মহানবী সাঃ এর মদিনায় হিজরতের কারণ ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মহানবী সাঃ এর মদিনায় হিজরতের কারণ ও গুরুত্ব জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মহানবী সাঃ এর মদিনায় হিজরতের কারণ ও গুরুত্ব  টি।

মহানবী সাঃ এর মদিনায় হিজরতের   কারণ ও গুরুত্ব
মহানবী সাঃ এর মদিনায় হিজরতের   কারণ ও গুরুত্ব

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মক্কা হতে মদিনায় হিজরতের কারণ ও অবস্থা বর্ণনা কর

উত্তর : ভূমিকা : বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসে হিজরত একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। যুগে যুগে যারাই ইসলামের আদর্শ প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের কেউই নিজ জন্মভূমিতে সমাদৃত হননি। নিজ জন্মভূমিতে তারা হয়েছেন লাঞ্ছিত, উপেক্ষিত আর নির্যাতিত। মানবতার মহান শিক্ষক মহানবি (সা.)-এর জীবনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কুরাইশদের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করে মহানবি (সা.) ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটান। এই হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা ঘটায়। ঐতিহাসিক যোসেফ হেলো বলেন, “Hizrat is the greatest turning point in the history of Islam".

→ হিজরতের পরিচয় : হিজরত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ প্রস্থান বা গমন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়ত প্রাপ্তির পর ১৩টি বছর মক্কায় ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু এমন একটি সময় উপনীত হলো যখন তার প্রতি মক্কার কুরাইশদের নির্যাতনের মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করল। ঠিক এমনই এক কঠিন সময়ে আল্লাহর নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হজরত আবু বকরকে সাথে নিয়ে স্বদেশ ও পুণ্যভূমি মক্কা ছেড়ে তিনি মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ইতিহাসে এটাই হিজরত নামে পরিচিত ।

→ হিজরতের কারণসমূহ : হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হিজরতের পেছনে অনেকগুলো কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. প্রাকৃতিক প্রভাব : অনুর্বর ও পর্বতময় মক্কার অধিবাসীরা শুষ্ক জলবায়ু ও উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য বদমেজাজী, জড়বাদী ও রুক্ষ স্বভাবের ছিল। অপরদিকে মদিনার সুশীতল স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া ও শস্য-শ্যামলা ভূমি অধিবাসীদেরকে মার্জিত, দয়ালু, পরোপকারী ও নম্রস্বভাবী রূপে গড়ে তোলে। ফলে মদিনায় আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করা মহানবির (সা.) পক্ষে সহজ হয়।

২. মনস্তাত্ত্বিক কারণ : বিশ্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মহাপুরুষগণ তার নিজ দেশেই সবচেয়ে বেশি বিরোধিতার সম্মুখীন হন। মহানবির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাই মক্কায় যখন তার প্রতি নির্যাতন ও বিরোধিতা চরম আকার ধারণ করে, তখন তিনি মদিনায় হিজরত করেন।

৩. কৌলীন্য ও আভিজাত্য : আভিজাত্য ও কৌলীন্য প্রথা রক্ষণশীল বিধর্মী কুরাইশদের মধ্যে এরূপ মজ্জাগত ছিল যে, ইসলামের সাম্য ও শান্তির বাণীতে এই প্রথা ছিন্নভিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। ফলে অভিজাত শ্রেণি মহানবিকে সহ্য করতে পারেনি। আমীর আলী যথার্থই বলেন, “পূর্বতন বৈষম্য দূরীভূত করিয়া সকলকে সমান অধিকার প্রদান তাদের রীতিনীতি বিরুদ্ধ ছিল”।

৪. কুরাইশদের নির্যাতন : মক্কায় প্রকাশ্য ইসলাম প্রচার করায় এবং ইসলামের 'প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে নিজেদের স্বার্থহানীর আশংকায় কুরাইশরা মহানবির উপর চরম নির্যাতন চালায়। ফলে তিনি হিজরত করতে বাধ্য হন।

৫. পুরোহিত্যের দম্ভ : মক্কার কাবা গৃহের সেবক হিসেবে কুরাইশরা একচেটিয়া পুরোহিত্য করতো। পৌত্তলিকতার পরিবর্তে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হলে কুরাইশরা তাদের আর্থিক ক্ষতির আশংকায় মুসলমানদের উপর অমানুসিক অত্যাচার শুরু করে।

৬. আউস ও খাজরাজ গোত্রের আমন্ত্রণ : হিজরতের প্রাক্কালে মদিনায় আউস ও খাজরাজ গোত্রে কলহ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এ অবস্থায় তারা রাজনৈতিক সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবির ন্যায় একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অপেক্ষায় ছিলেন। কাজেই মহানবিকে তারা তাদের বিবাদের মধ্যস্থতাকারী উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করে হিজরতের জন্য আমন্ত্রণ জানান ।

৭. মদিনার আন্তর্জাতিক পরিবেশ : রাজনৈতিক কারণে মদিনার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মদিনা আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়। তাই ইসলামকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিত করার লক্ষ্যে মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করেন।

৮. আত্মীয়তার সম্পর্ক : পিতা আব্দুল্লাহ ও প্রপিতামহ হাসিম মদিনায় বিবাহ করেছিলেন। এই সম্পর্কের কারণেই || মদিনাবাসী মহানবির প্রতি ছিল সহৃদয় ও আন্তরিক। এছাড়া মাতৃকূলের দিক দিয়ে মদিনার সাথে মহানবির আত্মিক সম্পর্ক তার মদিনায় হিজরতের অন্যতম কারণ।

৯. মুসাবের অনুকূল রিপোর্ট : মদিনাবাসীর আমন্ত্রণে মহানবি (সা.) হিজরতের পূর্বে তার সহচর মুসাবকে মদিনার পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। মুসাব মদিনার ব্যাপারে অনুকূল রিপোর্ট দিলে মহানবি হিজরত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

১০. আকাবার শপথ : মদিনাবাসীরা আকাবা নামক স্থানে এসে পরপর দু'বার রাসূল (সা.)-কে মদিনায় হিজরত করার জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। এতে মহানবি (সা.) হিজরত করতে উদ্বুদ্ধ হন।

১১. হত্যার পরিকল্পনা : কুরাইশদের অত্যাচার সত্ত্বেও ইসলাম দিন দিন প্রসার লাভ করতে থাকে। এর ফলে তারা সর্বসম্মতিক্রমে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করে । তাই জীবন রক্ষার্থে তিনি মদিনায় হিজরত করেন।

১২. প্রত্যাদেশ লাভ : মক্কায় যখন হজরত মুহাম্মদ (সা.)- এর নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়, তখন আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ আসে হিজরতের জন্য মদিনায় যাওয়ার।

→ হিজরতের সময় মদিনার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি : নিচে হিজরতের প্রাক্কালে মদিনার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্ণনা করা হলো :

১. অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা : মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনা হিজরতের পূর্বে মদিনার সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। মদিনায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোনোকেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। আমীর আলী বলেন, “In the days of which we are speaking, there were no law or order in any city in Arabia. Different factions were at strife with each othe and general lawlessness and confution prevailed in the penisula."

২. সুষ্ঠু ও সামাজিক জীবনবোধের ধারণা : সুষ্ঠু ও সামাজিক জীবনবোধের ধারণা মদিনাবাসীদের মধ্যে একেবারেই ছিল না। সুষ্ঠু ও সামাজিক জীবনের ধারণা বোধ তাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল।

৩. আউস ও খাজরাজের বিবাদ : মহানবি (সা.)-এর হিজরতের পূর্বে মদিনায় আউস ও খাজরাজ নামে দুটি প্রসিদ্ধ গোত্র ছিল। এরা ছিল স্বার্থান্বেষী। কারো স্বার্থে আঘাত লাগলে কেউ কাউকে এক বিন্দুও ছাড় দিত না। পরস্পর দু'টি গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এভাবে গোত্রদ্বয় পরস্পর হিংসাত্মক কলহ বিবাদে লিপ্ত ছিল।

৪. স্বার্থান্বেষী ইহুদি সম্প্রদায় : মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় তিনটি শাখায় বিভক্ত ছিল। যথা— বনু কাইনুকা, বনু নাদির এবং বনু কুরাইজা। বনু কাইনুকা খাজরাজ পক্ষ এবং বনু নাদির ও বনু কুরাইজা আউসের পক্ষ সমর্থন করেছিল। তারা তুলনামূলকভাবে সংঘবদ্ধ ও সভ্য ছিল। ব্যবসায়-বাণিজ্য করে তারা অনেকটা উন্নত| জীবনযাপন করতো। এদের চক্রান্তে পড়ে মদিনার অন্যান্য অধিবাসীগণ উদ্বেগ ও সংশয়ের মধ্যে কালাতিপাত করছিল। এদের চক্রান্তে আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে বুয়াস যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

৫. ধর্মীয় অবস্থা : মহানবি (সা.) মদিনা হিজরতের পূর্বে সেখানে তিনটি ধর্মমত প্রচলিত ছিল। যথা-ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক। তারা নানা প্রকার কুসংস্কার এবং খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল। ইহুদি ৩ খ্রিস্টানরা তাদের স্ব-স্ব ধর্ম বিকৃত অবস্থায় পালন করতো। পৌত্তলিকরা মূর্তি পূজা ও সূর্যের পূজায় লিপ্ত ছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হিজরত ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিভিন্ন গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনায় হিজরতের গুরুত্ব অপরিসীম। হিজরতের পর থেকে ইসলামের প্রচার ও প্রসার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ইসলামের। ইতিহাসের এক নতুন যুগের সূচনা করে। সুতরাং একথা। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, হিজরত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের সফলতার চাবিকাঠি এবং আদর্শ বাস্তবায়নের সহায়ক।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মক্কা হতে মদিনায় হিজরতের কারণ ও অবস্থা বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মক্কা হতে মদিনায় হিজরতের কারণ ও অবস্থা বর্ণনা কর  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ