আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর ।

আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর
আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর

আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর

  • আইয়ুব খানের পতনের প্রক্রিয়া আলোচনা কর।
  • অথবা, আইয়ুব খানের পতনের অবসান আলোচনা কর।
  • অথবা, আইয়ুব খান পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর । 
  • অথবা, ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর্বটি আলোচনা কর।
  • অথবা, পাকিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক আইন জারি হওয়ার পর্ব সম্পর্কে আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে সামরিক আইন ব্যবস্থা চালু হয়। উক্ত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা আইয়ুব খানের হাতে ছিল। আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানিদের উপর কেবলমাত্র নিজের মতামত চাপিয়ে দিয়েছিল। তাঁর শাসনব্যবস্থায় জনসাধারণের মতামতের কোনো . মূল্য ছিল না। এমনকি জনগণের কাছ থেকে তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ কেঁড়ে নেয়া হয়েছিল। দেশে এক স্বৈরাচারি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যার অত্যাচারে পাকিস্তানিরা অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল । তিনি নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য অতিমাত্রায় আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। নিরুপায় হয়ে পাকিস্তানিরা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করেছিল। আর দেশের আপামর জনগণের সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে আইয়ুব খান পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।

→ আইয়ুব খানের পতন বা ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া : আইয়ুব খানের পতন ঘটার সাথে সাথে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। আইয়ুব খানের পতন যেভাবে ঘটেছিল তা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :

১. গণআন্দোলনের সূচনা : আইয়ুব খানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় ১৯৬৮ সাল থেকে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে উক্ত আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। আইয়ুব বিরোধী উক্ত আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। আইয়ুব বিরোধী, মিছিল, সভা, ধর্মঘট, হরতাল সব সমান তালে চলতে থাকে ।

২. ১৪৪ ধারা জারিকরণ : গণআন্দোলনে দেশের আপামর জনসাধারণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করলে দিন দিন উক্ত গণ আন্দোলন আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। এরপর ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান পুলিশের গুলিতে শহিদ হলে আন্দোলন আরও চাঙ্গা হয়। সরকার এই গণআন্দোলন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু তবুও উক্ত গণঅভ্যুত্থানে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে ১০০ জন পূর্বপাকিস্তানি নিহত হয়।

৩. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বান : গণআন্দোলন শুধুমাত্র শহরে সীমাবদ্ধ ছিল না। ইহা গ্রামেও বিস্তার লাভ করেছিল। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মৌলিক গণতন্ত্রীদেরকে ত্যাগ করার আহ্বান জানালে প্রায় ৭৫% জনগণ উক্ত আহ্বানে সাড়া প্রদান করে। অনেক মৌলিক গণতন্ত্রীকে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। সকল স্কুল, কলেজের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল।

৪. ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যু : গণআন্দোলন যখন চরম ■ আকার ধারণ করে তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা পুলিশের বেয়নেট চার্জের ফলে শহিদ হয়েছিলেন। * তিনি তৎকালীন সময়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।

৫. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার : ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে গণআন্দোলন যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন সরকার দিশেহারা হয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সূচনা হয়। উক্ত মামলা প্রত্যাহারের সাথে সাথে সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অব্যাহতি দেয়। এছাড়াও দীর্ঘদিন বন্দি থাকা কমিউনিস্ট নেতাদেরও মুক্তি দেওয়া হয় ।

৬. আন্দোলনের পক্ষে মুজিবের আহ্বান : কারা মুক্তির পর শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মাননা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন সময়কার রেসকোর্স ময়দানে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন এগারো দফা দাবি এবং ছয়-দফা দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।

৭. গণআন্দোলনের ব্যাপক রূপ : শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়ার পর গণআন্দোলন আরও ব্যাপক হয়। গণআন্দোলনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বাঙালিদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ।

৮. DAC (ডাক) নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের আহ্বান : গণআন্দোলনকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ডাক (DAC) এর নেতাকর্মীদের সাথে আইয়ুব খান বৈঠকে বসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু ভাসানী ন্যাপ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি উক্ত বৈঠক নাকচ করে দেয়।

৯. বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর দাবি উপস্থাপন : আইয়ুব খানের আহবানে গঠিত বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমান যোগদান করেন। উক্ত বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগের ছয়-দফা দাবি এবং এগারো দফা দাবি উত্থাপন করেন। উক্ত দাবিসমূহকে বৈঠকে উপস্থিত কিছু নেতাকর্মীরা নাকচ করে দেন কিন্তু অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বঙ্গবন্ধুর পক্ষপাতিত্ব করেন ।

১০. বৈঠকে ২টি দাবির ক্ষেত্রে সম্মতি জ্ঞাপন : বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত দাবিসমূহের মধ্যে দুটি দাবি মেনে নেয়। সেগুলো হলো :

  • ফেডারেল সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে এবং 
  • প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার প্রদান করা হবে।

১১. বঙ্গবন্ধুর অসন্তোষ প্রকাশ : বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ছয়-দফা এবং এগারো দফা দাবির মধ্যে মাত্র দুটি দাবি মেনে নেওয়ায় বঙ্গবন্ধু অসন্তুষ্ট হন। তিনি বলেন দেশের আপামর জনগণ এ বিষয়টি মেনে নিবে না। তিনি আরও বলেন পাকিস্তান বাসী এ সিদ্ধান্তে খুশী হতে পারেনি।

১২. ডাক (DAC) থেকে আওয়ামী লীগ এবং মোজাফফর ন্যাপের প্রত্যাহার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক (DAC) থেকে আওয়ামী লীগকে অপসারণ করে নেন। এরপর মোজাফফর ন্যাপ ও ‘ডাক’ থেকে অপসারিত হয় বলে ‘ডাক’ ১৪ মার্চ তারিখে ভেঙে যায় ।

১৩. আওয়ামী লীগের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মিছিলের আহ্বান : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীবৃন্দ পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে মিছিল করে। এসময় জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামি সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন সৃষ্টি হয়।

১৪. আইয়ুব খানের চূড়ান্ত পতন : ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ আইয়ুব খানের হাতে বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা এবং ১১ দফা দাবির খসড়া হাতে আসলে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানকে ভেঙ্গে ৪টি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে। এমতাবস্থার তিনি সেনাবাহিনীর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন এবং ক্ষমতায় আসেন তৎকালীন পাকসেনা জেনারেল ইয়াহিয়া খান। এভাবে পাকিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তান থেকে আইয়ুব খান বিতাড়িত হওয়ার পরেও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দ্বিতীয়বারও ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হয়। কিন্তু ইয়াহিয়া খান প্রতিশ্রুতি দেন যে, প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে উক্ত প্রদেশ থেকে সামরিক শাসনব্যবস্থা অপসারিত হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। আর দেশে স্বায়ত্তশাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইয়াহিয়া খান তালবাহানা শুরু করেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ