আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর  টি।

আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

 আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : হযরত আদম (আ.) এর জন্ম হতে আরম্ভ করে হযরত মুহম্মদ (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তি পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ সময়কালকে আইয়্যামে জাহেলিয়া বলা হয়, অর্থাৎ ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী যুগ। অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগকে আইয়্যামে জাহেলিয়া বলা হয়। ইসলাম পূর্ব যুগকে জাহেলিয়া যুগ বলা হলেও সেই সময়ে আরবদের মধ্যে এমন কতগুলো গুণের সমাবেশ ঘটেছিল যা উল্লেখ করার মতো।

→ জাহেলিয়া যুগের আরবদের বৈশিষ্ট্য : প্রাক ইসলামি যুগে আরবদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-

১. স্বজনপ্রীতি : আরব বেদুইনদের মূল বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, একদিকে তারা যেমন লুটতরাজ, জিঘাংসা ও যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত ছিল, অপরদিকে তেমনি মহত্ত্বের সুকুমার গুণাবলিও তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তাদের একটি অন্যতম গুণ হচ্ছে স্বজনপ্রীতি। তারা আত্মীয়স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলত ।

২. সংগ্রামী ও সৎ ব্যবসায়ী : আরবরা প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার কারণেই সংগ্রামী জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। তাদের আরেকটি গুণ ছিল তারা সৎভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করত। তারা ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য লিখিত চুক্তি সম্পাদন করত। তারা মালের তালিকা করে পরামর্শ সভা কেন্দ্রে মিলিত হতো।

৩. সহিষ্ণুতা : আরব বেদুইনদের অন্যতম একটি গুণ ছিল সহিষ্ণুতা। তারা ছিল কষ্টসহিষ্ণু জাতি। মরুভূমির তপ্ত বালুকারাশির মাঝে সারা দিন কাজ করার ফলে ধৈর্যশীল জাতি হিসেবে পরিচিতি পায়।

৪. অতিথিপরায়ণতা : অতিথিপরায়ণতা আরব বেদুইনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। তারা বর্বর জাতি হলেও অতিথিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলত। অতিথির সম্মানার্থে তারা সবকিছু বিলিয়ে দিত। তারা অতিথি শত্রুকেও সেবা, আদর, আপ্যায়ন করতে দ্বিধাবোধ করত না।

৫. পৌরুষ : আরব জাতিরা ছিল দুধর্ষ পৌরুষের প্রতীক। হযরত ওমর (রা) এর ভাষায়, “বেদুইনগণই ইসলামের মাল মশলা সংগ্রহ করেছিল। বেদুইন পুরুষরা ছিল অগ্নির ন্যায়। তাদের কাজে কর্মে ছিল পৌরুষের পরিচায়ক।

৬. বাগ্মিতা : প্রাচীন যুগে আরবদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল। যে, মানুষের সৌন্দর্য তার জিহ্বার বাচনশীলতার মধ্যে নিহিত। এ বিশ্বাস হতেই আরবদের মধ্যে বাগ্মিতা ব্যাপক বিস্তার লাভ করে ।

৭. সাহসী জাতি : আরব বেদুইনরা ছিল খুবই সাহসী জাতি। মরুভূমির প্রচণ্ড উত্তাপ, লু-হাওয়া, উত্তপ্ত বালুকারাশি, গাছপালাহীন রুদ্র পাহাড়শ্রেণি আরববাসীদের চরিত্রে কঠোরতা, বর্বরতা, বৃশংসতা এবং সাহসিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছে।

৮. গোত্রপ্রীতি : গোত্রপ্রীতি আরবদের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে অভিহিত। মরুবাসী আরব গোত্রের প্রতি বিশেষভাবে অনুরুক্ত ছিল। গোত্রের কোনো লোক অন্যায় করলেও গোত্রভুক্ত অন্যান্য লোক তাকে সমর্থন ও সাহায্য করতো। গোত্রপতিকে তারা অন্ধের মতো বিশ্বাস ও ভক্তি করতো এবং তার নির্দেশে গোত্রের সম্মান রক্ষায় জীবন ও সম্পদ দিতে কুণ্ঠিত হতো না ।

৯. প্রতিশোধপরায়ণ : আরবদের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে প্রতিশোধপরায়ণতা বিশেষভাবে উল্লেখ। রুক্ষ মরুর সন্তান হিসেবে আরবা ছিল অতিমাত্রায় প্রতিশোধপরায়ণ। নিজ গোত্রের কোনো লোককে অন্য কোনো গোত্রের লোক হত্যা কিংবা লাঞ্চিত করলে তারা তা সহ্য করতে পারত না। এমনকি প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত তারা ক্ষান্ত হতো না । খুনের বদলে খুন ছিল তাদের মূলমন্ত্র ।

১০. নির্ভীক ও স্বাধীনচেতা : আরবরা নির্ভীক ও স্বাধীনচেতার মূর্তপ্রতীক। তারা কখনই মৃত্যুর ভয়ে ভীতু ছিল না। এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করতো। তারা আবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত ছিল না। মরুবাসী আরব যাযাবরা সর্বদায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনাগমন করতো। সুতরাং নির্ভীকতা ও স্বাধীনচেতা ছিল আরবদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

১১. সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর : সর্বোপরি আরবরা ছিল অত্যন্ত সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর। অধিকাংশ আরবই মরুভূমিতে তাবুতে বসবাস করতো। তাদের জীবনে কোনো জাঁকজমকতা ছিল না। তারা অত্যন্ত সাদাসিধে পোশাক পরিধান করতো। বিলাসি জীবনযাপনের কোনো ধারণায় তাদের ছিল না। সুতরাং সহজ-সরল অনাড়ম্বরতা ছিল তাদের চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

১২. কাব্যপ্রীতি : লিখন পদ্ধতির সুষ্ঠু বিকাশ লাভ করতে না পারায় গীতিকাব্যের ন্যায় গদ্য রচনার সংখ্যা ছিল খুবই কম। আরবগণ কবিতা রচনায় ও বাগ্মিতায় বিশেষ পারদর্শি ছিল। তাদের কবির ন্যায় মর্যাদা ছিল। ঐতিহাসিক P.K. Hitti বলেন, “The Bedouins love of poetry was his one cultural asset.

১৩. প্রখর মেধাশক্তি : প্রাক ইসলামি যুগে বেদুইন আরবদের অধিকাংশ লোক যদিও নিরক্ষর ও মূর্খ ছিল, তথাপি তারা অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিল। তাদের স্মৃতিশক্তিও ছিল প্রখর। তাদের স্মৃতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে লোকগাথা, প্রবাদ, লোকশ্রুতি, কবিতা ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল।

১৪. স্থাপত্যবিদ্যায় পারদর্শী : আরব দেশে প্রাক ইসলামি যুগে স্থাপত্য লিপিকলা ব্যাপক প্রসারতা লাভ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আবিষ্কৃত বিভিন্ন পুরাকীর্তি দেখে ধারণা করা যায় যে, তারা স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিল। এইসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় যে, স্থাপত্যবিদ্যা আরবদের মধ্যে স্পর্শ করেছিল ।

১৫. ভাষাজ্ঞান : প্রাক-ইসলামি যুগে আরবি ভাষা অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করেছিল। আরবি ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল । ইউরোপের বিভিন্ন ভাষার সাথে এর তুলনা করা যায় ৷

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলাম পূর্ব যুগে যদিও আরবরা বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে ছিল, তথাপি তাদের মধ্যে বিভিন্ন সদগুণের প্রকাশ ঘটেছিল। বেদুইন আরব জাতিরা জন্ম থেকেই কষ্টসহিষ্ণু জাতি, ব্যবসায়ী জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের এই বৈশিষ্ট্যমূলক সদগুণাবলির জন্য অন্যান্য জাতি থেকে আলাদা জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ৷

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ