পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পরিবেশ দূষণ রচনা, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২০ পয়েন্ট, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২৫ পয়েন্ট জেনে নিবো। তোমরা যদি পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10 টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। 

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10

চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পরিবেশ দূষণ রচনা, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২০ পয়েন্ট, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২৫ পয়েন্ট  টি।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা: পৃথিবী নামক গ্রহটিকে যে আলাে-বাতাস-পানি-গাছপালা ঘিরে রয়েছে তাই তার প্রকৃতি। এ প্রকৃতির সবচেয়ে সুবিধাভােগী হলাে মানুষ। বলা হয়ে থাকে, মানুষ পরিবেশের সৃষ্টি। মানুষ তার প্রতিভা, পরিশ্রম আর দক্ষতা দিয়ে আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন অনুষঙ্গ।। অধিগত করেছে জীবন-বিকাশের নানা উপকরণ। তাই দিয়ে সে তার নিজের প্রয়ােজন ও রচি অনুযায়ী তৈরি করেছে তার পরিবেশ। এ পিরবেশের মধ্যেই তার বিকাশ, তার বিনাশের ইঙ্গিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের বিজয়গৌরবে মােহান্ধ মানুষ পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করেছে। চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে ক্ষতিকর সব আবর্জনা। তার ফল হয়েছে বিষময়। পরিবেশ দূষিত হয়েছে। আর দূষিত পরিবেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট। করছে। তাই গােটা জীবজগতের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন।

পিরবেশ দূষণের কারণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ-- জল-মাটি-বায়ুর ওপর পড়েছে। প্রচণ্ড চ৷৷হদার চাপ। শুরু হয়েছে বনসম্পদ বিনষ্টের অমিত উল্লাস। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিজগৎ। অক্সিজেনের প্রধান উৎস। গাছপালা। যে জায়গায় গাছপালা নেই, সে জায়গায় জনপ্রাণীও নেই। বর্তমানে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এসে পৌছেছে এক সংকটজনক অবস্থায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রমবর্ধমান হারে শক্তি উৎপাদনের চাহিদা। শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে নির্গত হয় মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ-দূষক। নানা উপজাত দ্রব্য। এতে বায়ু, জল, খাদ্যদ্রব্য মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এসব উপজাত দ্রব্যই নানাবিধ দুরারােগ্য ব্যাধির দ্রুত প্রসারণের কারণ। 

পরিবেশ দূষণের শ্রেণি: আমাদের পরিবেশ দূষণকারী অপদ্রব্যগুলাে মােটামুটি দু ভাগে বিভক্ত । ১. প্রাকৃতিক ও ২. কৃত্রিম । প্রাকৃতিক দূষণের মধ্যে রয়েছে। সীসা, পারদ, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনােক্সাইড ইত্যাদি। এর মধ্যে কতগুলাে আবার আমাদের মল-মূত্র ও শরীরের পচন থেকে উৎপন্ন। তার ওপর আছে কৃত্রিম-দৃষকের সমস্যা। কৃত্রিম-দৃষকের অন্তর্গত হলাে নানা কীটনাশক, গুঁড়াে সাবান, ওষুধপত্র ও প্রসাধন সামগ্রী, এমনকী। প্লাস্টিকও। এসব যৌগের কয়েকটি আমাদের পরিবেশে বহুদিন ধরে টিকে থাকে। রােদ, জল, বাতাস, জীবাণু এদের কোনাে ক্ষতিই করতে পারে না। এ ধরনের যৌগ নিয়েই পরিবেশ-বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা বেশি। কেননা কিছুদিন আগেও পৃথিবীর বুকে এ ধরনের যৌগের অস্তিত্ব ছিল না। 

বায়ু দূষণ ও নানা প্রতিক্রিয়া: দূষণের প্রকৃতি ও পদ্ধতির মধ্যেও রয়েছে বিভিন্নতা। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম সম্ভার হলাে বায়ু। সেই বায়ু দূষণ আজ সারা বিশ্বজুড়ে। মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষেও এ এক গুরুতর সমস্যা। স্কুল জাতীয় কার্বন কণা থেকে শুরু করে ভারী ধাতু, জটিল জৈব যৌগ নিউক্লীয় আবর্জনা, জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল, কয়লা ইত্যাদি পুড়িয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া ক্লোরােফ্লুরােমিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, রাসায়নিক ধোয়া ইত্যাদি সবই হলাে বায়ু দূষণকারী দ্রব্য। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ নিয়ত বাড়ছে। এর ফলে পৃথিবীতে তাপমাত্রা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। অকাল-বর্ষণ, খরা, ঝড়-ঝঞা, কুয়াশা এরই ফলশ্রুতি। এরকম আবহাওয়ায় চাষ-বাস হয় অনিশ্চিত। কুয়াশা আর তেল, কয়লা দহনের ফলে নির্গত গ্যাসের মিশ্রণে ধােয়াশার সৃষ্টি। এর ক্ষতিকারক ক্ষমতা মারাত্মক। মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ফসফস-ক্যান্সার এ জাতীয় দূষণের ফল । বিভিন্ন যানবাহনের নির্গত ধোয়া সূর্যের আলাের সংস্পর্শে এসে তৈরি করে আলােক রাসায়নিক ধোয়া। অক্সাইড ও হাইড্রো কার্বনের বিক্রিয়ায় আরও কিছু বায়ু দূষকের সৃষ্টি হয় । এ ছাড়া আরও এক ধরনের বায়ুদূষক আবহাওয়ায় ছড়িয়ে থাকে। ওগুলাে হলাে বাতাসে ভেসে বেড়ানাে জীবাণু। অ্যালার্জিজনিত রােগে ওইসব জীবাণুর ভূমিকা অনেক।

পানি দূষণ: পানি দূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। পথিবীর সমদ নদ-নদী, পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদির পানি নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। ভারী ধাতু, হ্যালােজেন নিষিক্ত হাইড্রোকার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড পেট্রোলিয়াম কত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ, সর্বোপরি সংলগ্ন শহরের নির্গমনালী বেয়ে। আসা দুষিত তরল আবর্জনা- এগুলােই পানি দূষণের প্রধান উপকরণ। তা ছাড়া পারিপাশ্বিক আবহাওয়ার এগুলােই পানি দূষণের প্রধান উপকরণ। তা ছাড়া পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনেও সমুদ্রের দূষণ হচ্ছে। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ ঘন বসতিপূর্ণ জনপদ, শহর। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক চটকল, কাপড় কল, কয়লা ধােলাই কল, চিনি কল, কাগজের কল, ভেষজ তেল তৈরির কারখানা, চামড়া পাকা করার কারখানা ইত্যাদি। এসব কল-কারখানার আবর্জনা প্রতিনিয়ত নদ-নদীকে দূষিত করছে। পুকুর, খাল-বিল দূষণের জন্যে নালা-নর্দমা, ঘর-বাডির আবর্জনা ইত্যাদি দায়ী। এর থেকেই দূষিত হয় মাটি, দূষিত হয় পানীয়জল । সমুদ্র, নদী, খাল-বিল, পুকুরের মাছেও নানারূপ দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্তার লাভ করছে নানারকমের সংক্রামক রােগ। মাঝে মাঝে তা মহামারির আকার ধারণ। করে। মূত্য এসে ছিনিয়ে নিয়ে যায় কত জীবন। এমনি করেই দিনের পর দিন জনস্বাস্থ্য বিনষ্ট হচ্ছে। 

শব্দ দূষণ: শব্দ দূষণ এ যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শহরে শব্দ দূষণের মাত্রা সর্বাধিক । প্রতিনিয়তই এখানে মােটর গাড়ির হর্ন, কল-কারখানার বিকট আওয়াজ, বাজি-পটকার শব্দ, রেডিও-টেলিভিশনের শব্দ, লােকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি, উৎসবের মত্ততা, মাইকে চড়া সুর, সব মিলে-মিশে অপস্বর সৃষ্টির এক মহাযজ্ঞ চলছে। শব্দ দূষণের পরিণাম ভয়াবহ। এর ফলে মানুষের শ্রবণ-ক্ষমতার বিলােপ ঘটে। মানসিক বিপর্যয় দেখা যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনিদ্রা রােগের উদ্ভব হয়। হস্পন্দন বৃদ্ধি ও স্নায়বিক অস্থিরতাও শব্দ দূষণের পরিণাম। শব্দের ২০ থেকে ৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত মাত্রা হলাে স্বাভাবিক। ঢাকায় এখন শব্দের পরিমাণ ৬০ থেকে ৬৫ ডেসিবেল, কোথাও কোথাও ৮০ ডেসিবেল। 

তেজস্ক্রিয় দূষণ: আয়নকারী বিকিরণ শক্তির এক ক্ষমতাশালী উৎস। সায়ানাইড বা অন্যান্য বিকারকের তুলনায় এর তাপশক্তি দশ কোটি গুণ তীব্র ।। পারমাণবিক যুদ্ধ, পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে তেজস্ক্রিয় দূষণের বিপদ সবচেয়ে বেশি নিহিত। ১৯৬৩-তে একটি মার্কিন নিউক্লীয় সাবমেরিন আটলান্টিক সাগরে হারিয়ে যায়। তা থেকে প্রচুর পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে। নিউক্লীয় জ্বালানি উৎপাদনকেন্দ্রের আবর্জনা তার ক্ষতিকারক ক্ষমতা নিয়ে ৬০০ বছর টিকে থাকতে পারে। প্লুটোনিয়ামের অর্থ আয় ২৪.৩৬০ বছর এবং তার ক্ষতি করার ক্ষমতা ওই অর্ধ আয়ুর কয়েক গুণ সময় পর্যন্ত বজায় থাকে।

দূষণের প্রতিকার: দূষণের ভয়াবহ পরিণামের কথা ভেবে বিশ্বের সভ্যমানুষ আজ আতঙ্কিত। কী উপায়ে এ ভয়ংকর সমস্যার মােকাবেলা সম্ভব তা । নিয়ে ভাবনা, পরিকল্পনার শেষ নেই। বায়ু দূষণের প্রতিকারের জন্যে গ্রহণ করা হয়েছে কল-কারখানার দহন-প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত দূষকের পরিমাণ কমানাের ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট এলাকায় যাতে দূষণের প্রভাব ঘনীভূত না হয় তার জন্যে দূষকগুলােকে আরও বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, দহনে উৎপন্ন গ্যাসে অতিরিক্ত কোনাে পদার্থ মিশিয়ে দেওয়ার, যাতে নির্গত হওয়ার আগেই কোনাে কোনাে দূষক অপসারিত হতে পারে। তাছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে বৃক্ষরােপণ পরিকল্পনা। দূষণ-প্রতিরােধী উদ্ভিদের সংখ্যা বাড়ানাে খুবই জরুরি। সমুদ্র দূষণের প্রতিকারের জন্যে। প্রয়ােজন বিভিন্ন উপদ্বীপ ও উপকূল অঞলে সমুদ্র দূষণের পরিমাণ নিয়মিত পরিমাপ করা, প্রয়ােজন সেসব এলাকায় দূষণ-বিরােধী বিধি-নিষেধ | কার্যকর করা। দূষিত পানিকে পানযােগ্য করে তুলতে হলে উপযুক্ত পরিস্রাবণ দরকার। শব্দ দূষণের কুপ্রভাব কমানাের প্রধান উপায় হলাে, কানে। তুলাে ব্যবহার কিংবা শব্দ-বিরােধী কক্ষের ব্যবহার । প্রযুক্তিবিদ্যার সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে এমন কতকগুলাে পদ্ধতির উদ্ভাবুন হয়েছে, যাতে পরমাণু। চুল্লীর আবর্জনা-নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে হয়তাে নিউক্লীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপজাত দ্রব্যে কোনাে তেজস্ক্রিয়তা থাকবে না।

উপসংহার: পরিবেশ দূষণ সমস্যা নিয়ে আজ সকল দেশই চিন্তিত। মানবসভ্যতার অস্তিত্বই আজ সংকটের মুখােমুখি এসে দাড়িয়েছে। তাই ১৯৭২ সালে মানুষের পরিবেশ নিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধিবেশন হয় স্টকহােম-এ। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওডি জেনিরােতে অনুষ্ঠিত হয় বারাে দিনব্যাপী ধরিত্রী সম্মেলন । আমাদের দেশেও প্রতিবছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসরূপে পালিত হচ্ছে। ২০০১ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন। ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলন ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর ২০১৪ সালে পেরুর লিমায় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আজ পরিবেশ দূষণ মানবসভ্যতার এক ভয়ংকর বিপদ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তােলার লক্ষ্যে যে কোনাে মূল্যে পরিবেশ দূষণ রােধ করার প্রয়ােজন অনস্বীকার্য ! সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই

‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। 
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ পীঠে।
চলে যেতে হবে আমাদের। 
চলে যাব তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল 
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে যাবাে আমি 
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা: মানুষের চারপাশে যা আছে তাই নিয়ে তার পরিবেশ। এ পরিবেশ আবার দুই প্রকার— প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবসৃষ্ট পরিবেশ। সভ্যতার বিবর্তনের ফলে মানুষ একে একে গড়ে তুলেছে নিজেদের পরিবেশ।। বিজ্ঞান প্রযুক্তি আয়ত্ত করার ফলে মানুষ অনেকাংশেই হয়ে উঠেছে পরিবেশের নিয়ন্ত্রক আর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে মানুষ পরিবেশকে নিজের স্বার্থে ধ্বংসও করছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য । 

পরিবেশ দূষণের কারণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ জল-মাটি-বায়ুর ওপর পড়েছে প্রচণ্ড চাহিদার চাপ। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিজগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এসে পৌঁছেছে এক সংকটজনক অবস্থায়। শক্তি উৎপাদনের সাথে সাথে নির্গত হয় মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ-দূষক নানা রাসায়নিক পদার্থ। রাসায়নিক দ্রব্যই নানা দুরারোগ্য ব্যাধির দ্রুত প্রসারণের কারণ। এতে বায়ু, জল, খাদ্যদ্রব্য মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের ধরন: আমাদের পরিবেশ দূষণকারী অপদ্রব্যগুলো মোটামুটি দুই ভাগে বিভক্ত। এক প্রাকৃতিক, দুই কৃত্রিম । প্রাকৃতিক দূষণের মধ্যে রয়েছে সিসা, পারদ, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি। কৃত্রিম-দূষকের অন্তর্গত হলো নানা কীটনাশক, গুঁড়ো সাবান, ঔষধপত্র ও প্রসাধনসামগ্রী, এমনকি প্লাস্টিকও। এসব যৌগের কয়েকটি আমাদের পরিবেশে বহুদিন ধরে টিকে থাকে। রোদ, জল, বাতাস, জীবাণু এর কোনো ক্ষতিই করতে পারে না। এ ধরনের যৌগ নিয়েই পরিবেশ-বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা বেশি। কেননা, কিছুদিন আগেও পৃথিবীর বুকে এ ধরনের যৌগের অস্তিত্ব ছিল না।

বায়ুদূষণ: আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম সম্ভার হলো বায়ু। সেই বায়ুদূষণ আজ সারা বিশ্বজুড়ে। ঝুলজাতীয় কার্বন কণা থেকে শুরু করে ভারী ধাতু, জটিল জৈব যৌগ, নিউক্লীয় আবর্জনা, জীবাশ্ম জ্বালানি, অর্থাৎ তেল- কয়লা ইত্যাদি পুড়িয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া ক্লোরোফ্লোরোমিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, আলোক রাসায়নিক ধোঁয়াশা ইত্যাদি সবই হলো বায়ুদূষণের প্রধান উপকরণ। বাতাসে কার্বন ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ নিয়ত বাড়ছে। এর ফলে আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অকাল-বর্ষণ, ঝড়ঝঞ্ঝা, কুয়াশা এরই পরিণতি। এ রকম আবহাওয়ায় চাষ বাস হয় অনিশ্চিত। কুয়াশা আর তেল-কয়লা দহনের ফলে নির্গত গ্যাসের মিশ্রণে ধোঁয়াশার সৃষ্টি। মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসার এ জাতীয় দূষণের ফল ।

পানি দূষণ: পানিদূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। পৃথিবীর সমুদ্র, নদনদী, পুকুর, খালবিল ইত্যাদির পানি নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। ভারী ধাতু, হ্যালোজেন নিষিক্ত হাইড্রোকার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, পেট্রোলিয়াম, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় উপাদান, সর্বোপরি সংলগ্ন শহরের নির্গমন নালি বেয়ে আসা দূষিত তরল আবর্জনা— এগুলোই হলো সমুদ্র দূষণের প্রধান উপকরণ। তাছাড়া নদীর তীরে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ জনপদ, শহর । প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক চটকল, কাপড় কল, কয়লা ধোলাই কল, চিনি কল, কাগজের কল, ভেষজ তেল তৈরির কারখানা, চামড়া পাকা করার কারখানা ইত্যাদি। এসব কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ প্রতিনিয়ত নদনদীকে দূষিত করছে। পুকুর, খালবিল দূষণের জন্য নালা-নর্দমা, ঘরবাড়ির আবর্জনা ইত্যাদি দায়ী। এর থেকেই দূষিত হয় মাটি, দূষিত হয়। পানীয়জল । সমুদ্র, নদী, খালবিল, পুকুরের মাছেও নানারূপ দূষণ ঘটছে। ছড়িয়ে পড়ছে নানারকমের সংক্রামক রোগ। মাঝে মাঝে তা মহামারি আকার ধারণ করে। মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে যায় অসংখ্য জীবন। এমন করেই দিনের পর দিন জনস্বাস্থ্য বিনষ্ট হচ্ছে।

শব্দদূষণ: শব্দদূষণ এ যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শহরে শব্দদূষণের মাত্রা সর্বাধিক। প্রতিনিয়তই এখানে মোটরগাড়ির হর্ন, কলকারখানার বিকট আওয়াজ, বাজিপটকার শব্দ, রেডিও, টেলিভিশনের শব্দ, লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি, উৎসবের মত্ততা, মাইকে চড়া সুর, সব মিলেমিশে শব্দদূষণ সৃষ্টির মহাযজ্ঞ চলছে। শব্দদূষণের পরিণাম ভয়াবহ। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণ-ক্ষমতার বিলোপ ঘটে। মানসিক বিপর্যয় দেখা যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনিদ্রা রোগের শিকার হয় মানুষ। শব্দের ২০ থেকে ৪০ ডেসিবল পর্যন্ত মাত্রা হলো স্বাভাবিক।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দূষণ: বাংলাদেশের পরিবেশ নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ দুটি। যথা— ক. প্রাকৃতিক কারণ এবং খ. মানবসৃষ্ট কারণ।

ক. প্রাকৃতিক কারণ: বাংলাদেশ কর্কটক্রান্তি রেখায় অবস্থিত একটি দেশ। অতিবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নোডো, সাইক্লোন ইত্যাদি নানারকমের দুর্যোগ এ দেশের নিত্যসঙ্গী। নিম্নে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কিছু কারণ দেওয়া হলো-

ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা: উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রায়ই দেখা যায় বন্যা। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়। বন্যার পানিতে ভেসে আসা মৃত জীবজন্তু লোকালয়ের পরিবেশে দূষণ করে। এগুলোর গলিতাংশ পানিতে মিশে পানি দূষণ করে । বন্যা পরবর্তী সময়েও এ দূষণ ক্রিয়াশীল থাকে। কারণ খালবিল, ডোবা-নালায় বন্যার পানি আটকে থাকায় দূষিত পানি অনেকদিন থেকে যায়। ফলে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব পরে। এছাড়া ঝড়ের সময় পশুপাখি ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে থাকে। এসব মৃত প্রাণী পরিবেশ দূষণ করে ।

জলাবদ্ধতা: অতিবৃষ্টির কারণে বাংলাদেশে বিশেষত শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বদ্ধ পানিতে প্রাণীর মৃতদেহ এবং ড্রেন থেকে আসা ময়লা-আবর্জনা পরিবেশ দূষণ করে। পানি স্থির থাকে বলে এসব বর্জ্য শহরের রাস্তাঘাট বা অলিগলিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়। এছাড়া দূষিত পানির মাধ্যমে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে ।

খ. মানবসৃষ্ট কারণ: পরিবেশ দূষণে প্রাকৃতিক কারণের চেয়ে মানবসৃষ্ট কারণই বেশি দায়ী। পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো—

কলকারখানা: গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ হচ্ছে। শিল্পায়নের ফলে গড়ে ওঠা কলকারখানা পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ। কলকারখানায় ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি এবং রাসায়নিক পদার্থ বায়ু- পানি-মাটির সাথে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে। কারখানার বর্জ্য- ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায় না ঘটায় কারখানার বর্জ্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন: কলকারখানা ও বসতবাড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কয়লাভিত্তিক বা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ-উৎপাদন কেন্দ্রগুলো প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন করে। এসব গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশে বায়ুমণ্ডলের ক্ষতি করে। এছাড়া কয়লা উত্তোলনে বাংলাদেশ ‘উন্মুক্ত পদ্ধতি' ব্যবহার করে, যা পরিবেশের অন্যতম উপাদান মাটির ক্ষয় সাধন করে। এর ফলে প্রায়ই ভূমিধস দেখা যায়। 

কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার: বাংলাদেশে কৃষির আধুনিকায়ন অনেকটা রাসায়নিক সারের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে। এই রাসায়নিক সার পানি ও মাটি দূষণের অন্যতম কারণ। মিথেন গ্যাস বা নাইট্রোজেন ব্যবহার করে সার উৎপাদন করার এসব গ্যাস পানি ও মাটিতে মিশে পরিবেশ দূষণ করে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হয় ।

যানবাহনের কালো ধোঁয়া: যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাংলাদেশের বিশেষত শহরাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ করে চলছে। ডিজেল চালিত যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন-মনো অক্সাইড (CO) শহরের বাতাস অত্যধিক। এর সাথে কালো ধোঁয়ার কারণে বাতাসে সিসার মতো ক্ষতিকর পদার্থ মিশে যাচ্ছে। এছাড়া হর্ন বাজানোর নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় শব্দ দূষণ হচ্ছে।

ইটভাটা: বাংলাদেশে ইটভাটা তৈরির নীতিমালা থাকলেও তা অনুসরণ করা হয় না। যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটা পরিবেশের ক্ষতি করছে। ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করে। আবার ইটভাটায় জালানি কাঠ পোড়ানোর ফলে নাইট্রোজেন গ্যাস বাতাসে মিশে যাচ্ছে । ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ।

দূষণের প্রতিকার: দূষণের ভয়াবহ পরিণামের কথা ভেবে বিশ্বের সভ্য মানুষ আজ আতঙ্কিত। কী উপায়ে এ ভয়ংকর সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব তা নিয়ে ভাবনা-পরিকল্পনার শেষ নেই। বায়ুদূষণের প্রতিকারের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে কলকারখানার দহন-প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত দূষকের পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থা। চেষ্টা চলছে নির্দিষ্ট এলাকায় যাতে দূষণের প্রভাব ঘনীভূত না হয় তার জন্য দূষকগুলোকে আরও বড় এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার। চেষ্টা চলছে দহনে উৎপন্ন গ্যাসে অতিরিক্ত কোনো পদার্থ মিশিয়ে দেওয়ার, যাতে নির্গত হওয়ার আগেই কোনো কোনো দূষক অপসারিত হতে পারে । তাছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা। দূষণ-প্রতিরোধী উদ্ভিদের ব্যবহার খুবই জরুরি। সমুদ্রদূষণের প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন উপদ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্র দূষণের পরিমাণ নিয়মিত পরিমাপ করা, শব্দদূষণের কুপ্রভাব কমানোর প্রধান উপায় হলো শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তোলা। প্রযুক্তিবিদ্যার সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে এমন কতকগুলো পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে, যাতে পরমাণু চুল্লির আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। এর ফলে নিউক্লীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশে কোনো তেজস্ক্রিয় থাকবে না ।

উপসংহার: পরিবেশ দূষণ সমস্যা নিয়ে আজ সকল দেশই চিন্তিত। মানবসভ্যতার অস্তিত্বই আজ সংকটের মুখোমুখি। ১৯৭২ সালে ‘মানুষের পরিবেশ' নিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধিবেশন হয় স্টকহোমে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বারো দিনব্যাপী ধরিত্রী সম্মেলন । আমেরিকা, রাশিয়া, সুইডেন, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য বহুদেশে জাতীয় স্তরে গঠিত হয়েছে পরিবেশ সংস্থা। বাংলাদেশের সংবিধানেও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এখানেও প্রতিবছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসরূপে পালিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেকোনো মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 6, 7, 8, 9, 10  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ