গণ অভ্যুত্থান কি | ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায়

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গণ অভ্যুত্থান কি | ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায় জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গণ অভ্যুত্থান কি | ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায় ( mass uprising of 1969 in bangladesh )।

গণ অভ্যুত্থান কি  ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায়
গণ অভ্যুত্থান কি  ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায়

গণ অভ্যুত্থান কি | ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায়

  • ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ ।
  • অথবা, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান কি?
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভুত্থান সম্পর্কে কি জান? 

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৬৯ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের এক দশকের মৌলিক গণতন্ত্রের অভিশাপে উত্তপ্ত পূর্ব পাকিস্ত ানের সংক্ষুব্ধ জনগণের তীব্র আন্দোলনই গণ-অভ্যুত্থান নামে খ্যাত। মূলত এ আন্দোলন তথা গণ-অভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তানের ইতিহাস ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এক অনন্য সংযোজন ।

৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান বাঙালি জাতির ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা। ছাত্র সমাজের ১১ দফা এবং আওয়ামী লীগের ৬-দফার ভিত্তিতে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি । সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন জরুরি আইন প্রত্যাহার প্রভৃতি দাবিতে ছাত্রজনতার আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ছাত্র-সমাজের ১১ দফা এবং জনতার ৬-দফা দাবিকে রাষ্ট্র বিরোধী বলে ঘোষণা করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা সাজিয়ে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। এর ফলে সমগ্র বাংলাদেশে ছাত্র জনতা আন্দোলনের রুদ্ররোষে ফেটে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়।

ছাত্র জনতার ১১ দফা এবং আওয়ামী লীগের ৬-দফা দাবি উপেক্ষিত হলে ১৯৬৯ সালে সমগ্র দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। সরকার এ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য সমগ্র বাংলায় জরুরি অবস্থা ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র-জনতা একে অমান্য করে রাস্তায় নেমে পড়ে ফলে শুরু হয় প্রচণ্ড আন্দোলন ও বিক্ষোভ মিছিল। এ সময়ে সরকারি নির্দেশে মিছিলের ওপর গুলি চালালে নিহত হয় আসাদুজ্জামানসহ বহু সাধারণ মানুষ। ফলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল মৌলিক অধিকার আদায়ের শপথ নিয়ে ৮ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে “গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করে। ফলে দেশের সর্বত্র চলতে থাকে আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলন। এভাবে প্রচণ্ড আন্দোলনের ফলে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আইয়ুব খান এক গোল টেবিল বৈঠক আহ্বান করে। শেখ মুজিব বৈঠকে যোগ দেন কিন্তু পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় তিনি এ বৈঠক বর্জন করেন। ফলে পুনরায় শুরু হয় তীব্র আন্দোলন গণবিক্ষোভ। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রোধ করতে ব্যর্থ হয়ে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ সকল ক্ষমতা প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের হাতে অর্পণ করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। দ্বিতীয়বার দেশে জারি হয় সামরিক আইন। এভাবে ৬৯ সালে গণ-আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয় এবং এর পথ ধরেই ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।

১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরাচারী শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনগণ ছাত্র সমাজের ১১ দফা এবং আওয়ামী লীগের ৬-দফার পতাকাতলে সমবেত হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বঞ্চনা, শোষণ এবং ক্ষোভ শেষ পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয় এবং আইয়ুব খানের দীর্ঘদিনের লালিত স্বৈরশাসনের প্রাসাদ ধূলিসাৎ হয়ে যায়। শুধু কেন্দ্রে ক্ষমতার পরিবর্তন নয় ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শ্রেণিহীন ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা ও ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিবাদ হয়। বস্তুত শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সুদৃঢ় চেতনা আমরা দেখতে পাই ছাত্র সমজের ১১ দফা ও ১৯৭০ সালের আওয়ামী মেনিফেস্টোতে। ৬৯-এর গণ- অভ্যুত্থানের পথ বেয়েই স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থানের ফলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ রচিত হয়। এ আন্দোলনকে পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ততদিনে আইয়ুব খানের ক্ষমতার ভিত বেগে ওঠে। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে অবশেষে পাকিস্তানের লৌহমানব বলে খ্যাত আইয়ুব খানের পতন ঘটে। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই পূর্ব বাংলার জনগণ নিজেদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সংগ্রামে লিপ্ত হয় এবং স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ গণ অভ্যুত্থান কি | ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায়

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গণ অভ্যুত্থান কি | ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কি বুঝায় । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ