বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা  টি।

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা
বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা

ভূমিকা: ‘দুর্নীতি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ নীতি বিরুদ্ধ, কু-নীতি, অনৈতিক, কু-রীতি বা আর্থিক অনিয়ম ও অসাধুতা। বর্তমানে পৃথিবীতে দুর্নীতিকে একটি সামাজিক সংকট ও জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি সমাজের সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাধি হলো ‘দুর্নীতি’। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামো দুর্নীতির করাল গ্রাসে বিচূর্ণ হলে জাতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়। যা কিনা যে কোনো সমাজকে ঠেলে দেয় ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে। তাই বিশেষজ্ঞরা দুর্নীতিকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র সকলের কাম্য ।

দুর্নীতি: সাধারণভাবে দুর্নীতি বলতে যে কোনো নীতিবিরুদ্ধ কাজকে বোঝায়। এককথায় গৃহীত নীতি ও পদ্ধতির লঙ্ঘনই হচ্ছে দুর্নীতি ৷ দুর্নীতি হলো ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার ।

স্যামুয়েল, পি. হান্টিংটন বলেন, “দুর্নীতি হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের এক প্রকার আচরণ, যা গৃহীত নীতি ও আদর্শ বহির্ভূত।”

রাজনৈতিক ও সরকারি প্রশাসনে সাধারণত ঘুষ, বল প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বিস্তার এবং ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার দ্বারা ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জনই দুর্নীতি ।

অর্থাৎ দুর্নীতি হচ্ছে প্রচলিত নীতি ও আদর্শের লঙ্ঘন ও কর্তব্যের অবহেলা ।

দুর্নীতির বৈশিষ্ট্য: দুর্নীতির বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ—

১. ক্ষমতার অপব্যবহার; ২. অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণা; ৩. সম্পদের অপব্যবহার; ৪. ভীতি প্রদর্শন ও প্রভাব বিস্তার; ৫. স্বজনপ্রীতি; ৬. দায়িত্ব পালনে অবহেলা; ৭. ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা; ৮. প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব প্রভৃতি ।

দুর্নীতির ধরন: দুর্নীতির প্রধান কয়েকটি ধরন হলো ঘুষ, অবৈধ উপায়ে সুবিধালাভ, চাঁদাবাজি, সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি, অবৈধভাবে চাকরি প্রদান, কাউকে সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ বা অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ, অবৈধভাবে কোনো কিছু ভোগ-দখল করা প্রভৃতি।

দুর্নীতি ও উন্নয়নের আন্তঃসম্পর্ক: দুর্নীতি ও উন্নয়নের আন্তঃসম্পর্ক আপাত বিরোধী। একদিকে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে । অন্যদিকে ব্যাপক দুর্নীতির ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ।

প্রথমত, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ সরকার প্রদান করে, তাতে সংশ্লিষ্ট স্বার্থবাদী গোষ্ঠী দুর্নীতির নতুন ক্ষেত্র খুঁজে পায় ।

দ্বিতীয়ত, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির ফলে মূল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই অসমাপ্ত রয়ে যায়। দুর্নীতি উন্নয়নকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে দুর্নীতির ফলে সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের অপব্যবহার, অর্থপাচার, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জটিলতা বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগ জটিলতা দাতাদের শুধু স্থবিরই করে না, জাতীয় অর্থনীতির নিম্নগতিকেও ত্বরান্বিত করে।

দুর্নীতির কারণ: দুর্নীতির পেছনে বহুবিধ কারণ কার্যকর ভূমিকা পালন করে । কারণগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচিত হলো:

১. ঐতিহাসিক পটভূমি: উপমহাদেশের দুর্নীতির অন্যতম কারণ ঐতিহাসিক। ঔপনিবেশিক শাসনামলে শাসকগোষ্ঠী এদেশের সম্পদ আত্মসাৎ ও পাচার করেছে। বিদেশি শাসকরা নিজেদের স্বার্থে এদেশে একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগী সৃষ্টি করেছিল। যারা এ দেশের জনগণকে শোষণ- ও বঞ্চনার শিকারে পরিণত করেছিল। ইংরেজদের পর পাকিস্তানিরাও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছিল 1

২. দারিদ্র্য: অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। আর্থিক অসচ্ছলতা ও জীবনযাপনের নিম্নমান মানুষকে দুর্নীতির দিকে ধাবিত করে। বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো দুর্নীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । ৩. উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসী জীবনের আশা: সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, বিলাসী জীবন-যাপনের লোভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, উচ্চাভিলাস প্রভৃতি মানুষকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করে, ফলে তারা মোহে পড়ে অনেকে পদ ও পদবির অপব্যবহার করে ।

৪. কর্মসুযোগের অভাব: বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাব দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। অনেকে বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য ঘুষ বা তদবিরের মাধ্যমে কাজ জোগাড় করে। যেহেতু তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই হয় অনৈতিকভাবে সেহেতু কর্মজীবনে তারা নীতি আদর্শ রক্ষা করে না।

৫. অসম অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা: ধনীর সাথে দরিদ্রকে অসম প্রতিযোগিতা করে সমাজে টিকে থাকতে হয়। ফলে হতাশ দরিদ্র শ্রেণি যেকোনো উপায়ে অর্থোপার্জনের মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে চায়, ফলে আশ্রয় নেয় দুর্নীতির। তাছাড়া ভোগবাদী প্রবণতাও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে ।

৬. দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের অভাব: দেশপ্রেমী মানুষ কখনো দেশের ক্ষতি করতে পারে না । তাছাড়া ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনাও দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। দেশপ্রেম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অভাব দুর্নীতি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।

৭. আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা: দুর্নীতিবিরোধী আইনের অকার্যকর ভূমিকা, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অব্যবস্থাপনা, বিচার বিভাগের দুর্বলতা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি দুর্নীতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। এছাড়া প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব দুর্নীতিকে বৃদ্ধি করে ।

৮. রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব: যেকোনো দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব সে দেশের দুর্নীতি প্রবণতাকে বিস্তার করে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজেরাই দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে দুর্নীতি দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করে ।

দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয়: দুর্নীতি একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। দুর্নীতি দূর করতে না পারলে কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। দুর্নীতি রোধের কতিপয় উপায়গুলো নিম্নরূপ :

১. স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা: দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বাধীন ও সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের উপর্যুক্ত বেতন ও ভাতা প্রদান করতে হবে যেন তারা দুর্নীতিগ্রস্ত না হয় ।

২. সরকারের ভূমিকা: দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে কাজ করতে হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিকাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং দুর্নীতি বিরোধী সনদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নও জরুরি। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করা প্রয়োজন ।

৩. তরুণ সমাজের ভূমিকা: তরুণ সমাজই জাতির কর্ণধার । তরুণ সমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হতে হবে সোচ্চার ও সচেতন । তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধ ত্বরান্বিত হবে ।

৪. সুশীল সমাজের ভূমিকা: সুশীল সমাজ জাতির সদা জাগ্রত বিবেক। সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি সুশীল সমাজের কর্মসূচি সচেতনতা | উদ্যোগ সমাজকে দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে ।

৫. গণমাধ্যমের ভূমিকা: প্রশাসনকে দুর্নীতিরোধ ও জবাবদিহিতা অর্জনে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে । সংবাদপত্র ও টেলিভিশন মিডিয়া দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে দুর্নীতি বিরোধী জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

৬. রাজনৈতিক দলের ভূমিকা: দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক দল অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহার পালন, জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন এবং দেশ ও দশের মঙ্গলে ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে। ৭. ছাত্র সমাজের ভূমিকা: সমাজ ও দেশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার জন্য ছাত্র সমাজকে সঠিকপথ অনুসরণ করতে হবে। আজকের ছাত্ররা যদি ঘুষ দুর্নীতিসহ সকল প্রকার নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেরাও সততার অনুশীলন করে তবে দুর্নীতি সমূলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে।

৮. সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা: সমাজের সকল স্তরের জনগণকে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. জনগণের ভূমিকা: জনগণ চাইবে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক যারা দুর্নীতি করে তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক । রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হোক ও গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ ঘটুক। অন্য যে কোনো স্বার্থের ঊর্ধ্বে দেশের স্বার্থ প্রাধান্য পাক। এই দাবি যত বেশি জোরালো হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ ততই ত্বরান্বিত হবে।

উপসংহার: সমাজ, দেশ ও জাতিকে দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন সার্বিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আইনের অনুশাসনের প্রতিষ্ঠা। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশ ও জাতি কখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। আমাদের উচিত দুর্নীতিমুক্ত, সুন্দর, নির্মল ও পরিচ্ছন্ন একটি দেশ পরবর্তী প্রজন্মকে উপহার দেওয়া ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ