সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা  টি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকা: সৃষ্টির ঊষালগ্নে মানুষ একটিমাত্র সম্প্রদায় বা গোত্রে পরিচিত ছিল আর সে গোত্রটির নামই হলো ‘মানুষ’। কালের আবর্তে বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের ওপর ভিত্তি করে 'মানুষ' নামক এ শ্রেষ্ঠ জীব বিভিন্ন সম্প্রদায় ও শ্রেণিতে বিভক্তি লাভ করে। এ বিভাজনের ফলে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ও মতবাদগত অনৈক্য দেখা দেয় এবং একে অন্যের ক্ষতি সাধনে প্রলুব্ধ হয়। সম্প্রদায়গত এ সংকীর্ণ মানসিকতার ফলে মানুষ ভুলে যায় তার আসল পরিচয়। ফলে সৃষ্টি হয় সন্ত্রাস, হানাহানি, প্রতিহিংসার। একশ্রেণির মানুষ আছে যারা সবসময় সাম্প্রদায়িক বৈষম্য সৃষ্টিতে তৎপর। বাস্তবে চিন্তা করলে দেখা যাবে সব মানুষই এক ও অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী

সাম্প্রদায়িকতা ও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি: বর্তমান বিশ্বে সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়ায় ঘটছে সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও অমানবিক ঘটনাবলি । সাম্প্রদায়িকতার ফলে ঘটছে সভ্যতার চরম বিপর্যয়। দেশে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে অমানবিক নির্যাতন। সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্যই সংখ্যালঘুদের ওপর চালাচ্ছে অত্যাচারের স্টিমরোলার। সাম্প্রদায়িক চেতনাই বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ধারণাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে— ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না' । কিন্তু এ কথা এখন আর কেউ মানছে না । এ সাম্প্রদায়িকতার ফলেই হিটলার তার গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের মুসলিমরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত হয়েছে ঘৃণ্যতম ও বীভৎস গণহত্যা। উগ্র রাখাইন জনগোষ্ঠী সেনাবাহিনীর সহায়তায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে, বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের মানবিক সংকট। আবার শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের বিরোধ তো লেগেই আছে । এ সাম্প্রদায়িকতা বিশ্বের অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে ।

মানবতার মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: পৃথিবীতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন ধর্মসহ অসংখ্য ধর্মের মানুষ বসবাস করে। আবার পেশার দিক দিয়েও বিভিন্ন পেশা ও বৃত্তিজীবী মানুষ সমাজে বসবাস করে। এদের মধ্যে আছে কামার, কুমার, মুচি, ডোম, কুলি, মালি, সুইপার । এরই পাশাপাশি রয়েছে উচ্চবিত্ত ভদ্র, মার্জিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মানুষ। এসব শ্রেণির মানুষরাই একই সারিবদ্ধ হয়ে কাজ করার মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিতে পারে। লাঞ্ছিত মানবতাকে মুক্তি দিতে হলে চাই সব ধর্মের, সব মতবাদের ও সব শ্রেণির মানুষের এক হয়ে কাজ করার মানসিকতা কবি এ সত্য উপলব্ধিকেই ছন্দবদ্ধ চরণে ব্যক্ত করে বলেছেন:

জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে

সে জাতির নাম মানুষ জাতি । এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত

একই রবি শশী মোদের সাথি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শুধু দেশ ও জাতীয় জীবনেই প্রয়োজনীয় নয় বরং বিশ্ব সমাজ গঠনে ও বিশ্ব শান্তির জন্যও তা একান্ত প্রয়োজন। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, কাটাকাটি, যুদ্ধ- বিগ্রহ, খুন, রাহাজানি সর্বদা বিশ্বশান্তি ও বিশ্ব সমাজ গঠনের প্রধান অন্তরায়। আর এসবের মূল কারণই হলো সাম্প্রদায়িক বিরোধ। তাই বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং বিশ্ব সমাজ গঠনে ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সব সম্প্রদায়কে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম পীঠস্থান আমাদের বাংলাদেশ। সেই প্রাচীন কাল থেকেই এ দেশে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষরা পরস্পর মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। একই বাড়িতে, একই মহল্লায় ও একই গ্রামে একসাথে বসবাস করছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলিম। এখানে মুসলিমদের ঈদ, হিন্দুদের পূজা, খ্রিষ্টানদের বড়দিন এবং বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হয় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে। কারো উৎসবে কারো বিদ্বেষ নেই বরং আছে সাহচর্য, সহমর্মিতা, পারস্পরিক ভালোবাসা ও মহানুভবতা। এ দেশের মানুষ একসাথে মিলেমিশে কলকারখানায় কাজ করছে এবং জাতীয় উন্নতিতে বড় রকমের অবদান রেখে চলেছে। জাতীয় দুর্দিনে এ দেশের সকল মানুষ সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে একই সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার বড় উদাহরণ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। এভাবে পাশাপাশি বসবাসের ফলে এ দেশে কখনোই সাম্প্রদায়িক বিভেদ দেখা দেয়নি যা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহানমন্ত্রে দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা: সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এ ব্যাধি দূরীকরণে সমাজের সুশীল নাগরিকদের পাশাপাশি ছাত্ররাও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তরুণ ছাত্রসমাজই এ দেশের আদর্শ সম্পদ। তারা কেবল শিক্ষাকে পাশ করা বা জীবিকার্জনের হাতিয়ার হিসেবেই গ্রহণ করবে না বরং শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে তারা অনুভব করবে মানবতার মহান মহিমা। ছাত্রাবস্থায়ই ছাত্রদের সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্তির শপথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তারাই হবে প্রধান পুরোহিত। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছাত্রদের সুকুমার বৃত্তিগুলোর যথাযথ বিকাশে সহায়তা করা ও মনুষ্যত্বের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। যাতে করে শিক্ষার্থীরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারে সবার উপরে মানুষ সত্য।

উপসংহার: আমরা বলতে পারি বর্তমান বিশ্ব উন্নতি, অগ্রগতি ও উৎপাদনশীলতায় বিশ্বাস করে। তাই আজ বিশ্ব জনমত যুদ্ধের বিপক্ষে, সন্ত্রাসের বিপক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে। অগ্রগতিশীল বিশ্বে অগ্রগতি ও উন্নতির ধারাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন বিশ্বশান্তি, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এক নতুন বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে সকলকে একই শ্রেণিভুক্ত হয়ে কাজ করে যেতে হবে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ