১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল
১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল

১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল

  • অথবা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনি ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদে এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফলে জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পরিষদে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করে। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দল পিপিপি এ নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পরিষদে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় এবং জয়লাভ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে উভয়ই দলের প্রতিক্রিয়ায় মিশ্রভাব পরিলক্ষিত হয়। 

সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষমতা ন্যায্য হলেও ১৯৭০ এর নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি করে এবং এর প্রেক্ষিতে উভয় দল তাদের নিজ বক্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে ধরে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার কখনও চায়নি আওয়াী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান পরিচালিত হোক। তাই তারা নির্বাচনের পূর্বশর্ত মোতাবেক ক্ষমতা হস্তান্তর না করে কথার লড়াইয়ে মেতে ওঠে।

→ নির্বাচনি ফলাফলে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া : ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনি ফলাফল পূর্ব পাকিস্তানিদের সন্তুষ্ট করলেও, পশ্চিম পাকিস্তানি দলগুলোকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। নিচে ১৯৭০ সালে নির্বাচনি ফলাফলে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হলো :

১. পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রতিক্রিয়া : জুলফিফার আলী ভুট্টো পিপিপি-এর প্রধান নির্বাচিত হয়ে দাবি করেন যে, তিনি সারা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধি। তিনি আওয়ামী লীগের ৬ দফা মানতে রাজি নন এবং আওয়ামী লীগ তাদের দাবি সংশোধন না করলে তিনি জাতীয় পরিষদ বর্জন করার হুমকি দেন। 

তিনি বলেন, তার দলের সহযোগিতা ছাড়া কেন্দ্রে কোনো সরকার প্রতিষ্ঠা কিংবা সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। তিনি আরো বলেন, পিপলস পার্টি পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। 

কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় এই দুই প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব অবশ্যই থাকতে হবে। ভুট্টো আরো উল্লেখ করেন, জাতীয় সংহতি অক্ষুণ্ণ রাখার পর প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। ভুট্টো দাবি করেন যে, নির্বাচনের পূর্বে ঘোষিত আইনকাঠামো আদেশে ক্ষমতার বণ্টন সম্পর্কে যা উল্লিখিত আছে তারই আলোকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনি ফলাফলের প্রেক্ষিতে পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো এরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

২. নির্বাচনি ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া : অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রধান ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে অটুট থাকেন। নির্বাচনি ফলাফল ঘোষিত হওয়া মাত্র শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, "I wormly thank the people for having given a historic verdict in favour of our six-points programme. We pledge to implement this verdict. There can be no constitution except one which is based on the six - point programme."

ভুট্টোর কথার পাল্টা জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্ৰীয় সরকার গঠন করার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, সংবিধান প্রণয়ন করতেও সে সক্ষম। 

তিনি বলেন যে, যেহেতু একব্যক্তি এক ভোট ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সুতরাং কেন্দ্রীয় সরকারের পাঞ্জাব ও সিন্ধুর প্রতিনিধিত্ব আবশ্যক, ভুট্টোর এ দাবি ঠিক নয়।

জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্যবৃন্দের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক র‍্যালি সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমান ঘোষণা করেন, সংবিধান প্রণয়ন করতে আমরা চাই পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যদের সমর্থন ও সহযোগিতা। কিন্তু মৌলিক নীতির প্রশ্নে কোনো আপস নেই। আমরা অনেক কষ্ট ভোগ করছি, অবিচার সহ্য করছি, এর কি জ্বালা তা আমরা বুঝি। সুতরাং আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি ন্যায়বিচার করব। তিনি আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছয় দফা ও এগারো দফার প্রতি ম্যান্ডেট ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন যে, ৬ দফা এখন জনসাধারণের সম্পত্তি এবং তা রদবদল করা সম্ভব নয় । আওয়ামী লীগ এখন এর কোনো অংশ সংশোধন করতে পারে না। কেউই আমাদেরকে ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নের কাজ থেকে বিরত করতে পারবে না।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দলই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এভাবেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলসমূহ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে দুই মেরুতে অবস্থান গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ ছয় দফার ভিত্তিতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি। অক্ষুণ্ণ রাখে। অপরদিকে পিপিপিসহ অন্যান্য বামপন্থি দলসমূহ শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করতে থাকে। এভাবে শুরু হয় রাজনৈতিক সংকট। জুলফিকার আলী ভুট্টোর যোগসাজশে সামরিক শক্তি সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনো ক্রমেই শেখ মুজিব তথা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ফলে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার প্রশ্নে শুরু হয় গভীর ষড়যন্ত্র।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ