সরমার পরিচয় দাও
সরমার পরিচয় দাও
![]() |
| সরমার পরিচয় দাও |
উত্তর শিল্পীর তুলির একটি আঁচড়ে সরমা চরিত্রটি অঙ্কিত। স্বল্প পরিসরে স্নিগ্ধ মধুর নারীটি নীতিবোধে, ধর্মবোধে সমুন্নত। নিঃশব্দ সঞ্চারী আভিজাত্যবর্জিত চরিত্রটি মুহূর্তের জন্য আমাদের শ্রদ্ধা কেড়ে নেয়।
সীতার বেদনা তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে নিজের অসহায়তার জন্য কিন্তু সে নিরুপায়, শত বাঁধনে বাঁধা। তাই অজ্ঞাতে অশ্রুবর্ষণ ছাড়া তার কোন পথ নেই । অভিষেকের ব্যস্ততার ভিড়ে সীতার পায়ের কাছে বসে সে কেঁদেছে। এ কান্না দীর্ঘদিনের চাপা কান্নার উচ্ছ্বসিত মুক্তধারা।
আর কোন ভূমিকার দরকার নেই। এ কান্নাই তার ধর্মবোধ, নীতিবোধ, অসহায়তার কাতর নিবেদন, অকর্তব্যজনিত ক্ষমা প্রার্থনা, প্রবল আত্মধিক্কার ও দেব আকাঙ্ক্ষিত সীতার চরণ স্পর্শের পুলকোচ্ছ্বাস।সীতার সীমন্তে ফোঁটা দিয়ে পদধূলি গ্রহণ দেখে আমরা দেববিশ্বাসী বঙ্গবধূ সরমার পরিচয় পাই।
সরমার মূল্য আর কেউ না দিলেও সীতা তো বুঝেছিল- সীতার কাছে সে ছিল মরুভূমির মধ্যে প্রবাহিণী, রৌদ্রের মধ্যে ছায়া, নির্দয়তার মধ্যে মূর্তিমতী দয়া, পঙ্কিল জলে পদ্ম, ভুজঙ্গিনীরূপী কনক লঙ্কার সে হল শিরোমণি ।
মধুসূদন মাতৃভাষায় কাব্য লিখতে গিয়ে নিজের মাতৃজাতির বন্দনা করেছেন। সীতা- প্রমীলা-সরমা-মন্দোদরী কোন চরিত্রেই যেন কবির সব কথা, সমস্ত আবেগ ফুরাচ্ছে না। নানাভাবে বাঙালি নারীর সতীত্ব, গার্হস্থ্যজীবনের পবিত্রতা বলে যেন শেষ হয় না।
বাঙালি নারীর এই অপরূপ পবিত্রতা তিনি মহাকাব্যের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন। কবি তার মহাকাব্যের নারী চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন যে, বাঙালি নারী কতটা পতিপ্রাণতা, সহমর্মী, সর্বংসহা, গার্হস্থ্যজীবনে আত্মনিবেদিতা, যে নারী নিজে জ্বলেপুড়ে অন্যকে দীপ্তি দেয়, দেয় প্রেমঘন ছায়া ।
