১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর ।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর

  • ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের কারণ ও গুরুত্ব/তাৎপর্য আলোচনা কর ।
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণঅভুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর।
  • অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের কারণ ও গুরুত্ব/তাৎপর্য মূল্যায়ন কর।

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাইশ বছরের শাসন শোষণে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যখন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, তখন কয়েকজন সামরিক অফিসারসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয়। এ চক্রান্ত নস্যাৎ করার জন্য ছাত্র জনতা ছয়-দফা ও এগারো দফার ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী যে বিস্ফোরণ ঘটায়, তাই গণ-অভ্যুত্থান নামে পরিচিত

— ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের কারণসমূহ : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. সামরিক স্বৈরশাসন : ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ঘোষিত সামরিক শাসনের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে যেভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভাবধারা, ধ্যান-ধারণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বিপর্যস্ত হয়। তার প্রতিবাদস্বরূপ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সূচিত হয় এ গণ-অভ্যুত্থান ।

১. সামরিক স্বৈরশাসন : ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ঘোষিত সামরিক শাসনের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে যেভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভাবধারা, ধ্যান-ধারণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বিপর্যস্ত হয়। তার প্রতিবাদস্বরূপ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সূচিত হয় এ গণ-অভ্যুত্থান ।

২. পাকিস্তানের দু'অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্য : আইয়ুবের শাসনামলে বিদ্যমান পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে পর্বত প্রমাণ আঞ্চলিক বৈষম্য (Regional Economic Disparity) ক্রমে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তি রচনা করে। আইয়ুবের সামরিক শাসনামলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় তা পশ্চিম পাকিস্তানের মাত্র কয়েকটি পরিবারের হাতে সম্পদের বিপুল সমাবেশ ঘটায়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিরাট বৈষম্য দেখা দেয়।

৩. স্বার্থান্ধদের ক্ষমতার অপব্যবহার : ১৯৬২ সালের সংবিধান অনুযায়ী সমগ্র পাকিস্তানে গণবিরোধী ও অশুভ শক্তির ক্রমাগত ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে মৌলিক গণতন্ত্রী (Basic Democrats) ও অন্যান্য স্বার্থান্ধ ব্যক্তিবর্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতার অপব্যবহার গণ-অভ্যুত্থান ত্বরান্বিত করে।

৪. আমলাব্যবস্থার অত্যধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি : পাকিস্তানে বেসামরিক আমলাতন্ত্রের পাশাপাশি সামরিক আমলাতন্ত্রের অত্যধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের গণস্বার্থ বিরোধী তৎপরতা ও ভূমিকার প্রতিবাদ হিসেবে সৃষ্ট হয় এ গণ-অভ্যুত্থান ।

৫. ক্ষমতাসীনদের চরম অবহেলা : পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাবি দাওয়ার প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের চরম অবহেলা ও ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে গড়ে উঠেছিল উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ।

৬. বাঙালিদের স্বকীয়তা ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা : বাঙালিদের স্বকীয়তা ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে সূচিত হয়েছে এ গণ-অভ্যুত্থান ।

৭. উন্নয়ন দশক উদযাপন : ১৯৬৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসক মোহাম্মদ আইয়ুব খান তাঁর শাসনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জাঁকজমকের সাথে উন্নয়ন দশক উদযাপন করেন। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় ঘটে। গণতন্ত্রকামী জনগণও আয়োজনকে গ্রহণ করেননি ।

৮. আসাদ, সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ড. শামসুজ্জোহার শাহাদাৎ : ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদের শাহাদাৎ ১৫ জানুয়ারি প্রহরারত সৈনিকদের গুলিতে সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহার শাহাদাৎ বরণ চলমান আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তরিত করে।

যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের অধিকারের প্রতি সোচ্চার হয়েছে। তারা তাদের অধিকার চায়। শেখ মুজিব যখন বাঙালিদের অধিকার আদায়ের জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। তখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের প্রাণপ্রিয় নেতা বাঙালিদের অধিকার আদায়ের অগ্রদূত শেখ মুজিবকে ঠেকাতে তার নামে মামলা করে। কিন্তু বাঙালি জাতি তা মেনে নেয়নি। তারা তাদের প্রাণ প্রিয় নেতাকে রক্ষার জন্য ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের ডাক দেয় । যা বাঙালিদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ।

— ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব/তাৎপর্য : নিম্নে ১৯৬৯ । সালের গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করা হলো :

১. আইয়ুব খানের পতন : শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান না হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য = জনগণকে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করলে ■ পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার অভিপ্রায়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব খান ১৯৬৯ । সালের ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াহিয়া খানের উপর শাসন ক্ষমতা অর্পণ করে রাজনীতি থেকে চিরবিদায় নেন। এভাবে আইয়ুব খানের এক দশককালীন সামরিক শাসনের অবসান ঘটে।

২. আগরতলা মামলা প্রত্যাহার : ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব-মোয়ানেম চক্র ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে ভীত হয়ে আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

৩. গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান : ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থান প্রশমনের জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এক গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করে ।

৪. ১৯৭০ সালে নির্বাচন : এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থার অবনতি ঘটে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

৫. জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : এ আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয়। আর জাতীয়তাবোধের ওপর ভিত্তি করেই তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেয় এবং ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য।

৬. স্বৈরাচারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক মানসিক তৈরি : গণ- অভ্যুত্থানের ফলে জনগণের মধ্যে স্বৈরাচারবিরোধী মানসিকতা গভীরভাবে প্রোথিত হয়। বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য জনগণ সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকারের জন্যও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়।

৭. একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটি পুনর্বহাল : ১৯৬৯ এর গণ- অভ্যুত্থানের ফলে জাতীয় চেতনার প্রতীক ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পূর্বের মর্যাদা ফিরে পায়। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছুটির দিন ঘোষণা করেছিল । কিন্তু ১৯৫৮ সালের সামরিক আইন জারির পর এ ছুটি বাতিল হয়ে যায় ।

৮. স্বাধীনতা অর্জন : পাকিস্তান সামরিক জান্তা এ গণ- আন্দোলনকে স্তব্ধ করার শত প্রচেষ্টা চালিয়েও সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। এ আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার যে মহান ব্রত নেয় তা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাস্তব রূপ লাভ করে ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একক কোনো কারণে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়নি; বরং এর পেছনে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ বিদ্যমান ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা এ আন্দোলন নস্যাৎ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নিকট তাদের হার মানতে হয়। ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই আইয়ুব খানের পতন ঘটে। দীর্ঘ তিন বছর গণ-আন্দোলন চালিয়ে পূর্ব পাকিস্তানিরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী হয় । জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 17 August

    Copy kora jay na kno

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ