১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর ।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর
 ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর

  • ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর।
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর ।
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের বিবরণ দাও । 
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৬৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় এক অভূতপূর্ব গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল। পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ, বিশেষত ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (দুই অংশ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এ গণ-আন্দোলন সৃষ্টির কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থানে ছাত্রদের এগার দফা দাবির ভূমিকা ছিল অসাধারণ। বস্তুতপক্ষে ছয় দফা দাবির সাথে এগার দফা দাবির সংমিশ্রণে গণ-অভ্যুত্থান অজেয় হয়ে উঠে। নিম্নে এগার দফা কর্মসূচির গুরুত্ব/ ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

১. কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা : ছয় দফা কর্মসূচি রচিত হয়েছিল পূর্ববাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থকে সংরক্ষণ করার জন্য । কিন্তু এগার দফা কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল পূর্ববাংলার ছাত্রসহ কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা। দেশের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।

২. গণ-আন্দোলনকে গতিশীল করা : ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকার এক জনসভায় পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের দাবি- দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে গণ-আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এ আন্দোলনে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী সকলেই সমর্থন জানায়। ১৯৬৮ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকা শহরে হরতাল পালিত হয় এবং পুলিশের গুলিতে অনেক লোক নিহত হয়। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বিখ্যাত এগার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলে আন্দোলনের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে ।

৩. SAC এর কার্যক্রম বৃদ্ধি : ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ববাংলা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং জাতীয় ফেডারেশনের” একাংশ মিলিত হয়ে SAC (Student Action Committee) গঠন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ SAC-এর সভাপতি নিযুক্ত হন। SAC বা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আইয়ুব- মোনায়েম বিরোধী গণ-আন্দোলনে মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ।

৪. DAC-এর গঠন : ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের এগার দফা কর্মসূচি ঘোষিত হলে SAC-এর আইয়ুব মোনায়েমের বিরোধী আন্দোলন আরো সুসংহত রূপ ধারণ করে। জনগণ ছাত্র সমাজের ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয় এবং আইয়ুব-মোনায়েমের দুঃশাসনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ছাত্রদের এ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৮টি রাজনৈতিক দল ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি DAC (Democratic Action Committee) গঠন করে । ফলে গণ-অভ্যুত্থান আরো জোরদার হয়ে উঠে ।

৫. সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছাত্রদের এগার দফা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এগার দফার একটি গুরুত্বপূর্ণ দফা ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন। পূর্ববাংলার জনগণ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নকল্পে ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থানে এ আন্দোলনকে জোরদার করে। সুতরাং ছাত্রদের এগার দফা ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে ।

৬. সকল রাজবন্দির মুক্তি : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সকল রাজবন্দির বিনাশর্তে মুক্তি প্রদানের লক্ষ্যে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এটা ছাত্রদের এগার দফার মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং ছাত্রদের এগার দফা ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সকল রাজবন্দির মুক্তির আশায় ছাত্র-জনতা এক হয়ে আন্দোলন শুরু করে । তাই এ আন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

৭. স্বায়ত্তশাসন প্রদানে পাকিস্তানি শাসকদের অনীহা : ১৯৪০ সালে স্বায়ত্তশাসনের ধারা সম্বলিত লাহোর প্রস্তাবের আলোকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বরাবরই পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে উদাসীন ছিল। ১৯৪৯ সালে পূর্ব বাংলার প্রথম স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপিত হলেও এটার চূড়ান্ত রূপ দেখা ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের প্রাক্কালে ।

৮. ১৯৬৫ সালের সংবিধানে স্বায়ত্তশাসন অবহেলা : ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়। সংবিধানে বিভিন্ন ধারার সমাবেশ ঘটানো হলেও স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারটি অবহেলা করা হয়। সেটা পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে

৯. সামরিক শাসন জারি : ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর আইয়ূব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন এবং সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন এবং EBDO জারি করে পাকিস্তানের সকল শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তোলে। ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং আইয়ুবের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ।

১০. ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন : ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে। এ আন্দোলন ১৯৬৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সকল শ্রেণির জন্য প্রেরণার উৎস ছিল ছাত্ররা। পরবর্তীতে এ আন্দোলন সামরিক শাসক আইয়ুবের বিভিন্ন নির্যাতনমূলক পদক্ষেপের কারণে গণআন্দোলনে রূপ নেয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থান তথা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে ছাত্রদের এগার দফা দাবি ছিল যথেষ্ট গুরুত্ববহ। এগার দফা কর্মসূচি সমগ্র পূর্ববাংলায় ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে ঐক্য ও সংহতিবোধ দৃঢ়তর করে। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবোধ শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদপুষ্ট চিন্তা- চেতনাই আইয়ুব সরকারের পতন ডেকে আনে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ