বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা

প্রশ্নঃ একটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা লিখ। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা - প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা তোমাদের জন্য আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা নিয়ে আসছি। তোমরা যাতে খুব সহজে এখান থেকে পড়তে পারো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা। এখন প্রায় সব পরিক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা আসে। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা

তোমরা সবাই জানো মুক্তিযুদ্ধ কি। তোমাদের যদি কারো জানা না থাকে তাহলে নিচের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা পড়লেই তোমরা ভালো ভাবে জেনে যাবে। ক্লাস ৬ থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত সবাই এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা পড়তে পারবে। কোনো রকম সমস্যা হবে না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি পড়তে ও লিখতে। তোমরা যেকোন পরিক্ষায় এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি লিখতে পারবে। রচনাটি পড়ার আগে জেনে নাও প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টিতে কি কি থাকতেছে তা সুচিপত্রে দেখে নেই।

সুচিপত্রঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা

  • সচনা
  • জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা
  • জাদুঘরের অবকাঠামো
  • মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কার্যক্রম
  • উপসংহার

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা

সচনা: মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে যে শোষণ ও অত্যাচার শুরু হয়েছিল তার অবসান ঘটে এই যুদ্ধের মাধ্যমে। সমগ্র জাতি দেশের মুক্তির জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিল এই যুদ্ধে। ফলে একসাগর রক্তের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তিযােদ্ধারা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালি জাতির কাছে স্বর্ণময় এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহাকে সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তা জানানোর জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা: ১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ ঢাকাস্থ সেগুনবাগিচার একটি দোতলা ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঢাকার আগারগাঁতে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত।

বাংলাদেশের গোরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য, প্রমাণ, বস্তুগত নিদর্শন, রেকর্ডপত্র ও মারকচিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সুব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। নিরপেক্ষ ও বতুনিষ্ঠভাবে এই ঐতিহাসিক ঘটনাধারা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে দেশের কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তি স্ব-উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের, সারা " জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, ডা. সারওয়ার আলী, রবিউল হুসাইন, আক্কু চৌধুরী ও মফিদুল হক। এদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসে অনেক ব্যক্তি বিভিন্ন মারক, তথ্য-প্রমাণ ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টি বাের্ডের সুদক্ষ তত্ত্বাবধানে।

জাদুঘরের অবকাঠামাে: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রবেশপথের মুখেই রয়েছে শিখা চির একটি বেদির ওপর জ্বলছে অনির্বাণ শিখা। তার পেছনে পাথরে খােদাই করা আছে এক অঙ্গিকার:

সাক্ষী বাংলার রক্তভেজা মাটি 

সাক্ষী আকাশের চন্দ্রতারা 

ভুলি নাই শহিদদের কোনাে স্মৃতি

ভুলব না কিছুই আমরা। 

দোতলা বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মধ্যে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি : নিচ তলায় তিনটি ও দোতলায় তিনটি। প্রথম গ্যালারির নিদর্শনগুলাে দুটি পর্বে বিন্যস্ত। প্রথম পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। যেমন : সিলেট অঞ্চলে প্রাপ্ত ফসিল, পাহাড়পুরের সােমপুর বিহারের মডেল, ভুটান থেকে পাওয়া শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের মূর্তি, বাগেরহাটের বিখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদের মডেলসহ বিভিন্ন মসজিদের টালির নিদর্শন এবং মন্দিরের পােড়ামাটির কারুকাজ। এসবের পাশাপাশি এখানে রয়েছে নানা সময়ের মুদ্রা, তালপাতার লিপি ও তুলট কাগজে লেখা মনসামঙ্গল কাব্যের অংশবিশেষ। দ্বিতীয় পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগ্রামের চিত্র। যেমন : নবাব সিরাজউদ্দৌলা যেখানে পরাজিত। হয়েছিলেন সেই পলাশীর আম্রকাননের মডেল; সিরাজউদ্দৌলা, টিপু সুলতান, তিতুমীর, রাজা রামমােহন। রায়ের প্রতিকৃতি; ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, যতীন্দ্রনাথ মুখার্জি, মওলানা মােহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর। ফটোগ্রাফ। আরও আছে সিপাহি বিদ্রোহের স্থিরচিত্র, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের শহীদদের চিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘ধূমকেতু' পত্রিকার কপি এবং ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের – যাকে আমরা ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ বলি, তার করুণ দৃশ্যের ছবি।

দ্বিতীয় গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তান আমলের ইতিহাস। ১৯৫২'র ভাষা আন্দোলন, '৫৪র সাধারণ নির্বাচন, '৫৮র সামরিক শাসন, '৬২র সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলন, '৬৬র ছয় দফার আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, '৬৯-এর গণ-অত্যুত্থান, '৭০-এর ভয়াবহ জলােচ্ছাস ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন o দলিল , ছবি ও স্মারক।

তৃতীয় গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে ১৯৭১ সালের অসহযােগ আন্দোলন, ২৫শে মার্চ রাতে বাধীনতার ঘােষণা, প্রাথমিক প্রতিরােধ, প্রবাসী সরকার সংক্রান্ত ছবি ও শরণার্থীদের জীবনচিত্র।

দোতলার তিনটি গ্যালারি সাজানাে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, প্রমাণ ও চিত্র দিয়ে। প্রথমটিতে (চতুর্থ। শাহনার নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ছবি, শহীদ মুক্তিযােদ্ধা, প্রাথমিক প্রতিরােধ, প্রবাসী সরকার এবং সেক্টর কমান্ডারের নানা তৎপরতার তথ্য ও ছবি। পরেরটিতে (পঞ্চম গ্যালারি) আছে প্রতিরােধের লড়াই, গেরিলাযুদ্ধ, নৌ-কমান্ডাে, বিমানবাহিনী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা এবং সশস্ত্র যুদ্ধের ছবি, সারক ও বিবরণ। সবশেষে (যষ্ঠ গ্যালারি) রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে আছেন একজন চৌকস গাইড। তিনি দর্শনার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে তাদের কৌতূহল নিবৃত করেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর চত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানারকম বই, পােস্টার, ক্যাসেট, সিডি, মারকসামগ্রী বিক্রির জন্য একটি পুস্তকবিপণি, একটি খাবারের দোকান ও একটি উন্মুক্ত মঞ্চ এবং সামনের অংশে আছে। ১০০ আসন বিশিষ্ট একটি চমৎকার অডিটোরিয়াম।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কার্যক্রম: মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। জাদুঘর পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরিবহন সুবিধাসহ এখানে নানা সুযােগ-সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রদর্শনীর জন্য একটি গাড়িকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অডিটোরিয়ামে। ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমন্ত্রিত দর্শকদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র দেখানাে হয়। উন্মুক্ত মঞ্চে আয়ােজন করা হয়ে থাকে নানা অনুষ্ঠানের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংগৃহীত আরক সংখ্যা প্রায় এগার হাজার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশ্বের আরও আটটি দেশের সমভাবাপন্ন জাদুঘরের সঙ্গে মিলে “ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব হিস্টরিক মিউজিয়াম অব কনসান্স” গঠন করেছে ।।

উপসংহার: যেকোনাে জাদুঘর দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জনসমক্ষে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের মহান কায় জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি-স্মারক-দলিলপত্রের একমাত্র সংগ্রহশালা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারে, ভুলে না যায়, সে লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা

ভূমিকা: মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবােজ্জ্বল ও রক্তাক্ত অধ্যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ববাংলার মানুষ অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ। স্বাধীনতা হলাে একটি জাতির আজন্ম লালিত স্বপ্ন। স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার মধ্যে যেমন গৌরব থাকে, তেমনি পরাধীনতায় থাকে গ্লানি। আর তাই পরাধীন হয়ে কেউ বাঁচতে চায় না। দাসত্বের শৃঙ্খলে কেউ বাঁধা পড়তে চায় না। বাঙালি জাতিও চায়নি বছরের পর বছর ধরে শাসনে-শােষণে পাকিস্তানিদের দাস হয়ে থাকতে। তাই তারা শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে পড়েছিল আন্দোলনে, সােচ্চার হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পেয়েছিল তাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা।

পটভূমি: ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামের দুইটি পৃথক রাষ্ট্র। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশ - পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা কখনােই পূর্ব পাকিস্তানকে সমান মর্যাদা দেয়নি। বরং সব সময় চেয়েছে পূর্ব পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখতে। পশ্চিম পাকিস্তান সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যে জর্জরিত করতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানকে। শিল্প কারখানার কাঁচামালের জন্য পশ্চিম পাকিস্তান নির্ভর করতাে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর। শ্রমিকদের অল্প বেতন দিয়ে উৎপাদনের কাজ করাতাে। রাজস্ব থেকে আয়, রপ্তানি আয় প্রভৃতির সিংহভাগ ব্যয় হতাে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় যেখানে ৯৫% ব্যয় হতাে, সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় ব্যয় হতাে মাত্র ৫ শতাংশ। আবার, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী কোনােভাবেই বাঙালিদের হাতে শাসনভার তুলে দিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অভাব, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শােষণ, অবকাঠামােগত উন্নয়নে অবহেলা, মৌলিক নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপসহ সকল প্রকার বৈষম্য স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠনের দাবিকে জোরালাে করে তােলে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও বিকাশ: বাঙালি জাতির রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ পূর্ব থেকে হলেও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তা জোরালাে হয়। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার ঘােষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। এই ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভাষার দাবিতে রাজপথে শহিদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরাে অনেকে। ভাষা ও সংস্কৃতির উপর শাসকগােষ্ঠীর আঘাত ছিল বাঙালির কাছে তাদের অস্তিত্বের মূলে আঘাতম্বরূপ। একদিকে বাঙালিরা যেমন সংকটের প্রকৃতি ও গভীরতা বুঝতে পারে, অন্যদিকে তা মােকাবেলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। ১৯৫৪-র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ, ১৯৬২-র গণবিরােধী শিক্ষা কমিশন রিপাের্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬-র বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় - এই প্রত্যেকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করে।

স্বাধীনতার ডাকঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভােটে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। বরং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকার তখন ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর ফলে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতায় উন্মুখ দশ লক্ষাধিক মানুষের সামনে বজ্রকণ্ঠে ঘােষণা করেন – আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সগ্রাম।' এরপর গড়ে ওঠে তীব্র অসহযােগ আন্দোলন। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার লিখিত ঘােষণাপত্র দিয়ে যান। ২৬শে মার্চ দুপুরে এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাটের স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘােষণাপত্রটি পাঠ করেন।

অপারেশন সার্চলাইট: ইতিহাসের ঘৃণিত গণহত্যা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট'। ওইদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এবং ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে হত্যা করে অসংখ্য নিরস্ত্র বাঙালিকে।

মুজিবনগর সরকার গঠন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। এই দিন স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রও গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত সরকার ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা ইউনিয়নের আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তখন থেকে এই জায়গার নতুন নাম হয় মুজিবনগর। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র অনুযায়ী দেশ চলতে থাকে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী সাংবিধানিক পদক্ষেপ ছিল মুজিবনগর সরকার গঠন। এই সরকারের নেতৃত্বে নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী জনসমর্থন আদায়ে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও জনযুদ্ধ: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ নিরস্ত্র জনগণের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ চালালে বাঙালি ছাত্র, জনতা, পুলিশ, ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সদস্যরা সাহসিকতার সাথে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বিনা প্রতিরােধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালিরা ছাড় দেয়নি। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বহু মুক্তিযােদ্ধা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শহিদ হন। মুক্তিযােদ্ধাদের এ ঋণ কোনাে দিন শােধ হওয়ার নয়। জাতি চিরকাল মুক্তিযােদ্ধাদের সূর্যসন্তান হিসেবে মনে রাখবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালি অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগােষ্ঠীর মানুষও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তাই এ যুদ্ধকে বলা হয় গণযুদ্ধ বা জনযুদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, ছাত্র, পেশাজীবী, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি করে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য পুরাে দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। ৩রা ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যুক্ত হয়ে যৌথভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করে। যুদ্ধে পর্যন্ত হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযােদ্ধাদের বিজয় হয়।

মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারী সক্রিয় ছিল কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে, কখনােবা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা অসংখ্য। অজানা-অচেনা আহত মুক্তিযােদ্ধাদের সেবা-শুশ্রুষা করেছেন বহু নারী। চরম দুঃসময়ে পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন মুক্তিযােদ্ধাদের। অনেক সময়ে শত্রুর কাছে নিজেদের সম্ভ্রম এবং প্রাণও দিতে হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিরা বিভিন্নভাবে সহযােগিতা করেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে ছুটে গিয়েছেন। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছেন। পাকিস্তানকে অস্ত্র, গােলাবারুদ সরবরাহ না করতে বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের নিকট আবেদন করেছেন। এক্ষেত্রে ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা: যুদ্ধের সময়ে দেশপ্রেম জাগ্রতকরণ, মনােবল বৃদ্ধিসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ও অবদান ছিল খুবই প্রশংসনীয়। পত্রপত্রিকায় লেখা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পাঠ, দেশাত্মবােধক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান, আবৃত্তি, নাটক, কথিকা, জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'চরমপত্র' ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের বর্বরােচিত হত্যাকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে দাঁড়ায়। ভারত সে সময়ে এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। সােভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন দেয়। তক্কালীন মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের বিরােধিতা করলেও সে দেশের জনগণ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গানের দল বিটস্-এর জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এর আয়ােজন করেছিলেন। ফরাসি সাহিত্যিক আন্দ্রে মালরাে, আঁ পল সার্জে-সহ অনেকেই তখন বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাঃ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ক্ষুধাদারিদ্র-অশিক্ষা-কুসংস্কার থেকে মুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটি দেশের - বঙ্গবন্ধু যার নাম দিয়েছিলেন সােনার। বাংলা'। এই সােনার বাংলা গঠনের চেতনাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নতুন প্রজন্মের কাছে এই চেতনাকে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। কেননা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এই চেতনার কোনাে বিকল্প নেই।

উপসংহার: মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহংকার। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এনে দেয়। এই স্বাধীনতা ত্রিশ লক্ষ ভাইয়ের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত, লক্ষ মা-বােনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া। তাই এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের নিবেদিতপ্রাণ হওয়া উচিত। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানাে যেমন জরুরি, তেমনি নাগরিকদের নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কর্তব্যবােধ, ন্যায়নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে বাংলাদেশের যথার্থ অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা

ভূমিকা: বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও শ্রেষ্ঠ অধ্যায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ এই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়লাভের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই মুক্তিযুদ্ধ কোনো ইতিহাসবিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে নবজাগ্রত জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়েছিল, তাই পরবর্তী নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করে। ফল হিসেবে বিশ্ব-মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ' রাষ্ট্র নামে স্থান করে নেয়।

ভাষা আন্দোলনের সূচনা: ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমার একপর্যায়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার জনগণের অস্তিত্ব ও ভাগ্যকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রপূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে। তদানীন্তন পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হলেও শতকরা মাত্র সাতজনের মুখের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ব বাংলা। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পুঞ্জীভূত হতে থাকে ক্ষোভ। এরপর থেকে ক্রমে জোরালো হয়ে ওঠে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবি। ক্রমান্বয়ে তা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে।

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: ১৯৫২ সালের শুরুতে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ওই বছর একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস' ও সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে জনসমাগম, জনসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অগ্রসর হলে তাদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। শহিদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর, বরকতসহ নাম না-জানা আরও অনেকে। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সারা পূর্ব বাংলা। পরদিন সারারাত জেগে শহিদদের স্মরণে গড়া হয় শহিদ মিনার। পুলিশ তা ভেঙে ফেললে আবারও গড়ে তোলা হয়। এ শহিদ মিনার একুশের শোক, সংগ্রাম ও শপথের প্রতীক। যা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও জাতিচেতনামূলক আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে আছে আমাদের জাতীয় জীবনে।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ১৯৫৭ সালের ২৩শে জুন ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধে পলাশির প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ইংরেজদের হাতে পরাজিত হন। অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। প্রায় দুইশ' বছরের ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হয় বাংলাসহ গোটা ভারতবর্ষ। শুরু হয় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক “দ্বিজাতিতত্ত্বে'র ভিত্তিতে যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ই আগস্ট জন্ম হয় পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি রাষ্ট্রের।

স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ববাংলা অংশটি পূর্ব পাকিস্তান নামে জন্ম নেয়; যা আজকের বাংলাদেশ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতা ও মুক্তির। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন অচিরেই ভঙ্গ হয়। বাঙালি শৃঙ্খলিত হয়ে পড়ে আরেক ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকবর্গের বৈষম্যমূলক শাসন ও শোষণে নিপীড়িত হয় বাংলা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের ইতিহাস পশ্চিম পাক্তিস্তান কর্তৃক বাঙালির শোষিত হওয়ার ইতিহাস। বাঙালি জাতির বঞ্চনার ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়— ‘২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর- নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।'

একুশের চেতনা: একুশ মানে মাথা নত না করা । একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক তীব্র আলোড়ন তুলেছিল । বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন রচনায় বাঙালিকে সাহস জুগিয়েছে ভাষা আন্দোলন। নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে দুর্বলের সম্মিলিত ও সাহসী রূখে দাঁড়ানোই একুশের চেতনার মূলকথা। পাকিস্তানি কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া উর্দুকে বাঙালি বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়নি। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'— দাবিতে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিতেও তারা পিছপা হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অন্যায়কে তারা রুখে দিয়েছে। ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই একুশের মূল শিক্ষাই হলো, সকল ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। শোষণ, সাম্প্রদায়িকতার শিকড় উপড়ে গণতান্ত্রিক ও সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

'৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে একুশের ভূমিকা: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষা ও সংস্কৃতির পরিসরেই সীমাবন্ধ ছিল না। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে ভাষা আন্দোলন প্রেরণা ও শক্তি জুগিয়েছে। উন্মেষ ঘটিয়েছে সংগ্রামী বাঙালিকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঋদ্ধ হতে এবং সকল অন্যায়, শোষণ ও বঞ্ছনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে একুশের চেতনার ভূমিকা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. পরাধীন বাঙালিকে নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে । বাঙালি তার ন্যায্য দাবি আদায়ে আপসহীন হয়ে ওঠে। 

২. ভাষা আন্দোলন বাঙালির মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্য ও সংহতি তৈরি করে।

৩. বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ভাষা আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই আন্দোলনের পর বাঙালি নিজের জাতিগত পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়।

8. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রেরণাই পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাফল্য ও বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঙালিকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

৫. একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালিকে তার ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে । বাংলা ভাষার গবেষণা, চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। যা আজ বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার বাতিঘর ।

৬. ভাষা আন্দোলন বাঙালির মাঝে এক সুদৃঢ় অসাম্প্রদায়িক চেতনা জন্ম দেয়। পরবর্তী সময়ে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনে । 

উপসংহার: কোনো কোনো মহান দিন নিয়ে আসে যুগান্তরের সম্ভাবনা। বাঙালি জাতির জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি তেমনই একটি ঐতিহাসিক ও মহান দিন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার স্মরণীয় এই দিনটি বাঙালির ইতিহাসে দেদীপ্যমান এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। মূলত এই ভাষা আন্দোলনকে ঘিরেই বাঙালি জাতি আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রায় তিন দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা

ভূমিকা: বাঙালি জাতির সর্বাপেক্ষা গৌরবের ইতিহাস তার স্বাধীনতার ইতিহাস। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে শান্তিপ্রিয় হলেও কারোর অধীনতা বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেয়নি । অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থান চিরকালই ছিল প্রতিবাদী। তাই এখানে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। সে আগুনে বারবার প্রকম্পিত হয়েছে পরাশক্তির ভীত ও শোষণের ভিত্তিভূমি। স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালির আজন্ম স্বপ্ন ও সাধনা ছিল পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভ করা। আর এ বোধ ও চেতনা থেকেই পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে সর্বস্তরের বাঙালি জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অর্জন করে প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে একদিকে যেমন সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবি সক্রিয় ছিল, অন্যদিকে তেমনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনও ছিল প্রধান লক্ষ্য ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি প্রদেশ নিয়ে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার ফলে এ দেশের অনেক মানুষের প্রত্যাশা ছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য নীতির ফলে পাকিস্তানের সমগ্র অর্থনীতি পশ্চিম পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস আদালত সবই পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিকভাবে পরিচালিত হতে থাকে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের জনতা এ অর্থনৈতিক বৈষম্য মেনে নিতে পারেনি ফলে স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। পূর্ব পাকিস্তানের সমাজকাঠামো মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিভিত্তিক, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সমাজকাঠামো ছিল ভূস্বামী, পুঁজিপতি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিভিত্তিক। সমাজকাঠামোর এ বৈপরীত্যের কারণে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর শোষণের হাত প্রসারিত করে এবং কেন্দ্রীয় শাসনযন্ত্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের যোগ্য প্রতিনিধি না থাকায় পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয় বেশি। ১৯৪৭- ৭০ সাল পর্যন্ত দুই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়— আমদানি খাতে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় হতো ৬৩০ কোটি টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হতো ৩৭৯৯ কোটি টাকা। শাসন খাতে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যয় ২৬৯ কোটি টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যয় ছিল ১৯৪৭ কোটি টাকা। উন্নয়নমূলক খাতে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যয় ছিল মাত্র ২১১৪ কোটি টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যয় ছিল ৫৩৯৫ কোটি টাকা। পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৩৩১ টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ৫৩৭ টাকা। এ ছাড়া শিল্পকারখানা সবই প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র আদমজী জুটমিল ব্যতীত (বর্তমানে বন্ধ) উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল না বললেই চলে। এ ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, এবং দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করে স্বাধীনতা । 

স্বাধীনতা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা: যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে প্রায় এক দশক সময় লেগে যায়। ধীরে ধীরে এ দেশের কৃষি ও বাণিজ্যিক অর্থনীতির ধারা উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় । সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে ছোট-বড় শিল্পকারখানা। বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরকারি, আধাসরকারি ও প্রাইভেট মিলে ডজনখানেক বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে এ দেশের চা, বস্ত্রশিল্প, পাটজাত সামগ্রী বিদেশে রপ্তানির মধ্য দিয়ে অর্জিত হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে । রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে। তবে দুর্নীতি, ঘুষ ও অরাজকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন আজও পুরোপুরি সম্ভব হয়নি ।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: যে স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন নানা কারণে গত ৫০ বছরেও শতভাগ সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছতে পারেনি। স্বাধীনতার পর বারবার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুবসমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদির ক্রমবৃদ্ধির ফলে ব্যাহত হয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আশার কথা হচ্ছে, এত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে গত দুই দশকের তমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯০-এর পর সালে সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক নতুন এগিয়েছে। দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। মেয়েদের অর্থনৈতিক প্রয়ার কর্মকাণ্ডে অবদানের হার দ্রুত বেড়েছে। জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর তিক হার, মেয়েদের শিক্ষার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা —গল, গ্রহণের হার ইত্যাদি সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের অন্যান্য দেশ সমগ্র এমনকি প্রতিবেশী অনেক দেশকে পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।

প্লানা, স্বাধীনতার ঠিক পরে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর, এখন শ্চিম | সেই গড় আয়ু ৭২ বছর। স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু নের আয় ছিল ৩৩১ টাকা যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২,০৬৪ ডলার। এছাড়া কলে এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ ছিল রোল মডেল। এমডিজি ছিল জাতিসংঘ

প্রণীত সর্বজনীন উন্নয়ন পরিকল্পনা। এমডিজির সবগুলো অভীষ্ট অর্জনে ছিল । সফলতা দেখাবার মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে অবাক করে বিত্ত দিয়েছিল। তাই জাতিসংঘের ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে এমডিজি অর্জনে জামী, সফল ১৮টি দেশের তালিকায় জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আমরা ভার দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগে ২০১৩ ব্রত সালেই অর্জন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিই। দারিদ্র্য হ্রাসকরণ না সংক্রান্ত এমডিজি-১ অর্জনে বিশ্বে অগ্রগামী ভূমিকা পালনের জন্য -- বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক 'বিশেষ স্বীকৃতি' লাভ করে। এমডিজির ল চতুর্থ অভীষ্ট শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে ২০১০ সালেই আমরা ২০১৫ এর লক্ষ্য অর্জন করি। এমডিজি-৫ এর আওতায় নারীর ক্ষমতায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের জন্য এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড, এমডিজি-৭ এর অভীষ্ট অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মোকাবিলায় সাফল্যের প্রাজ্ঞতা ও নেতৃত্বের জন্য UNEP থেকে তাঁকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ' হিসেবে ঘোষণা করা হয় । শুধু তাই নয়, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য দুটি সূচক অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ এর তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সাফল্যই নির্দেশ করে।

উপসংহার: সামগ্রিক আলোচনা থেকে আমরা এ সত্যে উপনীত হতে পারি যে, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে আমরা যে কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সেই লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রত্যেক মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ সঞ্চারিত করা গেলে তবেই আমাদের স্বাধীনতা সত্যিকার অর্থে এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা । যদি আজকের এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ