আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ ।

আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ
আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ

আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ

  • আইয়ুব খানের শাসন আমলের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
  • অথবা, আইয়ুব খানের শাসন আমলের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করার পর আইয়ুব খান পাকিস্তানের আপামর জনগণের অধিকারকে জিম্মি রেখেছিলেন। তাঁর শাসনব্যবস্থা দায়দায়িত্বহীন এবং প্রচলিত আইন বিরোধী শাসনব্যবস্থা হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই শাসনব্যবস্থাকেই আইয়ূব খানের শাসনব্যবস্থা হিসেবে প্রকাশিত হয়। তিনি নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য মৌলিক গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন ।

→ আইয়ুব শাসনের বৈশিষ্ট্য : আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জার হাত থেকে ক্ষমতা দখর করে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। নিম্নে

আইয়ুব খানের দীর্ঘ প্রায় ১১ বছরের শাসন আমলের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :

১. ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল থাকবে : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভ করলে দীর্ঘ নয় বছর সময় লাগে সংবিধান প্রণয়ন করতে । অবশেষে ১৯৫৬ সালে সংবিধান প্রণয়ন হয় কিন্তু গণতন্ত্র ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় প্রথমে ইস্কান্দার মির্জা ও পরে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরে আইয়ুব খান এক আদেশ বলে ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল না করে স্থগিত রাখেন ।

২. প্রাদেশিক সরকারের বিলুপ্তি : আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। তিনি পাকিস্তানের প্রদেশ বিলুপ্ত ঘোষণা করে সমগ্র পাকিস্তানকে কেন্দ্র থেকে শাসন করার পদ্ধতি অবলম্বন করেন। তার শাসনামলে প্রাদেশিক সকল সরকারের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয় ।

৩. জাতীয় পার্লামেন্টের বিলুপ্তি : আইয়ুব শাসনামলের পূর্বে ১৯৫৬ সালের গণপরিষদের সংবিধান প্রণয়ন ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে যে পার্লামেন্ট ছিল আইয়ুব খান জাতীয় গণপরিষদ বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। অবশেষে আইয়ুব খান জাতীয় পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। আইয়ুব শাসন আমলের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এটি।

৪. রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ : আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে আইয়ুব খান সকল প্রকার রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ করা হয়। এর মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব হয়, যা আইয়ুব শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ।

৫. বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সেনাশাসন বহাল থাকবে : আইয়ুব খান তার ক্ষমতা বলে এক আদেশ জারি করেন। যতদিন পর্যন্ত কোনো সুষ্ঠু বিকল্প ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সামরিক শাসন অব্যাহত থাকবে। এ কথার প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকেন।

৬. প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্তি : আইয়ুব খান তার শাসন প্রারম্ভে ১৯৫৮ সালে । সমগ্র পাকিস্তানকে একটি পাকিস্তানে পরিণত করেন। তিনি এক আদেশ বলে প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেন, যা আইয়ুব শাসন আমলের এক অনবদ্য বৈশিষ্ট্য ছিল।

৭. রাজনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা : আইয়ুব গতানুগতিক শাসনব্যবস্থা, বাতিল করে মৌলিক গণতন্ত্র নামে নিত্যনূতন শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করার পরিকল্পনা হাতে নেন। অতঃপর ১৯৬২ সালে প্রাণীত সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করেন, যা আইয়ুব শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।

৮. ১৯৬২ সালের সংবিধান প্রণয়ন : আইয়ুব খান ১৯৫৬ সালের সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করেন। তার চার বছর পর ১৯৬২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেন। এ সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রচলন। এছাড়াও এ সংবিধানে গণভোটের ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। যা আইয়ুব খানের শাসন আমলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৯. একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা : আইয়ুব শাসনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। আইয়ুব খান সকল ক্ষমতা এক হাতে কেন্দ্রীভূত করেন। যাতে সকল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিলীনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ।

১০. সরকারবিরোধী আন্দোলন : আইয়ুব সরকার এক পর্যায়ে বেসামরিকীকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে চায় কিন্তু জনগণ তা সমর্থন করেনি। তাছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেন। শেখ মুজিব ছয়-দফা দাবি জানালে আইয়ুব সরকার দমনপীড়ন শুরু করে।

১১. মামলা দায়ের : আইয়ুব সরকারের শাসনামলে পূর্ব- পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামজিক বৈষিম্য প্রকট আকার ধারণ করে। এ পর্যায়ে শেখ মুজিব ছয়-দফা ঘোষণা করলে আইয়ুব সরকার তাকে রাষ্ট্রদোহী ঘোষণা করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন ।

১২. দমনপীড়ন : আইয়ুব সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দমনপীড়ন। শেখ মুজিব ছয়-দফা দাবি পেশ করলে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের নামে মিথ্যা মামলা করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু জনগণের তীব্র আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

১৩. সামরিক হস্তক্ষেপের সূচনা : ১৯৪৭ সালে ভারত- পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করলেও বিভিন্ন কারণে পাকিস্তানে গণতান্তিক সরকার গড়ে উঠেনি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হলেও জয়লাভকারী দল যুক্তফ্রন্টের হাতে তার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি। ফলে রাজনৈতিক অবস্থায় অস্থিরতা বিরাজ করলে সামরিক হস্তক্ষেপের সূত্রপাত হয়।

১৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব : আইয়ুব খানের শাসনামলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আইয়ুব খান ১৯৬২ সালের সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করেন । কোনো আইন বা বিধিবিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণার ক্ষমতা বিচার বিভাগের ছিল না।

১৫. রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত শাসন : আইয়ুব খানের ১৯৬২ সালের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রীদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত হয়নি। এটিও আইয়ুব শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।

১৬. মৌলিক গণতন্ত্র : আইয়ুব সরকার ১৯৫৯ সালের ২৬ অক্টোবর মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারি করেন। এ দ্বারা ৫ স্তর বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির একটি কাঠামো সৃষ্টি করা হয়। স্তরগুলো হলো : ১. ইউনিয়ন কাউন্সিল, ২. থানা কাউন্সিল, ৩. জেলা কাউন্সিল, ৪. বিভাগীয় কাউন্সিল ও ৫. প্রাদেশিক কাউন্সিল । আইয়ুবের এই মৌলিক গণতন্ত্র ‘বুনিয়াদি গণতন্ত্র' নামেও পরিচিত।

১৭. গণতন্ত্রের মূল্যে কুঠারাঘাত : আইয়ুব খান ছিলেন সামরিক শাসক; তিনি সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিনষ্ট করে। পরবর্তীতে তিনি গণতন্ত্রের নামে মৌলিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রহসন চালান। মূলত তিনি গণতন্ত্র ভুলুণ্ঠিত করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের শাসনামল বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। উক্ত সময়ে বাঙালি জাতি পদে পদে নির্যাতিত এবং অত্যাচারিত হয়। আইয়ুব খানের মনগড়া এই শাসনব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের হিমশিম খেতে হয়। মূলত তাঁর শাসনব্যবস্থা তথা সামরিক শাসনব্যবস্থা একটি মানবতা বহির্ভূত শাসনব্যবস্থা। উক্ত শাসনব্যবস্থায় অনেক রাজনীতিবিদের উপর মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদেরকে কলঙ্কিত করা হয়েছে এমনকি রাজনৈতিক দলসমূহকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর এগুলো আপামর জনসাধারণের জন্য চরম অপমানজনক ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আইয়ুব খানের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য লিখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ