bangla data

রচনা: বিশ্বকোষ রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বিশ্বকোষ রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি বিশ্বকোষ রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বিশ্বকোষ রচনা  টি।

রচনা বিশ্বকোষ রচনা
রচনা বিশ্বকোষ রচনা

রচনা: বিশ্বকোষ রচনা

ভূমিকাঃ বিশ্বকোষ হলাে কোনাে গ্রন্থ বা গ্রন্থমালা, যেখানে জ্ঞানের সকল শাখার নানাবিধ বিষয়ে লেখা সংকলিত থাকে। লেখাগুলাে নিবন্ধ আকারে সংশ্লিষ্ট ভাষার বর্ণানুক্রমে কিংবা বিষয় অনুযায়ী সজ্জিত থাকে। পৃথিবীর সকল জ্ঞানশাখা বা শৃঙ্খলার বিষয়াবলি এতে স্থান পায়। তবে এমন বিশ্বকোষও রয়েছে যাতে একটি নির্দিষ্ট জ্ঞানশাখার বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত নিবন্ধ সজ্জিত থাকে। যেমন - আইনকোষ, অর্থনীতিকোষ ইত্যাদি। বাংলায় বিশ্বকোষ শব্দটি ইংরেজি এনসাইক্লোপিডিয়া’ শব্দের প্রতিশব্দ। একটি বিশ্বকোষ সংকলনে যুক্ত থাকেন নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণ। তাঁদের রচিত নিবন্ধগুলাে তাই বিশ্বন্ত ও নির্ভরযােগ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। বিশ্বকোষে সংকলিত নিবন্ধগুলাে সংক্ষিপ্ত হলেও সেগুলাে একেকটি বিষয়ের উপর গভীর ধারণা দেয়। বর্তমানে বিশ্বকোষের মুদ্রিত রূপ ছাড়াও কম্পিউটারে ব্যবহারযােগ্য রূপও পাওয়া যায়।

বিশ্বকোষের বৈশিষ্ট্য: প্রতিটি বিশ্বকোষের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বকোষে অন্তর্ভুক্ত ভুক্তিগুলাে সুবিন্যস্ত হতে হয়, যাতে পাঠক দ্রুত এবং অল্প আয়াসে কোনাে বিষয়ের তথ্য খুঁজে পায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন বিষয় সন্নিবেশের কারণে এটি আয়তনে বৃহৎ হয়ে থাকে। কখনাে অনেকগুলাে খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এটি কোষগ্রন্থসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। তৃতীয়ত, বিশ্বকোষের তথ্যাদিকে নির্ভরযােগ্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কারণ, নির্ভরযােগ্যতা বিশ্বকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। চতুর্থত, পরিবর্তিত তথ্যের আলােকে বিশ্বকোষকে নিয়মিত হালনাগাদ করতে হয়। তাই বিশ্বকোষের কাজকে কখনাে সমাপ্ত বলে ভাবা যায় না।

বিশ্বকোষের প্রকারভেদঃ বেশ কয়েক রকমের বিশ্বকোষ দেখা যায়। বিষয়ের ব্যাপকতার ভিত্তিতে বিশ্বকোষ দুই ধরনেরঃ ১. সাধারণ বিশ্বকোষ। ২. বিষয়ভিত্তিক বিশ্বকোষ। প্রকাশের মাধ্যম বিবেচনায় বিশ্বকোষ দুই ধরনেরঃ ১, মুদ্রিত ও ২. ডিজিটাল। প্রতিষ্ঠানের অধীনে নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ছাড়াও এক ধরনের বিশ্বকোষ রয়েছে যা স্বেচ্ছাসেবী লেখকরা সংকলন করেন। নিচে কয়েক ধরনের বিশ্বকোষ সম্পর্কে আলােচনা করা হলোঃ

ক, সাধারণ বিশ্বকোষঃ এ ধরনের বিশ্বকোষে বিষয়ের ব্যাপকতা দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণ এই বিশ্বকোষের ভুক্তিতে কাজ করেন। তাঁদের লেখা নাতিদীর্ঘ নিবন্ধের মাধ্যমে একেকটি বিষয়ের আলােচনা বা তথ্য তুলে ধরা হয়। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এ ধরনের বিশ্বকোষ। 

খ. বিষয়ভিত্তিক বিশ্বকোষ: কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ে সাধারণ বিশ্বকোষে প্রদত্ত বর্ণনা ছাড়াও আরাে গভীর ধারণা পেতে বিষয়ভিত্তিক বিশ্বকোষ ব্যবহার করতে হয়। বিষয়ভিত্তিক বিশ্বকোষগুলাে। কেবল ওই বিষয়সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকে। আইনকোষ’, ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিঙ্গুইস্টিকস' এ ধরনের বিশ্বকোষ। 

গ, বৈদ্যুতিন বিশ্বকোষ বা ডিজিটাল বিশ্বকোষ: প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে অনেকেই মুদ্রিত। বিশ্বকোষের পরিবর্তে কম্পিউটার বা মুঠোফোনে বিশ্বকোষ ব্যবহার করছে। এগুলােকে বৈদ্যুতিন বা ডিজিটাল বিশ্বকোষ বলা হয়। এ ধরনের বিশ্বকোষ হালনাগাদ রাখা সহজ। 

ঘ. ঘেচ্ছাসেবী লেখকদের বিশ্বকোষ: ইনটারনেটে কিছু বিশ্বকোষ রয়েছে যা স্বেচ্ছাশ্রমে সংকলিত হয়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে স্বেচ্ছাসেবী লেখকগণ অনলাইনে বিশ্বকোষকে সমৃদ্ধ করেন। “উইকিপিডিয়া এ ধরনের বিশ্বকোষ।

বিশ্বকোষের ভুক্তি: বিশ্বকোষে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এগুলােকে বলা হয় ভুক্তি।

অভিধানের চেয়ে বিশ্বকোষের ভুক্তি আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণ অভিধানে একটি শব্দের ব্যুৎপত্তি, উচ্চারণ, সংজ্ঞা, বাক্যে প্রয়ােগ ইত্যাদি থাকে। কিন্তু বিশ্বকোষের ভূক্তিগুলাে হয় দীর্ঘ। বর্ণনা এবং ভাবগত বিবেচনায় এর ব্যাপ্তি অভিধানের চেয়ে বেশি। বিষয়ের শিরোনাম সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে রচিত নিবন্ধই বিশ্বকোষের ভূক্তি। | ভুক্তির মধ্যে প্রয়ােজন অনুযায়ী মানচিত্র, সারণি, ছবি, পরিসংখ্যান কিংবা গ্রন্থপঞ্জিও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। অধিকাংশ বিশ্বকোষে ভুক্তি রচয়িতার নাম ভুক্তির নিচে সংযুক্ত থাকে।

ভুক্তির মধ্যে কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছ আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। এর অর্থ, এই শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে | আলাদা ভুক্তি রয়েছে। পাঠক প্রয়ােজনে সেসব ভুক্তি পাঠ করে নির্দিষ্ট বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে পারেন।

অনলাইন বিশ্বকোষেঃ এগুলাে আলাদা রঙের হয় এবং তাতে ক্লিক করলে সেই বিষয়ের আলােচনা সামনে চলে আসে।

পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু বিশ্বকোষ: প্রায় দুই হাজার বছর ধরে বিশ্বকোষের চর্চা হচ্ছে। তবে আঠারাে শতকের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকজন ফরাসি পণ্ডিত Encyclopedia নামে গ্রন্থমালা প্রকাশ করেন। পৃথিবীময় যে জ্ঞান রয়েছে তা সংগ্রহ ও সুবিন্যস্ত করে সমকালীন পাঠক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌছে দেওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল। এর পর ১৭৬৮-১৭৭১ সালে ইংরেজি বিশ্বকোষ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা' প্রকাশিত হয়। এটি এখন। ৩২ খণ্ডের মুদ্রিত বইয়ে এবং অনলাইনে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। এছাড়া 'এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা', 'কলিয়ার্স এনসাইক্লোপিডিয়া’, ‘চেম্বার্স এনসাইক্লোপিডিয়া", “এভরিম্যানস এনসাইক্লোপিডিয়া ইত্যাদি বিশ্বকোষ অনুসন্ধানী পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।

বাংলা ভাষায় রচিত বিশ্বকোষ: বাংলা ভাষায় জ্ঞানকোষ রচনার প্রথম পদক্ষেপ নেন উইলিয়াম কেরির পুত্র ফেলিক্স কেরি। তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা' অবলম্বনে বিদ্যাহারাবলী’ নামক জ্ঞানকোষ রচনার কাজ শুরু করেন। তবে বাংলা ভাষায় যথার্থ বিশ্বকোষ হলাে নগেন্দ্রনাথ বসু সংকলিত “বিশ্বকোষ'। এর প্রথম খণ্ড সংকলন করেন রঙ্গলাল মুখােপাধ্যায় ও ত্রৈলােক্যনাথ মুখােপাধ্যায়। দ্বিতীয় খণ্ড থেকে ২২তম খণ্ড পর্যন্ত সংকলন করেন নগেন্দ্রনাথ বসু। এই বিশ্বকোষের কাজ শুরু হয় ১৮৮৬ সালে এবং শেষ হয় ১৯১১ সালে। এছাড়া ভারতকোষ বাংলা ভাষায় সংকলিত আরেকটি উল্লেখযােগ্য বিশ্বকোষ। এটি ১৮৮১ থেকে ১৮৯২ সালের মধ্যে রাজকৃষ্ণ রায় ও শরচ্চন্দ্র দেব কর্তৃক সংকলিত হয়। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বিশ্বকোষ-জাতীয় গ্রন্থসমূহের মধ্যে বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান বিশ্বকোষ'-এর নাম উল্লেখযোগ্য। আয়তন, ভুক্তিসমূহের বিন্যাস ও ব্যবহারযোগ্যতার বিবেচনায় এটি একটি সফল প্রয়াস বলা যায়। নওরােজ কিতাবিস্তান ও মুক্তধারা প্রকাশিত চার খণ্ডে সংকলিত বাংলা বিশ্বকোষ' (১৯৭২ থেকে ১৯৭৪) একটি সুপরিকল্পিত বিশ্বকোষ, যদিও এটি কলাম্বিয়া ভাইকিং ডেঙ্ক এনসাইক্লোপিডিয়া অবলম্বনে রচিত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরাে কিছু বাংলা কোষগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তবে এশিয়াটিক সােসাইটি প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া বাংলাদেশে বিশ্বকোষ চর্চায় এ যাবষ্কালের শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ। বাংলাপিডিয়া বর্তমানে ১৪ খণ্ডে পাওয়া যায়। এর কম্পিউটারে ব্যবহারের সংস্করণ এবং অনলাইন সংস্করণও রয়েছে।

উপসংহার: বিশ্বের সব শৃঙ্খলার ধারণাসমূহ কোনাে ব্যক্তির একার পক্ষে ধারণ করা সম্ভব নয়। এমনকি একটি নির্দিষ্ট জ্ঞানশাখার সব বিষয়ও কারাে একার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে এক জায়গায় বিন্যস্ত করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া বিশ্বকোষের প্রধান লক্ষ্য। কোগ্রন্থসমূহের মধ্যে বিশ্বকোষ শুধু আয়তনেই বড়াে নয়, জ্ঞানচর্চার এক বিপুল ভান্ডারও বটে। তাই প্রতিটি ভাষায় বিশ্বকোষ থাকা জরুরি।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বিশ্বকোষ রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বিশ্বকোষ রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই বিশ্বকোষ রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ