খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা  টি।

খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা

খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা

সূচনা: মানুষ তথা সমাজের ওপরই নির্ভর করে ব্যক্তিমানুষের কল্যাণ। ব্যক্তিবাদী ও আত্মসর্বস্ব মানুষ অমানবিকতায় পঙ্গু, আত্মকেন্দ্রিকতায় কলঙ্কিত। অর্থলোলুপতার ফল মানবজাতির জন্য কতটা ভয়াবহ তার নমুনা বর্তমান সময়ে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের মিশ্রণে প্রতীয়মান। যে খাদ্য গ্রহণ করে মানুষের জীবনধারণ, তাতে নির্দ্বিধায় লাভের লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মিশিয়ে জনজীবনকে চরম হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সাধারণত ভেজাল বলতে বোঝায় খাদ্যে নিম্নমানের ও ক্ষতিকর দ্রব্য মেশানো। প্রকৃতি ও গুণগতভাবে নির্ধারিত যেকোনো খাদ্যদ্রব্যই মানসম্মত না হলে তা ভেজালযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ।

ভেজালের প্রেক্ষিত: চিরন্তন অর্থের লালসার কারণেই মানুষ খাদ্যে ভেজাল দেয়। জীবনের সাথে অর্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত; সমাজজীবনে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে গেলে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর তাই অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষের প্রাণান্ত প্রয়াস। কিন্তু প্রয়োজন আছে বলে যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন আইনসিদ্ধ নয়। অর্থোপার্জনের জন্য ন্যায়-অন্যায়বোধ থাকা দরকার। সৎপথে জীবিকার্জনের কথা অভিপ্রেত হলেও আজ ঘরে-বাইরে সর্বত্রই মনুষ্যত্বের দীনতার চিত্র ফুটে উঠছে। বিশেষত খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেওয়ার মাধ্যমে সেই চিত্র আরও নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। একদিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কলহ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশার ফলে সমাজের সর্বত্রই আজ নানা সমস্যায় ছেয়ে গেছে। আমরা প্রতিদিন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করি, সমাজে সমাজবিরোধীর যে সম্মান প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী ও সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ; সততা সেখানে লাঞ্ছিত, অসহায়। বিবেক আজকের সমাজজীবনে বিশেষত ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে নেই বললেই চলে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রশক্তি বা আজ বেশির ভাগ মানুষ সৎপথের কথা বা সততার কথা চিন্তা করে না। যেকোনো উপায়ে হোক তাদের টাকা চাই। এ টাকা কালো পথে সাদা পথে, কিংবা কারো রক্ত ঝরিয়ে আসুক— 'তা যেন এ সমাজের মানুষের ভাবার অবকাশ নেই। ফলে ক্রমেই মানুষগুলোও ভেজালে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এ পরিণতি সমাজের উঁচুস্তর থেকে শুরু করে নিচুস্তর পর্যন্ত সর্বত্রই বিরাজমান। এখন মানুষ তার নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যকে ভেজালে রূপান্তরের মতো নিন্দনীয় জঘন্য অপরাধ করতেও দ্বিধা করে না। ভেজাল এখন মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যেই আজ ভেজাল । আর এ ভেজালের পদ্ধতিও বিচিত্র। ভেজাল দেওয়ার প্রক্রিয়ায় খাদ্যশস্যবহির্ভূত পদার্থ সরাসরি যোগ করা হয়। ওজন বৃদ্ধির জন্য বালি বা কাঁকর, ভালো শস্যের সঙ্গে কীটপতঙ্গ আক্রান্ত শস্য মেশানো হয় এবং অনেক সময় খাদ্যশস্যের ওজন বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ তাতে পানি ছিটায়। ঘি-এর সঙ্গে পশুচর্বি দিয়ে ভেজাল দেওয়া হয়। তিল বা নারিকেল তেলের সাথে বাদাম তেল বা তুলাবীজের তেল মেশানো হয়। সরিষার সঙ্গে প্রায়ই শিয়ালকাঁটার বীজ একত্রে মিশিয়ে তেল বের করা হয়। সয়াবিন তেলের সঙ্গে পামতেলের ভেজাল দেওয়া হয়। অনেক সময় দুধের মাখন তুলে নিয়ে অথবা দুধে পানি মিশিয়ে ভেজাল দুধ বিক্রি করা হয়। আবার মহিষের দুধ পানি দিয়ে পাতলা করে সহজেই গরুর দুধ বলে চালানো হয় । গুঁড়ো দুধে ময়দা, সুজি ও অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে পরিমাণ বাড়ানো হয়। ব্যবহৃত চা পাতা, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি দিয়ে চায়ে ভেজাল দেওয়া হয়। মশলার মধ্যে মরিচ বা হলুদ গুঁড়াতে সিসাজাতীয় রঞ্জক পদার্থ মিশিয়ে রঙের উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয়। কোমল পানীয় তৈরিতে তরল গ্লুকোজ মেশানো হয়। বিভিন্ন ফলের রসের নামে কৃত্রিম ও নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহার করে নকল রস তৈরি হয়ে থাকে। অধুনা মিনারেল ওয়াটারের নামে বাজারে যে পানি ব্যবসায় চলছে তাতে বিশুদ্ধতা ও মানের নিশ্চয়তা অতি সামান্য, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে । দুঃখজনক হলেও সত্য · যে, ভেজাল নিরূপণের জন্য যে বিএসটিআই প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে রয়েছে, কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন, সেখানেও অনিয়মে পরিপূর্ণ। ফলে খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি মিলবে কবে, সেটা আজ এক বৃহৎ প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে ।

ভেজালের ফল: আজকাল ব্যবসায় স্বার্থবুদ্ধিই বড় হিসেবে বিবেচিত হয়, নীতিবোধের তোয়াক্কা করে না অধিকাংশ ব্যবসায়ী। শিশুখাদ্যে ভেজাল মেশাতেও এ ব্যবসায়ী শ্রেণি পিছপা হয় না। রোগীর ঔষধে ভেজাল দিয়ে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় অবলীলায়। ভেজাল খাদ্য খেয়ে এ দেশের অনেক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, তা অনেকবারই পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে; তথাপি কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। ভেজাল খাদ্যের ভয়ানক পরিণাম হিসেবে অনেকেই চিরতরে অসুস্থ হয়ে গেছে। এ দেশে শিশুর দুধে নির্বিকারভাবে ব্যবসায়ী গোয়ালা থেকে বড় পুঁজিপতিরাও ভেজাল মেশাতে পারে। জনস্বাস্থ্যের কথা ভাবলে মুনাফাখোর লোভী এ ব্যবসায়ীদের হাত কাঁপত শিশুর খাদ্যে কিংবা রোগীর খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সময়। এ ভেজাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন হুমকির মধ্যে অবস্থান করছে। কাজেই জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে খাদ্যদ্রব্যকে ভেজালের কবল থেকে মুক্ত করতে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। 

ভেজালের প্রতিকার: ভেজালের কুফল মারাত্মক এ নিয়ে সন্দেহ নেই । ভেজালের বিষক্রিয়া নানাভাবে আমাদের নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ নির্বিচারে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য খেয়ে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য খেয়ে অনেকেই চিরপঙ্গুত্ব বরণ করছে এবং অনেকে পঙ্গু হতে চলেছে। ভেজালের ফলে যেকোনো সময় জাতীয় জীবন বিপর্যস্ত হতে বাধ্য। সম্প্রতি ভেজাল প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে ভেজালবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও খাদ্য বিক্রেতাকে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। ভেজালের পরিধি যেভাবে বেড়ে চলেছে, একে প্রতিরোধ করা যেন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। কিন্তু এ অবস্থায় নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকলেও চলবে না । সমাজ তথা জাতিকে বাঁচাতে হলে এর প্রতিকার আবশ্যক । তাই ভেজালের প্রতিকারের লক্ষ্যে ক্রেতাস্বার্থ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। প্রশাসনের ওপর এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে প্রশাসক ভেজাল নিরোধক আইন আরও দৃঢ়ভাবে কার্যকর করতে বাধ্য হয়। খাদ্যনমুনা পরীক্ষা করার জন্য প্রত্যেক জেলায় পরীক্ষাগার স্থাপন করা দরকার । তাছাড়া ভেজালদাতারা ধরা পড়লে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি প্রশাসক এবং ক্রেতার যৌথ প্রচেষ্টায় এ ভেজাল নিরোধ করা সম্ভব।

উপসংহার: অসাধু ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে কত জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। বাংলাদেশের 'লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ খাদ্য-পানীয়-ঔষধে ভেজাল খেয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ভেজালের সর্বনাশা বিভীষিকা থেকে কি মানুষের মুক্তি নেই? মানুষের শুভবুদ্ধি কি এভাবে অন্ধকারেই আচ্ছন্ন থাকবে? ভেজাল এক ধরনের সামাজিক অপরাধ। অতএব, যেকোনো মূল্যে জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণে ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিপণন রোধ করতে হবে । মানুষের ভেতরে শুভবোধের জাগরণ ভিন্ন সেটি সম্ভব নয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ