বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা ১৫, ২০, ৩০ পয়েন্ট

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকার রচনা  টি।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ 
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা ১৫, ২০, ৩০ পয়েন্ট

ভূমিকাঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে এমন কিছু দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়কে বােঝায়, যা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে এবং যার পিছনে মানুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে না। ভৌগােলিক অবস্থানের কারণেই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রতি বছর এখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, যার মধ্যে আছে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, ভূমিধস, ভূমিকম্প ইত্যাদি। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে একে একে আলােচনা করা হচ্ছে।

বন্যা: বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলােতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং ফসলের ক্ষতি হয়। বন্যার ফলে জনপদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নষ্ট হয়। বহু গৃহপালিত পশু প্রাণ হারায়। ১৯৫৫ ও ১৯৬৪ সালের বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭০ ও ১৯৭৪ সালের বন্যার বিভীষিকাও মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। ১৯৮৮ সালের বন্যা রাজধানী ঢাকাসহ পুরাে দেশের মানুষকে বন্দী করে দেয়। ১৯৯৮ সালের বন্যাও দীর্ঘস্থায়ী ছিল। এ সময়ে অপরিবর্তিত অবস্থায় পাঁচ মাস পানিবন্দী জীবন যাপন করেছে লক্ষ লক্ষ দুর্গত মানুষ। ২০০১, ২০০২ ও ২০০৭ সালের বন্যাতেও মানুষ, গবাদিপশু ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাস: বছরের এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে বাংলাদেশে ছােটো-বড়াে নানা ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতা থাকে খুব বেশি। এর ফলে কখনাে কখনাে সমুদ্রে জলােচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এ-ধরনের দুর্যোগ প্রায় প্রতিবছরই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নােয়াখালী, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি উপকূলবর্তী এলাকায় ও দ্বীপসমূহে আঘাত হানে। এর নিষ্ঠুর আঘাতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আশ্রয়হীন হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিপন্ন হয় মানুষ, নিসর্গ, ও জীববৈচিত্র্য; বিপর্যন্ত হয় লােকালয়। মানুষ পতিত হয় অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশায়। লবণাক্ততার জন্য প্লাবিত এলাকার ভূমি চাষের অযােগ্য হয়ে পড়ে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে কৃষি-উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ১৯৭০ সালে মেঘনা মােহনায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাসে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাসে দেড় লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর'। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা' ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুন্দরবন এই দুই ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরেও অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়।

খরা: দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অনাবৃষ্টি এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ফসলের ক্ষেত, এমনকি গাছপালাও পানির অভাবে শুকিয়ে যায়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার পরে রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগের কিছু অঞ্চলে খরাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনাে উত্তরাঞ্চলের বহু জেলায় খরা পরিস্থিতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তােলে। অত্যধিক তাপদাহে নানা রােগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানুষের ও পশুপাখির কষ্ট হয়।

নদী-ভাঙন: নদীমাতৃক বাংলাদেশের বুকে ছােটো-বড়াে বহু নদী প্রবহমান। নদীর ধর্মই হলাে এক কূল ভাঙা আর অন্য কুল গড়া। নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলায় এ দেশের কত মানুষকে যে বাস্তুচ্যুত হতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। নদীর তীরে বাস-করা মানুষের ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই দুর্যোগের কবলে পড়ে মানুষ উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করে এবং কিছু কালের জন্য হলেও হয়ে পড়ে ঠিকানাবিহীন।

ভূমিধস ও ভূমিক্ষয়: ভূমিধস বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা পাহাড়ি এলাকায় সংঘটিত হয়। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সিলেট প্রভৃতি পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের গায়ে অপরিকল্পিতভাবে গৃহ নির্মাণের কারণে ভূমিধসে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রবল বায়ুপ্রবাহ, অধিক বৃষ্টিপাত, নির্বিচারে পাহাড় কাটা ভূমিধসের মূল কারণ। এই ধরনের আর একটি দুর্যোগের নাম ভূমিক্ষয়। ভূমিক্ষয়ের কারণে প্রত্যক্ষভাবে মানুষের ক্ষতি হয় না বটে, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের ক্ষতির কারণ হয়। ভূমিক্ষয়ের মূল কারণ অপরিকল্পিতভাবে বনের গাছ কেটে ফেলা। মাটিকে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচায় গাছ; এই গাছ কেটে ফেলার ফলে প্রবল বর্ষণে মাটির উপরের স্তর ক্ষয়ে যায়। এতে ভূমির উচ্চতাই শুধু কমে, তাই নয়, জমির উর্বরতাও নষ্ট হয়।

ভূমিকম্প: অন্যান্য দুর্যোগের মতাে ভূমিকম্পও বাংলাদেশে মাঝে মাঝে আঘাত হানে। ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে। তাতে যােগাযােগ ব্যবস্থার অবনতি ঘটে। গত একশাে বছরে বাংলাদেশে মারাত্মক কোনাে ভূমিকম্প হয়নি। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে যে কোনাে সাধারণ ভূমিকম্পেও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড়াে বড়াে শহর মারাত্মক ক্ষতির মুখােমুখি হতে পারে।

দুর্যোগ মােকাবেলা ও প্রতিকারঃ দুর্যোগ মােকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার সব সময়েই প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরাে নামে সরকারের একটি সংস্থা রয়েছে। প্রচার মাধ্যমগুলােও দুর্যোগকালের পূর্বপ্রস্তুতি ও সম্ভাব্য মােকাবেলার বিষয়টি দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত প্রচারের ব্যবস্থা করে। দুর্যোগের আগে ও পরে সরকারের সবগুলাে সংস্থা সতর্ক থাকে, যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসাধ্য কমিয়ে রাখা যায়।

উপসংহার: এক সময়ে মানুষ প্রকৃতির খেয়ালখুশির উপর নিজেদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হতাে। কিন্তু মানুষ এখন ক্রমান্বয়ে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ভূমিকম্পের আগামবার্তা এখনাে আবিষ্কার করা সম্ভব না হলেও ভূউপগ্রহের মাধ্যমে মানুষ এখন ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছ্বাসের মতাে দুর্যোগের আগাম খবর পায়। অচিরে হয়তাে | ভূমিকম্পের আগাম বার্তাও পেয়ে যাবে। হয়তাে সেদিন আর দূরে নয়, যখন প্রকৃতির যাবতীয় দুর্যোগকে মানুষ তার প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা: প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে; এটা এখন নিয়মিত ঘটনা। টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, খরা, বন্যা, নদীভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিপতিত হয়ে ঘটে ব্যাপক প্রাণহানি, মানুষের দীর্ঘদিনের সাজানো-গোছানো সংসার মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক এ ধরনের নির্মম আচরণে মানুষের জীবনে নেমে আসে দুঃখকষ্ট ও শোকের ছায়া। দুর্গত মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে এ সময় মানুষের মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধের পরিচয় ফুটে ওঠে। নিচে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এ দেশের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হাজার হাজার বছর ধরে এ দুর্যোগ আমাদের এ জনপদকে বিধ্বস্ত করে আসছে। ১৮৮৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহুবার এ মহাদুর্যোগ আঘাত হেনেছে এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়। এরপর ঘূর্ণিঝড় হানা দেয় ১৯৮১ সালের ১০ ও ১১ ডিসেম্বর। ১৯৮৫ সালে ঘূর্ণিঝড়ে উড়িরচর সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপর বড়ো ধরনের আঘাত আসে ১৯৮৮ সালে। এতে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। মারা যায় অসংখ্য মানুষ ও গবাদি পশু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের মহাদুর্যোগের কথা মানুষ এখনো ভোলেনি । বাংলাদেশের কোলাহলমুখর সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা ও দ্বীপগুলোর ওপর আঘাত হানে সে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এ মহাদুর্যোগের বিস্তার ও ব্যাপকতা ছিল স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বাধিক। একদিকে ২২৫ কি.মি. বেগে ঘূর্ণিঝড়, অন্যদিকে ১৫- ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস । এ ঝড়ে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যে হাতিয়া, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, ঢলচর, এবং চর নিজামের মতো বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। এসব এলাকায় শুধু লাশ আর ধ্বংসস্তূপ চোখে পড়ে। মানুষের লাশ ও মরা পশুর পচা গন্ধে দ্বীপগুলো প্রেতপুরীতে পরিণত হয়। নিহতদের লাশ গণকবর দিয়েও সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাশ সাগরের জলে ভেসে গেছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে আনুমানিক ৩ থেকে ৪ লাখ লোক প্রাণহারা হয় ১২ লাখ টন খাদ্যশস্য বিনষ্ট হয় এবং কমপক্ষে এক থেকে দেড় কোটি লোকেরা বাসস্থান, খেতের ফসল, গবাদি পশু, আসবাবপত্র এবং গোলার ধান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। এ অঞ্চলের গাছপালা পড়ে যায় এবং প্রায় এক লাখ মৎস্যজীবী নৌকা ও জাল নিয়ে নিখোঁজ হয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর।

বন্যা: প্লাবন বা বর্ষার ভয়াল রূপ হলো বন্যা। বন্যার করালগ্রাসে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে যায়। আকস্মিক বন্যায় মানুষসহ অসংখ্য গৃহপালিত পশু প্রাণ হারায়, ঘরবাড়ি ও কৃষি ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বিগত কয়েক দশক ধরেই দেখা যাচ্ছে, বন্যা এ দেশের একটি নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৪, ১৯৫৫ সালের বিভীষিকাময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মনে আজও এর ক্ষয়ক্ষতির ভয়াল স্মৃতি অবিস্মরণীয়। এছাড়া ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৮৭ সালের ও ২০২২ সালের সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে। বিশেষত ১৯৮৮ সালের শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এ দেশের মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। তারপর ১৯৯৮, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৭ সালের বন্যায়ও বাংলাদেশে মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

অনাবৃষ্টি: বন্যার মতোই খরা বা অনাবৃষ্টিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের কৃষিব্যবস্থা এখনো প্রকৃতিনির্ভর। কিন্তু প্রতি বছরই দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টির অভাবে কৃষি ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়। প্রচণ্ড খরায় মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়; ফলে এ খরার প্রকোপে ফসলাদি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জনজীবনও অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অনাবৃষ্টিজনিত কারণে কৃষি-উৎপাদন ব্যাহত হলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তাছাড়া অতিরিক্ত দাবদাহে মানবজীবনে নেমে আসে নানা রোগ-বালাই ।

নদীভাঙন: এ দেশের বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট বড় অনেক নদনদী। এসব নদী বর্ষাকালে কখনো সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করে। নদীর ধর্মই হচ্ছে— এপার ভেঙে ওপার গড়া। তাই দেখা যায়, এ নদীভাঙনের ফলে প্রতি বছরই বাংলাদেশের প্রচুর সম্পদ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। বিশেষভাবে এ নদীভাঙনের কবলে পতিত হয়ে এ দেশের গ্রামের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, সাজানো সংসার হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপনে বাধ্য হয় ।

ভূমিকম্প: প্রাকৃতিক দুর্যোগের আরেক ভয়াল রূপ হচ্ছে ভূমিকম্প। এ পর্যন্ত যদিও বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প আঘাত হানেনি; তারপরও কিছু ছোটখাটো বা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর ফলেই চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত মাঝারি কিংবা বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প যদি আমাদের রাজধানী ঢাকায় আঘাত হানে সে ক্ষেত্রে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে এ ধরনের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবসময়ই একটি অভিশাপ। এ অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী এখন প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা, সেহেতু বিশ্ববাসীর সাথে সাথে এ দেশের মানুষও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এখন আর দুর্যোগান্তে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করার মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়।

এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতে দুর্যোগ এড়িয়ে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলেও তার পরিমাণ যাতে মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে নিম্নরূপ
পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকা এবং এজন্য বিশেষ ধরনের কর্মী বাহিনী সৃষ্টি করা, যারা সাধারণ জনগণকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত করে তুলতে সহায়তা করবে;
  • জাতীয় ভিত্তিতে দুর্যোগ মোকাবিলায় নীতিমালা, পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করা;
  • জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা;
  • পরীক্ষিত পদ্ধতির ভিত্তিতে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রাক-প্রস্তুতি গ্রহণ করা;
  • দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি ও চাহিদা নিরূপণের সরকারি ব্যবস্থা করা; তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা উন্নত করা;
  • সামরিক বাহিনীকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাজের সাথে সমন্বয় করে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সহায়তা করা;
  • থানা, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা;
  • দুর্যোগ মোকাবিলায় নিয়োজিত কর্মী বাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
  • সর্বোপরি দুর্যোগের সম্ভাব্যতা ও সেগুলোর মোকাবিলা করার পদ্ধতি সম্বন্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা । প্রয়োজনে এজন্য গণমাধ্যমের সহায়তা নেওয়া ।

উপসংহার: একসময় মানুষের ধারণা ছিল প্রকৃতির ওপর যেকোনো উপায়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই সবচেয়ে জরুরি। আজ সে ধারণার পরির্তন ঘটেছে। কেননা দেখা যাচ্ছে, এ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বন ধ্বংস করে, নদীর প্রবাহ বন্ধ করে, পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে মানুষ | নিজের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে এনেছে। তাই আজ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক। আর প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে প্রকৃতির সহায়তায় তার নিজের জীবনধারাকে আগামী দিনের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনার পয়েন্ট  টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট, বাংলাদেশের, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকার রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা, রচনা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনার পয়েন্ট
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ