আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য যারা শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের স্মরণে পরবর্তী ১৯৫৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘শহিদ দিবস' হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়ে আসছে। বাঙালির আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গসংস্থা (UNESCO) বাংলাদেশের ২১ ফেব্রুয়ারির শহিদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ।

→ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। ১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিকসহ বাংলার অগণিত দামাল ছেলে বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেছিল। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলায় অধিকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী জনাব এ. এইচ. এস. কে সাদেক জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান, ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো এর ৩১ তম সম্মেলনে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। বিশ্বের আদর্শ সংস্থা হিসেবে তাই এটিকে বিভিন্ন মহল সাধুবাদ জানায় ।

→ মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক হৃদয় বিদারক অথচ গৌরবময় দিন। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এদিন রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার রাজপথ। তাই এ দিনের গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ একে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে । নিচে মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।

১. জাতীয় জীবনে গৌরবময় দিন : বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালি জাতির অগ্রণী ভূমিকায় এ ভাষার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এ ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার এটা আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গৌরবময় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ।

২. বহির্বিশ্বে বাঙালি জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি : অন্যান্য আন্ত র্জাতিক দিবসের মতো মহান শহিদদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিশ্ববাসী জানতে পারে বাঙালির গৌরব গাঁথা, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং আমাদের ভাষা শহিদদের।

৩. নিজস্ব অস্তিত্বের গুরুত্ব : একই মাতৃভাষায় যারা কথা বলে তাদের একটি নিজস্ব পরিচিতি বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠে। তারা নিজেদেরকে অন্যান্য ভাষার লোকদের থেকে সহজে পৃথক করতে পারে। মাতৃভাষা দিবসের মধ্য দিয়ে প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ ভাষার যেমন মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে, তেমনি ভাষাকেন্দ্রিক তাদের নিজস্ব অস্তিত্বকে গুরুত্ব দিয়েছে।

৪. জাতিসত্তা ও ভাষাসত্তার চরম বিকাশ : মাতৃভাষা দিবস — পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্র জাতি ও তাদের ভাষা গোষ্ঠীকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এ দিবসের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে বাঙালি জাতির জাতিসত্তা বা ভাষাসত্তা আর সার্বভৌমত্বের চরম বিকাশ ।

৫. প্রত্যেক ভাষার ঐতিহ্য রক্ষা : মাতৃভাষা প্রত্যেকের নিকট অত্যন্ত গৌরবের। প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। মাতৃভাষার মাধ্যমে যত সহজে একজন অপরজনের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারে অন্য কোনো ভাষায় তা পারে না। তাই মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে প্রত্যেক ভাষার ঐতিহ্য রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সাধারণ সম্মেলনে সকল সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর ইউনেস্কোর সকল সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে। এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট ভাষার জন্য বাঙালির রক্তদান ও আত্মত্যাগের ইতিহাস উপস্থাপিত হওয়ার সুযোগ হয়। তাই এ দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে যুগ যুগ ধরে বাংলা ভাষায় সমৃদ্ধি ও উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে। ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনা বাঙালি জাতিকে অনেক দূর নিয়ে যাবে এ আমাদের বিশ্বাস ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ