যাবনী মিশাল ভাষা কী ব্যাখ্যা কর
যাবনী মিশাল ভাষা কী? ব্যাখ্যা কর।
![]() |
যাবনী মিশাল ভাষা কী ব্যাখ্যা কর |
উত্তর:কবি ভারতচন্দ্রের জন্মের অল্প পরেই তাঁর পিতা বর্ধমানের রাজমাতার কোপদৃষ্টিতে পড়ে হৃতসর্বস্ব হন। তখন কবি মাতুলালয়ে আশ্রয় পান এবং সেখানে সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। পরে তিনি গুরুজনদের চাপে ফারসি ভাষাও সুচারুরূপে শিখেছিলেন।
তদুপরি কবির বিচিত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জীবনকাহিনী থেকে আমরা জানতে পাই যে, কবি ছিলেন প্রখর আত্মসচেতন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কাব্য রচনায় তাঁর এ মানসিকতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। আরবি, ফারসি মিশ্রিত বাংলা ভাষায় তাঁর অদ্ভুত কৃতিত্ব দেখাবার জন্যই বোধ হয় তিনি জাহাঙ্গীর বাদশাহ ও ভবানন্দ মজুমদারের মুখে 'যাবনী মিশাল' বাংলা ভাষার অবতারণা করেছিলেন।
মঙ্গলকাব্যের গতানুগতিক কাহিনীকে তিনি কাব্যের উপজীব্য করেছেন। এই গতানুগতিকতা অতিক্রম করতে পারেন নি বলেই তিনি মধ্যযুগের কবি। অন্যথায় ছন্দে, উপমায়, অলঙ্কারে, ভাষা ব্যবহারে, বিদ্রূপাত্মক বাণী বিন্যাসে তিনি আধুনিক।
কাহিনী নির্মাণে নয়, ভাব গভীরতায় নয়, ভারতচন্দ্রের যা কিছু কৃতিত্ব তা শব্দ-ছন্দে। ভাষা ব্যবহারে ভারতচন্দ্র সচেতন শিল্পী ছিলেন। বিষয় অনুযায়ী ভাষা ব্যবহারে ভারতচন্দ্রের কৃতিত্ব বিস্ময়কর। ভারতচন্দ্র বিশ্বাস করতেন যে হউক সে হউক ভাষা কাব্যরস লয়ে। সুতরাং তিনি রসেরই প্রাধান্য স্বীকার করেছেন। ভাষার জাত বিচার করেন নি।
সে জন্যই দেখা যায়, তিনি বিষয়বস্তু উপযোগী ভাষা নির্মাণ করেছেন। অন্নদামঙ্গলের পৌরাণিক অংশে তিনি সংস্কৃত এবং বিশুদ্ধ তৎসম শব্দ ব্যবহার করেছেন। এতে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব এবং গাম্ভীর্য বেড়েছে। যেমন-
মহা রুদ্র রূপে মহাদেব সাজে।
ভভন্তম ভভত্তম শিঙ্গ। ঘোর বাজে।
আবার তেমনি যখন সাধারণ জীবনের চিত্র, প্রাকৃতিক জীবনের কথা ভারতচন্দ্রের কাব্যে বলেছেন তখন সেখানে তিনি সহজ, সরল, সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করেছেন। যেমন-
কল কোকিল অলিকুল বকুল ফুলে। বসিল অন্নপূর্ণা মণি দেউলে ।
আবার আরবি ফারসি হিন্দি শব্দেরও তিনি সুনিপুণ ব্যবহার করেছেন। ভারতচন্দ্র নিজেই
বলেছেন-
TS OTHE
প্রাচীন পণ্ডিতগণ গিয়াছেন কয়ে
যে হউক সে হউক ভাষা কাব্যরস লয়ে।
সুতরাং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে, সুনিপুণ শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে ভারতচন্দ্র ছিলেন উদার এবং সহনশীল। বিষয় অনুসারে ভাষা ব্যবহারের যে কৃতিত্ব তিনি দেখিয়েছেন তা অতুলনীয়।a