পদী ময়রানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

পদী ময়রানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও 

পদী ময়রানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
পদী ময়রানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

উত্তর: পদী ময়রানী পদী ময়ূরানী ‘নীল দর্পণ' নাটকের সার্থক সৃষ্টি। নীল দর্পণের পূর্বে মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে কুটনী চরিত্রের সন্ধান মেলে। কিন্তু বিশিষ্ট চরিত্ররূপে তাদের তেমন সাফল্য জোটে নি, কেবল বিশেষ ছাঁচে বা আদর্শে তাদের গড়া হয়েছে। 

দীনবন্ধুর হাতে সর্বপ্রথম এ শ্রেণির চরিত্র রক্তমাংসের জীবন্ত রূপ পেয়েছে। পদী ময়রানী এক অনতিক্রান্তযৌবনা গ্রাম্য ভ্রষ্টা নারী। সে রোগ সাহেবের উপপত্নী এবং সাহেবের কামনার ইন্ধন যোগাতে সে বহু কুলবালার সর্বনাশ করেছে। পদী ময়রানী চরিত্রের এই বাহ্যিক পরিচয়কে আড়াল করে আছে আর একটি সত্য সত্তা- সে নারী। নারী হিসেবে তার একটি নমনীয় অন্তর আছে, তা সে বিসর্জন দেয় নি। এখানেই এ চরিত্রটির দ্বন্দ্ব । 

সে যদি সহজভাবে তার চরিত্রের বাইরের দিকটিকে একমাত্র বৈশিষ্ট্য জ্ঞান করত, তবে তার দুষ্কর্মে কোন অসন্তোষ সৃষ্টি হত না। কিন্তু মূলত সে তার স্বাভাবিক নারী হৃদয় নিয়ে সমাজের আর দশজনের মত বাঁচতে চায়, তার ঘূণিত জীবনই তার কাছে প্রত্যাশিত নয়। তাই সে কচি মেয়েগুলোকে সাহেবের থাবার সামনে ছুঁড়ে দিতে তার অন্তর কেঁদে ওঠে, কেঁপে ওঠে। ক্ষেত্রমণির কান্না তার হৃদয়কে বিচলিত করে, তাই তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য রোগকে অনুরোধ জানায়। 

তার নিঃসন্তান নারী হৃদয় কারও পিসি, কারও দিদি- এমনিভাবেদশজনের মত বেঁচে থাকতে হাহাকার করে। সে কুলটা কিন্তু নারীর সুকুমার লজ্জাকে জলাঞ্জলি দেয় নি, নবীন মাধবকে পথের মাঝখানে দেখে সে লজ্জায় জিভ কেটে দীর্ঘ ঘোমটা টেনে পালিয়েছে। দীনবন্ধুর রচনা গুণে এই নিতান্ত ঘৃণিত চরিত্র পদী ময়রানীও সর্বজনীন সহানুভূতির পাত্রী হয়ে উঠেছে। 

বহির্মুখী জীবনাচরণের আবর্জনার অন্তরালেও যে নারীর অন্তর্মুখী নারীত্ব সর্বদা সজাগ ও সক্রিয় থাকে, দীনবন্ধুর এই চরিত্রটি তার উপলব্ধিতে সার্থক হয়ে উঠেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ