বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর

  • অথবা, স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট কী ছিল? 
  • অথবা, বঙ্গবন্ধু কোন প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন? ব্যাখ্যা কর।
  • অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পটভূমি/ প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর ৷

উত্তর : ভূমিকা : স্বাধীনতা ঘোষণা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ বিতর্কিত অধ্যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘোষণা যদিও একটি বিশেষ দিনে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তানি শাসন-শোষণে দীর্ঘদিনের এক করুণ ইতিহাস। 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত অগণিত তরুণ প্রাণ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার প্রতিটি মানুষের মুখেই মুক্তির বাণী ধ্বনিত হয়। আর এ দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চণার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায় ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যদিয়ে। স্বাধীনতার এ ঘোষণা পাক সামরিক সরকারে শোষণ নির্যাতনের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা জোগায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

→ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট : স্বাধীনতার ঘোষণা একদিনের বা অপ্রত্যাশিত কোন ঘোষণা ছিল না। এর পিছনে দীর্ঘদিনের শোষণ-নিপীড়নের ঘটনা সম্পৃক্ত ছিল। নিচে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পশ্চাতে যেসব প্রেক্ষাপট রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো :

১. বাঙালিদের উপর বিমাতাসুলভ আচরণ : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগণ বাঙালি | জনগণের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে । তারা প্রথমে এদেশের মাতৃভাষা পদদলিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। যার প্রতিবাদে শুরু হয় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। 

শুধু ভাষার অধিকার কেড়ে নিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি; বরং কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রেও তারা এদেশের জনগণকে পিছিয়ে রাখতে চায়। তাদের এরূপ বৈষম্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাঙালি জনগণ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন ৷

২. গণরায় বানচালের ষড়যন্ত্র : ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৭০ সালে পূর্ব বাংলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩১৩ আসন বিশিষ্ট জাতীয় পরিষদের ১৬৭টি আসন লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। 

অতঃপর বঙ্গবন্ধু ন্যায়সঙ্গত কারণেই ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সংবিধান ছয় দফার ভিত্তিতেই প্রণীত হবে। এতে পশ্চিমা স্বার্থবাদী নেতৃবৃন্দ আতঙ্কিত ও শঙ্কিত হয়ে উঠে। তাই নির্বাচনের পর থেকে গণরায় বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করার মানসে শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

৩. ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পাক সামরিক সরকার ও পশ্চিমা দলের প্রতিনিধি জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা প্রকাশ করেন এবং নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে। ফলে পাকিস্তানের দুই অংশে শুরু হয় রাজনৈতিক কোন্দল। এ - প্রেক্ষিতে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে নানারকম টালবাহানা শুরু করে । যার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ।

৪. ইয়াহিয়ার হঠকারিতা : জেনারেল ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন যে, ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পিপলস পার্টির ষড়যন্ত্রে তিনি ২ মার্চ এক বেতার ভাষণে উক্ত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। ফলে সারা দেশব্যাপী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যা পরবর্তীতে আরো সম্প্রসারিত হয় এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা করেন ।

৫. ২৫ মার্চের নৃশংস পরিকল্পনা : জনগণের বিক্ষোভের মুখে ইয়াহিয়া ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে ঘোষণা করেন। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে তিনি সামরিক বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন। 

শেখ মুজিব এরূপ পরিস্থিতির পূর্বেই অনুমান করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি ২৫ মার্চ দিনের বেলা থেকেই স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অবশেষে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে তিনি প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা কোনো একক কারণ বা প্রেক্ষাপটের ফল নয়। বহুবিদ কারণ বা ঘটনা এ ঘোষণার পিছনে ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জনগণের ওপর নিপীড়ন শুরু করে যার চরম পরিণতি লক্ষ করা যায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর। 

নির্বাচনে জয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তরের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে বাঙালি জনমনে ক্ষোভের সূত্রপাত হয়। আর এ ক্ষোভের পরোক্ষ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের ভাষণে এবং প্রত্যক্ষ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যদিয়ে। অর্থাৎ সুদীর্ঘ আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক শোষণের প্রেক্ষাপটেই শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ