বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9, 10

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা - শিক্ষার্থী বন্ধুরা কেমন আছেন? তোমরা যারা রচনা রচনা কর তাদের জন্য আজকে বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা নিয়ে আসছি। তোমরা বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি পড়লে বুঝতে পারবে কত সহজ একটা রচনা। 

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9, 10
বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9, 10

এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৫ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৫ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।

সুচিপত্র: বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা | রচনা বাংলাদেশের ষড়ঋতু

  • সূচনা
  • ষড়ঋতুর পরিচয়
  • গ্রীষ্মকাল
  • বর্ষাকাল
  • শরৎকাল
  • হেমন্তকাল
  • শীতকাল
  • বসন্তকাল
  • উপসংহার

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

সূচনা: বাংলাদেশ ঋতু-বৈচিত্রের দেশ। এখানে এক এক ঋতর এক এক রূপ। ঋতুতে ঋতুতে এখানে চলে। সাজ বদলের পালা। নতুন নতুন রঙ-রেখায় প্রকতি আলপনা আঁকে মাটির বুকে, আকাশের গায়ে মানুষের। মনে। তাই ঋতু বদলের সাথে সাথে এখানে জীবনেরও রঙ বদল হয়। সে-কারণেই বু* ** প্রনাথ। ঠাকুরের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়

জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে

তুমি বিচিত্র রূপিণী।

ষড়ঋতুর পরিচয়: পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ঋতুর সংখ্যা চারটি হলেও বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এখানে প্রাত দুই মাস অন্তর একটি নতুন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। ঋগলাে হচ্ছে- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শাত ও বসন্ত। এরা চক্রাকারে আবর্তিত হয়। আর প্রত্যেক ঋতুর আবির্ভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতির রূপ ও সোন্দ্য বৈচিত্র্যময়।

গ্রীষ্মকাল: ঋতুচক্রের শুরুতেই আসে গ্রীষ্ম। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল। আগুনের মশাল হাতে মাঠ-ঘাট পােড়াতে পােড়াতে গ্রীষ্মরাজের আগমন। তখন আকাশ-বাতাস ধুলায় ধূসরিত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির শ্যামল-স্নিগ্ধ। রূপ হারিয়ে যায়। খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যায়। অসহ্য গরমে সমস্ত প্রাণিকুল একটু শীতল পানি ও ছায়ার। জন্য কাতর হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে কখনাে হঠাৎ শুরু হয় কালবােশেখির দুরন্ত তাণ্ডব। ভেঙেচুরে সবকিছু। তছনছ করে দিয়ে যায়। তবে গ্রীষ্ম শুধু পােড়ায় না, অকৃপণ হাতে দান করে আম, জাম, জামরুল, লিচু, তরমুজ ও নারকেলের মতাে অমৃত ফল।

বর্ষাকাল: গ্রীষ্মের পরেই মহাসমারােহে বর্ষা আসে। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। দিগ্বিজয়ী যােদ্ধার বেশে বর্ষার আবির্ভাব। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে। শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। মাঠ-ঘাট পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। প্রকৃতিতে দেখা দেয় মনােরম সজীবতা। জনজীবনে ফিরে আসে প্রশান্তি। কৃষকেরা জমিতে ধান-পাটের বীজ রােপণ করে। গাছে গাছে ফোটে কদম, কেয়া, উঁই। বর্ষায় পাওয়া যায় আনারস, পেয়ারা প্রভৃতি ফল। বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

শরৎকাল: বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আসে শরৎ। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এ সময় বর্ষার কালাে মেঘ সাদা হয়ে স্বচ্ছ নীল আকাশে তুলাের মতাে ভেসে বেড়ায়। নদীর তীরে তীরে বসে সাদা কাশফুলের। মেলা। বিকেল বেলা মালা গেঁথে উড়ে চলে সাদা বকের সারি। সবুজ ঢেউয়ের দোলায় দুলে ওঠে ধানের খেত। রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করে অজস্র তারার মেলা। শাপলার হাসিতে বিলের জল ঝলমল ঝলমল করে।

তাই তাে কবি গেয়েছেন

আজিকে তােমার মধুর মুরতি

হেরিনু শারদ প্রভাতে।

হে মাতঃ বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ।

ঝলিছে অমল শােভাতে।

শরতের এই অপরূপ রূপের জন্যই শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানি । বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ।

হেমন্তকাল: ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসবের আনন্দ নিয়ে আগমন ঘটে হেমন্তের। কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। প্রকৃতিতে হেমন্তের রপ হলদ। শর্থ জলে চয় যায়। হেমন্তের রূপ হলুদ। শর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় মাঠের বুক। মাঠে মাঠে পাকা ধান। কৃষক ব্যস্ত ধান কাটার কাজে। সােনালি ধানে কৃষকের গােলা ভরে ওঠে, মুখে ফোটে আনন্দের হাসি। শুরু হয় নবান্নের উৎসব। হেমন্ত আসে নীরবে; আবার শীতের কুয়াশার আড়ালে গােপনে হারিয়ে যায়।।

শীতকাল: কুয়াশার চাদর গায়ে উত্তরে হাওয়ার সাথে আসে শীত। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। শীত রিক্ততার ঋতু। কনকনে শীতের দাপটে মানুষ ও প্রকৃতি অসহায় হয়ে পড়ে। তবে রকমারি শাক-সবজি, ফল ও ফুলের সমারােহে বিষন্ন প্রকৃতি ভরে ওঠে। বাতাসে ভাসে খেজুর রসের ঘ্রাণ। ক্ষীর, পায়েস আর পিঠাপুলির উৎসবে মাতােয়ারা হয় গ্রামবাংলা। বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । 

বসন্তকাল: সবশেষে বসন্ত আসে রাজবেশে। ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল। বসন্ত নিয়ে আসে। সবুজের সমারােহ। বাতাসে মৌ মৌ ফুলের সুবাস। গাছে গাছে কোকিল-পাপিয়ার সুমধুর গান। দখিনা বাতাস বুলিয়ে দেয় শীতল পরশ। মানুষের প্রাণে বেজে ওঠে মিলনের সুর। আনন্দে আত্মহারা কবি গেয়ে ওঠেন।

আহা আজি এ বসন্তে 

এত ফুল ফোটে

এত বাঁশি বাজে

এত পাখি গায়।।

উপসংহার: বাংলাদেশের ষড়ঋতুর এই লীলা অবিরাম চলছে। বিভিন্ন ঋতু প্রকৃতিতে রূপ-রসের বিভিন্ন সম্ভার নিয়ে আসে। তার প্রভাব পড়ে বাংলার মানুষের মনে। বিচিত্র ষড়ঋতুর প্রভাবেই বাংলাদেশের মানুষের মন উদার ও ভালােবাসায় পরিপূর্ণ।

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

ভূমিকা: ষড়ঋতুর ঘূর্ণাবর্তে বিশোভিত অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রকৃতি যেন সৌন্দর্যের মহিমায় পসরা সাজিয়েছে এ দেশের সর্বত্র । প্রাকৃতিক রূপের এত বৈচিত্র্যময় সমাবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে । সেই অপরূপ রূপে বিমোহিত হয়ে কবি বলেছেন—

ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা 

ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।

ঋতুভেদে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: প্রকৃতির বিচিত্র রূপের আধার ঋতুভেদে নানাভাবে প্রকাশ পায়। একেক ঋতুতে একেকভাবে সাজসজ্জার মাধ্যমে প্রকৃতি সর্বদাই আকৃষ্ট করেছে, মোহিত করেছে ভাবুক হৃদয়কে । ঋতুর আবর্তনে প্রকৃতির মতো জনজীবনও আবর্তিত হয়। একের পর এক ঋতুর আগমনে প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের গতি আরও বৃদ্ধি করে ।

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতুর পর্যায়ক্রমিক আগমনে নবরূপে সেজে ওঠে প্রকৃতি।

ক. গ্রীষ্মকাল: তেজোদীপ্ত পৌরুষ নিয়ে ঋতু-আবর্তের প্রথমেই আসে গ্রীষ্মকাল । বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্ম ঋতু বলে ধরে নিলেও চৈত্রের শেষ থেকে শুরু করে শরতের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে থাকে তার রৌদ্র- তেজস্বীরূপ । প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়িয়ে ফেলে মাটি, মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। মরুভূমির ন্যায় ধূসর প্রান্তরে কেঁপে ওঠে প্রাণিকুল। গ্রীষ্মের এই রুদ্রসৃষ্টি অবলোকন করে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন—

দারুণ অগ্নিবাণ - হৃদয় তৃষ্ণা হানে

রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধ দিন ।

উত্তাপের তীব্রতার পরেই মধু মাসের মধু ফলে বাংলার ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারসে পূর্ণতা পায় সে উৎসব। গ্রীষ্মকালেই প্রকৃতির বুকে আঘাত হানে কালবৈশাখি ঝড়। ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চারপাশ ।

খ. বর্ষাকাল: গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিকে সজীব করতে আসে বর্ষা। রুক্ষতার পর সজীবতা। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্ষাকাল কৃষকের জন্য আশীর্বাদ। বর্ষাকালে আকাশে মেঘের ঘনাবরণ দেখা যায়। কখনো প্রবল বেগে, কখনো টিপটিপ ছন্দে বৃষ্টি ঝরতেই থাকে। মাঠঘাট, পুকুর-নালা, জলাশয়ে জোয়ার জাগে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ নদীতে পাল তুলে ভেসে চলে নৌকার সারি। বৃষ্টির ছন্দে নেচে ওঠে প্রাণিকুল, বাংলার প্রকৃতি। কদম-কেয়া ফুলের মাতাল সুবাসে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, উদ্বেলিত হয় কবির ভাবুক হৃদয় । উদাস মন বলে ওঠে—

‘এমন দিনে তারে বলা যায়

এমন ঘনঘোর বরিষায়।'

বর্ষার অবিরাম জলধারায় ক্রমেই সবুজ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। কিন্তু কখনো কখনো অতিরিক্ত বর্ষণে প্লাবিত হয় লোকালয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ।

গ. শরৎকাল: বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন গম্ভীর আকাশকে বিদায় দিতেই যেন বাংলার প্রকৃতিতে আবির্ভাব ঘটে শরৎকালের। ঝকঝকে নীল আকাশ হয়ে ওঠে নির্মেঘ। তবে হালকা সাদা মেঘ আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটে বেড়ায়। সোনালি রোদে ঝকমক করে ওঠা চারপাশ, শিউলি ফুলের মিষ্টি সুবাস, নদীতীরে কাশফুলের বিপুল সমারোহ, মেঘমুক্ত সুনীল আকাশ, এই মনমাতানো রূপসৌন্দর্য নিয়ে শারদ প্রকৃতি আসে মনকে রাঙিয়ে দিতে।

ঘ. হেমন্তকাল: কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ঐশ্বর্য ও সমৃদ্ধির মহিমায় আসে হেমন্ত ঋতু। কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে বাড়ির আঙিনায় আসে নতুন ধান। তবে শরতের মতো বর্ণসমাহার হেমন্তের নেই। রূপ-রস-গন্ধে হেমন্তের রূপসৌন্দর্যের জৌলুস নেই, সাজসজ্জার আড়ম্বর নেই, নেই বকুল ফুলের অফুরন্ত প্রাচুর্য। তবে প্রকৃতি যেন হেমন্তকে উজাড় করে দিয়েছে তার অফুরন্ত ধনভান্ডার। রাশি রাশি ভারা ভারা ধানে ভরে ওঠে চাষির গোলা । কিন্তু শীতের দোর্দণ্ডপ্রতাপে ক্রমেই মিলিয়ে যায় হেমন্তের অস্তিত্ব। শীতের কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়ে হেমন্ত নিঃশব্দে বিদায় নেয় ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চ থেকে। তার এই নীরব গমনকে উদ্দেশ্য করেই কবি বলেছেন— হায় হেমন্ত লক্ষ্মী

ঙ. শীতকাল: হেমন্তের পর বাংলার প্রকৃতিতে রিক্ততার হাহাকার নিয়ে আসে শীত। হিমেল হাওয়া যেন কোন সুদূর থেকে বয়ে নিয়ে আসে এক সীমাহীন রিক্ততা, শূন্যতা ও বিষাদময়তা। গাছের পাতায় পতনের সুর বেজে ওঠে ফসলহীন বিশাল উন্মুক্ত শূন্য মাঠ আর পত্রশূন্য ডালসর্বস্ব গাছের মনে বিষামদয় বৈরাগ্যভাবের উন্মেষ ঘটায়। প্রকৃতি-প্রাণিকুল উভয়েই কেঁপে ওঠে শীতের দাপটে । যার প্রকাশ আমরা দেখি কবির কবিতায়—

‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন- 

আমলকির এই ডালে ডালে।'

তবে শীতের এই রিক্ততার তপস্যা যেন পূর্ণতারই আরেক রূপ। পিঠাপুলির মহোৎসবে মেতে ওঠে গ্রামবাংলা। ঘরে ঘরে চলে পিঠা বানানোর আয়োজন । এ সময়ে প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যায়। পিঠাপুলি আর শাকসবজির প্রাচুর্যে শীতের শ্রীহীনতাকে অনায়াসে অবজ্ঞা করতে পারে উৎসবপ্রিয় বাঙালি ।

চ. বসন্তকাল: শীতের রিক্ততাকে সৌন্দর্যের মহিমায় মহিমান্বিত করতে পুষ্পডালা সাজিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। কচি সবুজ পাতায় সজ্জিত হয় গাছের প্রতিটি ডাল। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারপাশ। কোকিলের মিষ্টি গান, বাতাবি লেবুর ফুল আর আম্রমুকুলের গন্ধে মেতে ওঠে বাতাস, চোখজুড়ানো ফুলের সমাহার, শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উচ্ছ্বাসে প্রকৃতিতে যেন সৌন্দর্যের মেলা বসে। ফুল-পাখির কলতানে তাল মিলিয়ে কবিও বলে ওঠেন—

“আহা আজি এ বসন্তে 

এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে 

এত পাখি গায় ।'

চৈত্রে এসে যেন বসন্তের জয়জয়কার অনেকটা হারিয়ে যেতে থাকে। বসন্তকে ছাপিয়ে চারদিকে ধ্বনিত হতে থাকে গ্রীষ্মের আগমনী গান । উত্তাপ বেড়ে ক্রমেই দাবদাহের দিকে ধাবিত হতে থাকে। এভাবেই গ্রীষ্মের আগমনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয় বসন্তের মহিমা

বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব: বাংলাদেশের রয়েছে ঋতুবৈচিত্র্যে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব। এখানকার গুটিকয়েক অঞ্চল উচ্চভূমি, বাদবাকি সবই বিস্তৃত সমভূমি অঞ্চল । সমভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে গরমের প্রাধান্য থাকে। অন্যদিকে উচ্চভূমি বলতে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ জেলার উত্তরাংশ, সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশ এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণাংশের উচ্চভূমিকে বোঝায়। এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত ও শীতের প্রকোপ বেশি। বর্ষায় নদীতীরবর্তী সমতল এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়। ঋতুভেদে এবং অঞ্চলভেদে জলবায়ু ভিন্ন রূপ নিলেও শীতপ্রধান বা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মতো কখনোই চরমভাবাপন্ন হয় না ।

বাংলাদেশের লোকজীবনে ষড়ঋতুর প্রভাব: বাংলাদেশের লোকজীবনে ভিন্ন ঋতু ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে । গ্রীষ্মকালে কৃষকরা ব্যস্ত থাকে ধান তোলার কাজে। গ্রীষ্মের দীর্ঘ কর্মব্যস্ততার পর অফুরন্ত অবসর নিয়ে আসে বর্ষা। একটানা বৃষ্টিতে কৃষক কর্মহীন দিনযাপন করে । গৃহবধূরা ঘরে ঘরে কাঁথা সেলাই করে । এ সময় নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, ফলে মাঝিরা ব্যস্তদিন কাটায় । শহরের ধনী সম্প্রদায়ের কাছে বর্ষা মানেই অবসরের আনন্দ। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়, বর্ষা তাদের কাছে এক নিদারুণ যন্ত্রণার নাম । কাজের অভাবে তাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হয় । জ্বর, আমাশয়, কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় । বর্ষার এই দুর্ভোগের পর স্বস্তি দিতে আসে শরৎকাল। বর্ষার পানিতে মাটি চাষের উপযুক্ত হয়। ফলে শরৎকালে কৃষক ব্যস্ত থাকে চাষাবাদের কাজে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠে ফলায় সোনার ধান। এরপর ধান কাটার সময় হয় হেমন্তকালে। কৃষান-কৃষানি সবাই তখন ধান তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। ধান তোলার পরই আসে শীতের পিঠা খাওয়ার ধুম। গ্রামের নারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে পিঠা বানানোর কাজে। এভাবেই প্রতিটি ঋতু আলাদাভাবে প্রভাবিত করে বাংলার লোকজ জীবনকে ।

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ষড়ঋতুর প্রভাব: ঋতুবৈচিত্র্য বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রতি দুই মাস পর পর ঋতুর পরিবর্তনের ফলে কবি-সাহিত্যিকগণ নতুন নতুন ভাবনায় ভাবিত হন। সেই বিচিত্র ভাবনা প্রকাশ পায় তাঁদের সাহিত্যকর্মে । নতুন বছর শুরু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈশাখ বন্দনার মধ্য দিয়ে—

এসো হে বৈশাখ এসো, এসো।

গ্রীষ্মের ভয়াল চিত্র ফুটে উঠেছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’ গল্পে । অন্যদিকে বর্ষার প্রেমময় রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ও কবিতায় । তিনি বলেছেন—

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার খোলা

কবি সুফিয়া কামাল হেমন্তকে নিয়ে মেতে ওঠেন নতুনের আনন্দে— 

এইতো হেমন্তের দিন,

দিলো নব ফসলের সম্ভার

তাকেই আবার দেখা যায় শীতের রিক্ততার সাথে ব্যক্তিজীবনকে মিলিয়ে স্মৃতিকাতরায় নিমগ্ন। অন্যদিকে হেমন্তের বন্দনায় কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন—

হয়তো ভোরের কাক হয়ে কার্তিকের নবান্নের দেশে

অন্যত্র তাঁকে দেখা যায় বসন্তের বর্ণনায়

ফাগুনের রাতের আঁধারে

যখন গিয়াছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ ।

শুধু তাঁরাই নন, অধিকাংশ সাহিত্যিকের রচনায় বাংলার যে রূপ- সৌন্দর্যের পরিচয় পাওয়া যায় তার মূল উপজীব্যই হচ্ছে ঋতুবৈচিত্র্য। বাংলার সংস্কৃতিতেও রয়েছে ঋতুভেদের প্রভাব ।

ভাটি অঞ্চলে বর্ষার জলাবদ্ধতাকে আশ্রয় করেই রচিত হয়েছে ভাটিয়ালি, ঘাটুগান । শীতের কর্মহীনতাকে উপলক্ষ্য করে গ্রামে গ্রামে বসে যাত্রাপালা আর গানের আসর। এভাবে ঋতুচক্র বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ষড়ঋতু: ষড়ঋতুর আবর্তে প্রকৃতির কোমল স্নিগ্ধ রূপই যে আমরা কেবল প্রত্যক্ষ করি তা নয়। অনেক সময় তার ভীমমূর্তি আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে আসে নানা দুর্যোগ। গ্রীষ্মে কালবৈশাখি ঝড়ে নিম্নবিত্ত মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিলাবৃষ্টিতে ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি কখনো কখনো বন্যার রূপ নেয়। ফলে জনজীবনে নেমে আসে ব্যাপক দুর্ভোগ। পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় দেশবাসী। শীত যেন ভয়াল এক অভিশাপ হয়ে আসে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং উষ্ণ বাসস্থানের অভাবে তারা প্রায় সময়ই ঠান্ডা-নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতি বিভিন্ন বিপর্যয় নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।

উপসংহার: এসব প্রাকৃতিক বৈরিতা থাকা সত্ত্বেও বাংলার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর প্রভাবে বিপর্যয়ের চেয়ে রূপময় বৈচিত্র্যের অস্তিত্বই বেশি। গ্রীষ্মের তেজোদীপ্ত মধুর রূপ, বর্ষার ঘন কালো মেঘলা আকাশ, শরতের নদীতীরে কাশফুল আর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেসে যাওয়া, হেমন্তে পাকা ধানের মনমাতানো গন্ধ, শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে পিঠাপুলির স্বাদ, বসন্তে কোকিলের সুমধুর ডাক আর ফুলের অপূর্ব রূপ বিমোহিত করে আমাদের হৃদয়কে। ঋতুচক্রের ঘূর্ণাবর্তে এমন অপরূপ সৌন্দর্যের পীঠস্থান আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । যদি আজকের এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
8 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 09 September

    It was very helpful

  • Anonymous
    Anonymous 01 October

    Apnader banan e onek vul ache

  • Anonymous
    Anonymous 14 March

    Banane onek vul thakleo onek helpful

  • Anonymous
    Anonymous 21 March

    It is very helpful but it many problems in words.

    • Anonymous
      Anonymous 21 April

      Banan is bhul

  • Anonymous
    Anonymous 24 June

    বানানে প্রচুর ভুল থাকলেও জিনিসটা যথেষ্ট সাহায্য করেছে। তবে, বাচ্চাদের বোঝার সুবিধার্থে বানান গুলো সঠিক ভাবে লিখে দেওয়া-টা ভালে হবে।

    • Anonymous
      Anonymous 05 July


  • Anonymous
    Anonymous 02 July

    Damn,thts cool!!!Especially for those of English version...we r usually not good at bengali,but tbh even I can recognise those spelling mistake,no offense!!..ngl they r helpful,but u gotta really pay attention to spelling... Thts pretty much it..tnx

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ