বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা  টি।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সচনা: বর্তমানে দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি। কোনাে দেশ বা জাতির উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন সে সমাজের মানুষ সপে হয়। তাই মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে নারীকেও এ সম্পদের আওতায় আনতে হবে। বিপুল সংখ্যক নারীকে গৃহবন্দি করে তাদের এই কর্মের প্রশংসা করলে চলবে না, তাদের জন্যে চাই উপযুক্ত শিক্ষা। 

নারীশিক্ষার অতীত: আমাদের দেশের নারীশিক্ষার অতীত ইতিহাস খব সবিধাজনক নয়। বাঙালি নারীরা গৃহকোণেই গড়েছিল তার নিরাপদ আবাস।। ধর্মীয় নীতিবােধ বলতে ঘরের বাইরে না আসাকেই বঝত তারা। পরষের পক্ষপাত দুষ্টতার জন্যে নারীসমাজ মুক্তির পথ দেখােন। শাসন তা নিযাতনের শিকার হয়ে দুর্ভাগ্যকেই বরণ করতে হয়েছিল তাদের। কট্টরপন্থী ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের শাসন দণ্ড দেখিয়ে গৃহবাসকেই নারীর একমাত্র আবাস বলে চিনিয়ে দিয়েছিল। অথচ সেই আরণ্যক যুগে নারীরাই সমাজের প্রধান ক্ষমতাধর হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে পুরুষের শক্তির কাছে নারীরা পরাজিত হয়ে ঘরের কোণে আবাস গড়েছে। নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নারীসমাজ শিক্ষার আহ্বানে ক্রমশ সাড়া দিতে শুরু করেছিল অতি ধীরে। মুসলমান নারীদের জন্যে একমাত্র বেগম রােকেয়া। কিছুটা আলাে ছড়াতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি নিজে ঘর থেকে বের হয়ে মুসলিম নারীদেরকে সচেতন করার প্রয়াস চালিয়েছিল। 

নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা: শিক্ষাই জাতির উন্নতির মূল হাতিয়ার। এজন্যে প্রয়ােজন দেশের বিপুল পরিমাণ নারীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা। জাতীয় জীবনে পুরুষের মতােই নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারীদেরকে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখলে সুদক্ষ জনশক্তি হিসেবে তারা নিজকে প্রস্তুত করতে পারবে না, ফলে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হবে। একজন নারী একজন মাও বটে। শিক্ষিত মা সন্তানের জন্যে বড় প্রাপ্তি। মা যদি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হন তাহলে তার সন্তানদেরকেও উপযুক্ত রূপে গড়ে তুলতে পারেন। ফ্রান্সের রাজা নেপােলিয়ন বােনাপার্ট বলেছিলেন, “তােমরা যদি আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও তাহলে আমি তােমাদেরকে শিক্ষিত জাতি উপহার দেব ।

নারীশিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন; একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নের সাথে নারীশিক্ষা ওতপ্রােতভাবে জড়িত। জাতীয় উন্নয়ন বলতে একটি জাতির সামাজিক উন্নয়নকে বােঝায়, আর নারীরা এ সামগ্রিকতার বাইরে থাকতে পারে না। নারীশিক্ষা যত বেশি বিস্তৃত হবে নারীরা ৩৩ বো। আত্মনির্ভরশীল হবে এবং জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। 

নারীশিক্ষায় গৃহীত ব্যবস্থা: বিশ্বজুড়েই এখন নারী প্রগতির সম্প্রসারণ চলছে। আমাদের দেশের নারী এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নারীদের মতাে জাতীয় ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারছে না। তবে একথা ঠিক নারীরা যে পরিমাণ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে সে তুলনায় তাদের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ করার মতাে দু-একটি ক্ষেত্র বাদ দিলে এখনও নারীরা পিছিয়ে আছে বলেই প্রতীয়মান হয় । তাই নারীশিক্ষাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করার জন্যে, তাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় পাঠ গ্রহণের জন্যে স্বতন্ত্র নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি পুরুষদের সাথে নারীরাও যেন সমমর্যাদায় শিক্ষা লাভের সুযােগ পায় সেজন্যে সহশিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় মেয়েদের শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্যে অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন। করা হয়েছে। পাশাপাশি উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমেও নারীর শিক্ষাগ্রহণকে সহজতর করা হয়েছে। ফলে নারীশিক্ষার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

নারীশিক্ষা উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগ: সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার বাইরেও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও সহ বিভিন্ন সংস্থা। নারীশিক্ষার বিস্তারে পৃষ্ঠপােষকতা দিয়ে যাচ্ছে। অনেক এনজিও প্রতিষ্ঠান তৃণমূল পর্যায়ের মেয়ে শিশুদেরকে শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় আনার চেষ্টা। চালিয়ে যাচ্ছে ।

বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট  নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা
বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট  নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

নারীর আত্মনির্ভরশীল শিক্ষাঃ আত্মমর্যাদাবােধ সম্পন্ন মানুষ মাত্রই আত্মনির্ভরশীল হতে চাইবে। নারী যদি তার আত্মসম্মানবােধকে অক্ষুন্ন রাখতে চায় তাহলে তার পক্ষে আতনির্ভরশীল হওয়া জরুরি। আর শিক্ষাই পারে একজন নারীকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করতে।নারী শিক্ষা গ্রহণ করে পুরুষের সমকক্ষতা প্রমাণ করতে পারে। নিজ যােগ্যতার প্রমাণ হতে পারলে তাকে অন্যের আধিপত্য স্বীকার করতে হয় না। নারীশিক্ষা গ্রহণ করে পুরুষের সমকক্ষতা প্রমাণ করতে on রেখেই সে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে। পরিবারে অর্থনৈতিক ভমিকা পালন ক আত্মনির্ভরশীলতায় শিক্ষা অন্যতম সহায়ক।

উপসংহার: জাতির অগ্রগতির জন্যে চাই স্বচ্ছন্দ গতি। আর এ গতি জাতির অর্ধেক নারীকে অচল বেখে সম হতে হবে পরষদের সহযাত্রী। তবেই সম্ভব হবে জাতীয় উন্নয়ন আর এর পূর্ব শর্তই হচ্ছে নারীশিক্ষার উন্নয়ন।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

ভূমিকা: মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ‘নারী’ হোক 'পুরুষ' হোক তাদের বড় পরিচয় হলো তারা মানুষ। নারীদের মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য, উৎকৃষ্ট মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। একটি আদর্শ জাতির জন্য আদর্শ মা প্রয়োজন, চিরন্তন এ সত্যকে অস্বীকার করলে চলবে না। মা যদি শিক্ষিত না হয়, তাহলে সন্তান শিক্ষিত হবে না। সন্তান শিক্ষিত না হলে স্বাভাবিকভাবেই জাতির ভবিষ্যৎ হয় অন্ধকার। নারীশিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। সভ্যতার চরম উৎকর্ষের বহুমাত্রিক সুযোগ-সুবিধার চূড়ান্ত ব্যবহার করতে হলে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম । নারীশিক্ষার অতীত ও বর্তমান: নারীশিক্ষার অতীত খুব সুখকর নয়। নানারকম সমস্যা অতীতে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে রাধাবিঘ্নের সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশশাসিত অবিভক্ত ভারতে উনিশ শতকের আগে নারীশিক্ষা ছিল অবহেলিত বিষয়। তারও আগে থেকেই অবশ্য এ অবহেলার শিকড় প্রোথিত হয় । নারীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল মূলত নিম্নলিখিত কারণে: ক. ধর্মীয় অনুশাসন;

খ. সংস্কার, কুসংস্কার;

গ. পুরুষশাসিত সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি;

ঘ. নারীদের অজ্ঞতা, ধর্মীয় ভীতি;

ঙ. সাংস্কৃতিক চেতনার অভাব;

চ. শিক্ষা সম্পর্কে নারীদের উদাসীনতা;

ছ. পরনির্ভরশীলতা ।

উপর্যুক্ত কারণগুলো পাকিস্তান আমলেও আমাদের দেশে বিরাজমান ছিল।

বর্তমান সময়ে নারীশিক্ষা আগের মতো দুর্দশার মধ্যে অবস্থান না করলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। এখনো আমাদের দেশে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমান হারে শিক্ষালাভ করতে পারছে না, অনেক অনেক পিছিয়ে আছে।

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এক সেমিনারে বলেছেন, 'নারীশিক্ষা একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান উপকরণসমূহের একটি।' নেপোলিয়ন বলেছেন, 'Let France have good mothers and she will have good sons'. নারীশিক্ষার প্রয়োজন যুগ যুগ ধরেই ছিল। বর্তমান সভ্যতার আলোকে নারীশিক্ষা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এমনকি ব্যক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে নারীশিক্ষার গুরুত্ব জড়িয়ে পড়েছে। দেশের লোকসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ অর্ধেক নারী যদি শিক্ষা গ্রহণ না করে, মনুষ্যত্বের গুণাবলি অর্জন না করে শিক্ষার মাধ্যমে, তাহলে এ দেশের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তা অনস্বীকার্য। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই শিক্ষিত নারীর প্রয়োজন। শিক্ষিত নারী তার সতীর্থ পুরুষকে নিজের শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে । দেশের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। নারীশিক্ষার অভাবে যেসব অসুবিধা হচ্ছে সেগুলো হলো:

  • আদর্শ পরিবার প্রত্যাশিতভাবে গড়ে উঠতে পারছে না;
  • শিক্ষিত সন্তানসন্ততি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমাজ বহুলাংশে পিছিয়ে থাকছে;
  • অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা কাটছে না; 
  • দাম্পত্য বোঝাপড়া স্বচ্ছ হচ্ছে না;
  • অশিক্ষিত নারী কর্মহীন বিবেচনায় দেশের বোঝা হয়ে আছে; নারীদের প্রকৃতিপ্রদত্ত গুণাগুণ বিকশিত হচ্ছে না;
  • সামাজিক অনাচার বাড়ছে। পারিবারিক কলহ বাড়ছে;
  • নারী তার নিজের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারছে না ।

উপর্যুক্ত পরিস্থিতি আমাদের দেশে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে তীব্র করে তুলেছে। নারীশিক্ষার অনগ্রসরতার কারণে দেশের সমাজব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব মারাত্মকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অভাবগুলোর প্রতিকার নারীশিক্ষার মাধ্যমেই করা সম্ভব বলে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো দ্বিধাই চলে না ।

নারীশিক্ষা সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ: নারীশিক্ষা বিস্তারে স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই যৎসামান্য। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও নিজেদের উদ্যোগে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। স্বাধীন দেশে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়ন ব্যবহারিক পর্যায়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নারীশিক্ষার চলমান কর্মফল থেকেই। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীদের আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এসব গৃহীত ব্যবস্থা নারীদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল । তবু একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নারীশিক্ষার যে অগ্রগতি হচ্ছে তার গন্তব্য নিশ্চয়ই অনেক দূর ।

নারীশিক্ষা বিস্তারে করণীয় বিষয়: নারীশিক্ষা বিস্তারে সরকার কর্তৃক আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বেসরকারি পর্যায়েও আরও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। সবার সমন্বিত উদ্যোগই কেবল নারীশিক্ষায় সফলতা এনে দিতে পারে। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য সরকার ও অন্যান্য মহলের লক্ষ রাখা দরকার।

  • নারীশিক্ষাকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচনা করতে হবে;
  • সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
  • গ্রাম ও শহর বিবেচনায় উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে; প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে;
  • একটি মনিটরিং সেল স্থাপন করে বৎসরান্তে নারীশিক্ষার অগ্রগতি মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে;
  • বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে হবে;
  • সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা রাখতে হবে;
  • কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে;
  • বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক . নিয়োগ করতে হবে;
  • নারীশিক্ষাকে উৎসাহ প্রদানের জন্য শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

উপসংহার: নারীশিক্ষা আমাদের মতো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই নারীকে অশিক্ষিত রেখে জাতীয় উন্নয়নের কথা কল্পনাই করা যায় না । নারীশিক্ষাকে অগ্রগণ্য কর্মসূচি দ্বারা বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে সুফল পাওয়া যাবে। আর তখনই দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা সংযুক্ত হয়ে তা দেশকে সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যাবে ।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

ভূমিকা: কোনো দেশ বা জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের দক্ষ মানবসম্পদের ওপর। একটি দেশের যেকোনো সম্পদের চেয়ে মানবসম্পদ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে মানবসম্পদের উন্নয়ন অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত জনবল । শিক্ষাই পারে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে ।

শিক্ষা: অন্ধকার থেকে আলোকিত হওয়ার মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা নিরক্ষর-অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিকে আলোর পথ দেখাতে পারে। হাতেকলমে বই পাঠের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন সম্ভব। সাধারণ অর্থে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষকে বলা হয় শিক্ষিত। আর তাঁরা গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে যা অর্জন করেন, তা-ই হলো শিক্ষা ।

মানবসম্পদ ও উন্নয়ন: কোনো দেশের মোট জনশক্তির দক্ষ জনশক্তিই হচ্ছে মানবসম্পদ। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কাজের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাই হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন। অদক্ষ লোক কোনো কাজই সুন্দর ও সুচারুরূপে করতে পারে না। মানুষ জন্মগতভাবে যে প্রতিভা অর্জন করে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা আরও বিকশিত হয়। মানবসম্পদের উন্নয়নের মূলকথা হলো মানবসমাজের সার্বিক উন্নয়ন সাধন ।

মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষিত, দক্ষ ও সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠী কোনো কাজে যতটা সাফল্য অর্জন করতে পারবে কোনো অশিক্ষিত, স্বাস্থ্যহীন, অদক্ষ জনগোষ্ঠীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। মানবসম্পদ উন্নয়নের অর্থই হচ্ছে সমাজ ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন। শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ না থাকলে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব নয়। দেশে অগণিত মানুষ থাকলেও সে মানবগোষ্ঠীকে সম্পদ বলা যাবে না যদি তারা শিক্ষিত, দক্ষ ও উন্নত না হয় ।

মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব: শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। প্রতিভার বিকাশ ঘটলেই মানুষ দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় শিক্ষার মাধ্যমে। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিষয়কে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। প্রকৃত মানব সম্পদ গড়ার লক্ষ্যে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে অশিক্ষা ঘোচে বটে তবে সকল ক্ষেত্রেই তাদের কর্মসংস্থান হয় না। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় ডিগ্রি নিয়ে যদি কাজ না পাওয়া যায় তবে সে নিজেই দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার সাথে জীবিকার সম্পর্ক না থাকলে সে দেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষাকে জীবনমুখী করতে পারলে মানবজাতিকে যথাযথ সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

আজকের বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে মানবকে সম্পদে পরিণত করা হয়েছে । আর তারা এজন্য বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে সর্বস্তরে চালু করেছে। একজন মানুষ তখনই সম্পদে পরিণত হয়, যখন সে পরিপূর্ণ সমৃদ্ধিতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বলা যায়— শিক্ষাব্যবস্থা যথাযথ নয়। বাস্তবতার সাথে শিক্ষার কোনো যোগসূত্র নেই। ফলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই  চলেছে । এক্ষেত্রে অবশ্য বর্তমানে সরকার কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভন্ন গুরুত্ব আরোপ করেছে। ফলে দেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। মানুষ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে নান সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেজন্য প্রয়োজনীয়তার সাথে সংগতি রেখে এ সকল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । যা মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সম্পদ ও শিক্ষা: একটি দেশের সমস্ত জনগোষ্ঠী সে দেশের সম্পদ। না কিন্তু সে জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অশিক্ষিত মানুষ ও জড় পদার্থের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। শিক্ষা মানুষকে সম্পদে পরিণত করে। অশিক্ষিত মানুষ তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারে না। পৃথিবীর যে সকল দেশ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে সে সকল দেশের সকল মানুষ শিক্ষিত। আর যেসকল দেশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে সে সকল দেশের মানুষ অশিক্ষিত ও নিরক্ষর। শিক্ষা মানুষের জ্ঞান ও উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেয়। কোনো একটি দেশে অনেক সম্পদ থাকলেও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কারণে সে সম্পদের সদ্ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তারা অশিক্ষার কারণে অন্যের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়। তাই মানুষকে দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । 

জাতীয় জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব: জাতীয় জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব সর্বোচ্চ। আমাদের দেশের বিদ্যমান নানা সমস্যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শিক্ষার অভাবই এ সকল সমস্যার জন্য দায়ী। তাছাড়া যে শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে তা বাস্তবের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সংগতিসম্পন্ন নয় । বাস্তবমুখী শিক্ষা নেই বলে জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের দেশে শিক্ষার সাথে কর্মের কোনো মিল নেই। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রচলন করে উন্নয়নের শীর্ষে আরোহণ করছে। শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই প্রকৃত সম্পদে পরিণত হয়েছে এবং দেশকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত জাপান কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ নব নব উদ্ভাবনের পথ উন্মোচন করছে। দেশের মানুষকে সম্পদে পরিণত করা হলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। জাতীয় জীবনে তার প্রয়োজন ওই সকল কারণেই অতীব জরুরি।

সভ্যতার অগ্রগতিতে শিক্ষা: শিক্ষা কোনো একটি জাতির উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক। মানুষ একসময় অরণ্যচারী ছিল। পাহাড়ের গুহায়, গাছের ডালে বাস করে মানুষ জীবন বাঁচিয়েছে। প্রকৃতি-প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে মানুষ নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। সেই অরণ্যচারী আদিম মানুষ যারা একসময় কাঁচা মাংস খেত, তারাই কালের পরিক্রমায় সভ্যতার পথে পাড়ি দিয়েছিল। তারা পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন সভ্যতার সৃষ্টি করেছে, যা আজ ইতিহাস হয়ে আছে। এসবের মূলে তাদের অধ্যবসায়ও অন্তর্গত ছিল, যে শিক্ষা তারা প্রকৃতির কাছ থেকে অর্জন করেছিল। শিক্ষা সমাজের ধারক ও বাহক। বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। যেকোনো প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাই পারিবারিক তথা সামাজিক জীবনেই যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

মানব সম্পদ উন্নয়ন ও বাংলাদেশ: বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। এ দেশের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেশের সমস্যার ধরন অনুযায়ী এ দেশের কারিগরি শিক্ষার এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে। দেশের মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই একটি জাতিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়। তা করতে পারলেই আমাদের বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশেরও সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

উপসংহার: দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের মোট জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করা অতীব জরুরি। এ ব্যাপারে সুচিন্তিত পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বিশেষ করে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে করে বিশাল জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করা যায়। তাহলে আমাদের দেশ অল্প সময়েই সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌছতে পারবে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশের নারী শিক্ষা রচনা ২০ পয়েন্ট | নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ