মনসামঙ্গল কি

মনসামঙ্গল কি 

মনসামঙ্গল কী?
মনসামঙ্গল কী?

উত্তরঃ আনুমানিক খ্স্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী হতে আরম্ভ করে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি ভারতচন্দ্রের কাল পর্যন্ত বঙ্গ সাহিত্যে যে একশ্রেণীর ধর্মবিষয়ক আখ্যানকাব্য প্রচলিত ছিল যা মঙ্গলকাব্য নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যের কাহিনী বাংলার সামাজিক অবস্থা হতে উদ্ভূত হলেও, কালক্রমে তা হিন্দু সমাজের অনুশীলনের বিষয় হওয়ার ফলে তাদের উপর পুরানগুলোর প্রভাব পড়েছে। 

প্রত্যেক মঙ্গলকাব্যের নায়ক স্বর্গভ্রষ্ট দেবশিশু। বাঙালি ভোগবাদী কিন্তু কর্মকুষ্ট, তাই দৈবশক্তি ও তুকতাকের উপর তাদের অগাধ বিশ্বাস। তাই মনসা, শীতলা, শনি প্রভৃতি অরি দেবতার পূজা দিয়ে যেমন পার্থিব অকল্যাণ এড়াতে চেয়েছে, তেমনি লক্ষ্মী, চণ্ডী, ধর্মঠাকুর, সত্যনারায়ণ প্রভৃতির সেবায় সুখশান্তি ও ঐশ্বর্যের আশ্বাস লাভ করেছে। 

তাই বাংলা সাহিত্যে নানা ধরনের মঙ্গলকাব্যের দেখা পাই- মনসামঙ্গল, শীতলামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি।

সাপের হাত হতে রক্ষা পেতে এ বাংলার মানুষেরা মনসা দেবীর পূজা করে এ থেকেই মনসামঙ্গল কাব্যের উৎপত্তি। আর্য সমাজ থেকে স্ত্রী দেবতার পূজার প্রচলন আর্য সমাজের প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে এবং দাক্ষিণাত্যে মনসা খুবই জনপ্রিয় ছিল। মনসামঙ্গল কাব্য মূলত পূর্ব বাংলার দান। মনসামঙ্গল প্রধানত দেব ও মানবের সংগ্রামের কাহিনী। মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান কবি হলেন-

নারায়ণ দেব, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপলাই, ষষ্ঠিবর দত্ত, কানাহরি দত্ত। তাছাড়া বিপ্লব দাস, দ্বিজ বংশীদাস, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ প্রভৃতি অপ্রধান কবির নামও পাওয়া যায়। দ্রোহের ও সংগ্রামের ইতিকথা। 

দেব-মানববের সংগ্রামে মানুষ পরাজিত হয়েছে বটে, কিন্তু বৃদ্ধি পেয়েছে মানবকিতার মর্যাদা, মহিমান্বিত হয়েছে মনুষ্যত্ব। চাঁদ বেহুলার বিদ্রোহে ও দৃঢ়সংকল্পে এদেশের মানুষের মনে আত্মশক্তির ও আত্মমর্যাদার চেতনা জাগে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ