গুণকীর্তন করা হয়। ধর্মমঙ্গলকাব্যগুলোও নানা বৈচিত্র্যে পূর্ণ। পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলার বাইরে ধর্মমঙ্গলকাব্যের সন্ধান পাওয়া যায় না। 

ধর্মমঙ্গলের কাহিনীতে অনেক কাল্পনিক গল্প আখ্যান থাকলেও এর পটভূমিকায় প্রাচীন গৌড় দেশের ঐতিহাসিক ঘটনা প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে। ধর্মমঙ্গলের ছড়া ও শূন্যপুরাণ প্রভৃতি পুঁথি আবিষ্কৃত হয়েছে। 

বাংলাদেশের ডোম = ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের সমাজের লোক ধর্মমঙ্গল মহাসমারোহে শ্রবণ করে, উচ্চবর্ণেরাও অল্প অল্প এ মঙ্গলকাব্যের ভক্ত।

সমস্ত ধর্মমঙ্গলকাব্যে দুটি কাহিনী দেখা যায়- রাজা হরিশ্চন্দ্রের গল্প ও লাউসেনের গল্প। এর মধ্যে লাউসেনের বীরত্বের কাহিনীই অধিকতর প্রাধান্য লাভ করেছে। কোন কোনধর্মমঙ্গলকাব্যে শুধু হরিশ্চন্দ্রের কাহিনী আছে। 

হরিশ্চন্দ্রের গল্প আদিম গল্প হলেও লাউসেনের কাহিনীই যথার্থ ধর্মমঙ্গল নামে পরিচিত। ধর্মের সেবক বীর লাউসেনের অদ্ভুত বীরত্বের কাহিনীকে কেন্দ্র করে ধর্মমঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে। কাহিনীটির সাথে রাঢ়ভূমির পালযুগের ইতিহাসের ক্ষীণ সম্পর্ক আছে, স্থানীয় গ্রাম, জনপদ, নদ-নদীরও উল্লেখ আছে।

হরিশ্চন্দ্রের কাহিনীটি পৌরাণিক ঐতিহ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, লাউসেনের কাহিনী ঐতিহাসিক ও লৌকিক আখ্যানকে অবলম্বন করেছে।

ধর্মমঙ্গলকাব্য প্রায় বিশজন কবি রচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে ময়ূরভট্ট, আদি রূপরাম, খেলারাম, মাণিকরাম, রূপরাম, শ্যাম পণ্ডিত, সীতারাম, রাজারাম দাস, বামদাস আদক, দ্বিজ প্রভুরাম, ঘনরাম চক্রবর্তী, রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাদেব চক্রবর্তী, নরসিংহ বসু, হৃদয়রাম সাউ প্রমুখ। 

এ কাব্যগুলো অধিকাংশই অষ্টাদশ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। দু'একটি ঊনবিংশ শতাব্দীতেও লিখিত হয়েছে। ধর্মমঙ্গলকাব্যের আদি কবি ময়ূরভট এবং শেষ কবি হৃদয়রাম সাউ ঘনরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে তাঁর কাব্য রচনা করেছিলেন।

ধর্ম পূজায় যেমন ডোম সম্প্রদায়ের অগ্রাধিকার, তেমনি ধর্মপুরাণ ও ধর্মমঙ্গলকাব্য রচনায় নিম্নবর্ণের ডোম ও ধর্ম সেবক কবিদেরও বেশি যোগ দিতে দেখা যায়। 

ধর্মমঙ্গলকাব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর মধ্যে বৈদিক আর্য, পৌরাণিক নারায়ণ, বৌদ্ধভাব, স্থানীয় অনার্য রীতি ও কিছু কিছু ইসলামের প্রভাবও আছে। ধর্মমঙ্গলকাব্য মূলত মিশ্র সংস্কৃতিজাত ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ