দীনবন্ধু মিত্রের 'নীল দর্পণ' কি গণনাটক? – আলোচনা কর
দীনবন্ধু মিত্রের 'নীল দর্পণ' কি গণনাটক? – আলোচনা কর
![]() |
| দীনবন্ধু মিত্রের 'নীল দর্পণ' কি গণনাটক? – আলোচনা কর |
উত্তর নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র মাটির কাছাকাছির শিল্পী। 'নীল দর্পণ' নাটক নাট্যকারের বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল। ডাক বিভাগের কাজের জন্য নদীয়া ও যশোর জেলার বিভিন্নস্থান ঘুরতে গিয়ে কৃষকদের উপর নীলকরদের অত্যাচার দেখেছেন, নীলচাষীদের দুঃসহ জীবনধারা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
নীলকরদের অমানুষিক অত্যাচার বাংলার বৃহত্তর জনসাধারণের মনে প্রতিরোধের এষণা জাগিয়ে তুলেছিল। তারা এই অত্যাচার ও অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংঘবদ্ধভাবে নীলচাষ থেকে বিরত থেকে অসহযোগিতার পথ গ্রহণ করে।
নীলচাষীরা প্রথমত পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও ছোটলাটের কাছে গণদরখাস্ত পাঠিয়ে নীলকরদের অত্যাচার-অবিচারের প্রতিকার দাবি করে। এভাবেই নীলচাষীদের স্থানীয় ও বিচ্ছিন্ন অসন্তোষ ক্রমশ সংগঠিত হয়ে জাতীয় আকার ধারণ করে। গণদরখাস্তের মাধ্যমে অত্যাচারের কোন প্রতিবিধান না হলে তারা অসহযোগিতার পথ ধরে অর্থাৎ নীল চাষ হতে বিরত থাকে।
কিন্তু সরকার তার কায়েমি স্বার্থ রক্ষার্থে পুলিশ ও সৈন্য লেলিয়ে দিলে নীল আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। শিক্ষিত মহলও এ আন্দোলনে বাংলার কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
কৃষকদের ওপর নীলকরদের ব্যবহার নিয়ে কৃষকের প্রতি সহানুভূতিশীল নাট্যকার গোলকবসু, সাধুচরণ ও রাইচরণের দুর্ভাগ্য, নবীনমাধবের বিদ্রোহ, তাদের হাহাকারের করুণ চিত্র, লালসার যূপকাষ্ঠে উৎসর্গীকৃত অসহায় কৃষক কন্যা ক্ষেত্রমণির আর্তনাদ গণমানুষকে অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে শাণিত করে তোলে, ফলে এ নাটকে সামাজিক চেতনার অনুগামী হয়ে শিল্পী হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক সচেতন।
সমসাময়িক বিক্ষুব্ধ গণজীবনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করায় ‘নীল দর্পণ' নাটক গণনাটকের মর্যাদা পেয়েছে।
