হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর  টি।

হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর
হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর

হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর

 উত্তর : ভূমিকা : ইসলাম বা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে আসীন করতে যে কয়টি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা গুরুত্বের দাবিদার, হুদায়বিয়ার সন্ধি তার মধ্যে অন্যতম ৷ এটা মুসলমানদের স্বার্থের সরাসরি প্রতিকূল মনে হলেও এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল মুসলমানদের স্বার্থের অনুকূলে। এর ফলে মক্কা বিজয়ের পথ সহজ হয়ে যায়। মহানবি (সা.)-এর এ| সন্ধি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং শান্তির এবং শান্তির প্রতি একাগ্রতা, সর্বোপরি মহানবি (সা.)-এর মহান গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে অম্লান হয়ে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এটাকে প্রকাশ্যে বিজয় বলে ঘোষণা করেছেন।

→ হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপট : নিচে হুদায়বিয়া সন্ধির প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো :

১. যাত্রা শুরু : দীর্ঘদিন মাতৃভূমি মক্কা থেকে দূরে থাকায় রাসূল (সা.) মক্কায় আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তারই ফলস্বরূপ ৬২৮ সাল মোতাবেক ৬ষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে মাতৃভূমি দর্শন ও উমরাহ ব্রত পালনের জন্য ১৪০০ সাহাবিসহ মদিনা থেকে মক্কার দিকে রওয়ানা হন। মহানবি (সা.) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে মক্কার পথে রওয়ান হয়েছেন এ সংবাদ শুনে মক্কার কাফেররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে খালিদ ও ইকরামার নেতৃত্বে তাদের বাধা দেওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। মহানবি (সা.) কুরাইশদের বাধা দানের সংবাদ শুনে অন্য পথে মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে তাবু স্থাপন করেন।

২. বায়াতুর রেজওয়ান : মহানবি (সা.) প্রথমে বুদাইল মারফত জানালেন যে, পবিত্র হজব্রত পালন ছাড়া আর তাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু কুরাইশরা তা কর্ণপাত করল না। অতঃপর মহানবি (সা.) প্রথমে খারাজ বিন উমাইয়া ও পরে ওসমান বিন আফফানকে আপোস আলোচনার জন্য পাঠালেন। কুরাইশরা ওসমানকে (রা.)-কে আটকে রাখলে মুসলিম শিবিরে গুজব রটে যে, কাফেররা ওসমান (রা.)-কে হত্যা করেছে। কুরাইশদের অনমনীয় মনোভাব লক্ষ করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বুঝতে পারলেন, যুদ্ধ ছাড়া কাজ হবে না। তখন সবাইকে ডেকে আমরণ যুদ্ধের শপথ নেন । এটাই ইতিহাসে বায়াতুর রেজওয়ান নামে পরিচিত।

৩. সন্ধি স্থাপন : মুসলমানদের এ দৃঢ় শপথের কথা শুনে কাফেররা ওসমান (রা.)-কে মুক্ত করে দিয়ে সোহায়েল বিন আমরকে দিয়ে সন্ধির প্রস্তাব পাঠায়। ফলে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬ষ্ঠ হিজরিতে উভয়ের মধ্যে এক সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

→ হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তাবলি : হুদায়বিয়ার সন্ধি অসংখ্য শর্তাবলি নিয়ে সংঘটিত হয়েছে। এ অসংখ্য শর্তাবলির কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আলোচনা করা হলো :

প্রথমত, মুসলমানগণ এ বছর হজ পালন না করে মদিনায় ফিরে যাবে।

দ্বিতীয়ত, পরবর্তী বছর মুসলমানরা হজ পালনের জন্য মক্কায় আসতে পারবেন এবং তিনদিনের জন্য মক্কায় অবস্থান করতে পারবেন । এই তিন দিন কুরাইশরা মক্কার বাইরে অবস্থান করবে।

তৃতীয়ত, মুসলমানগণ যখন হজ পালনের জন্য আসবে তখন শুধু আত্মরক্ষার জন্য কোষবদ্ধ তরবারি ছাড়া আর অন্য কিছুই সঙ্গে আনতে পারবে না ।

চতুর্থত, হুদায়বিয়ার সন্ধি ১০ বছরের জন্য স্থায়ী হবে ৷

পঞ্চমত, কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রকার যুদ্ধ- বিগ্রহ আগামী দশ বছরের জন্য বন্ধ থাকবে।

ষষ্ঠত, কোনো মুসলমান স্বেচ্ছায় মক্কা থাকতে চাইলে মুসলমানগণ কোনো আপত্তি করতে পারবে না।

সপ্তমত, কোনো মক্কাবাসী মদিনায় আশ্রয় চাইলে মদিনার মুসলমানগণ তাকে আশ্রয় দিতে পারবে না। পক্ষান্তরে কোনো মদিনাবাসী মুসলমান মক্কায় আশ্রয় নিলে মক্কাবাসী তথা কুরাইশগণ তাকে ফিরত দিতে বাধ্য থাকবে না।

অষ্টমত, মক্কার কোনো নাবালক তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মুসলমানদের দলে যোগ দিতে পারবে না। যোগদান করলে তাকে ফেরত দিতে হবে।

নবমত, চুক্তির মেয়াদকালে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে এবং বণিকরা নির্বিঘ্নে মদিনার পথ ধরে সিরিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশে বাণিজ্য করতে পারবে।

দশমত, হজের সময় মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তার বিধান করতে হবে এবং একে অপরের কোনো প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন করা যাবে না।

একাদশ, আরবের যেকোনো গোত্রের লোক মহানবি (সা.) এবং কুরাইশদের সাথে সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে।

দ্বাদশ, সন্ধির শর্তাবলি উভয়পক্ষকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। ত্রয়োদশ, সন্ধির শর্ত ভঙ্গকারী অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি পাবে। 

→ হুদায়বিয়ার সন্ধির গুরুত্ব/তাৎপর্য/ফলাফল/কেন মুসলমানদের নিরঙ্কুশ বিজয় বলা হয়-

ইসলামের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলাফল সুদূরপ্রসারী। পবিত্র কুরআনেই এটাকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয়েছে। নিম্নে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :ইসলামের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলাফল সুদূরপ্রসারী। পবিত্র কুরআনেই এটাকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয়েছে। নিম্নে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

১. ইসলামের মূল আদর্শের প্রচার : ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম তা কুরাইশদের মধ্যে স্পষ্ট করার সুযোগ ঘটে হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে। এ সন্ধির ফলে কুরাইশরা ইসলামকে নতুনভাবে চিনে এবং ইসলামে দীক্ষিত হতে লাগলো। এর কারণে খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং আমর বিন আস প্রমুখ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করলে ইসলামের শক্তি আরও সুসংহত হয়।

২. ইসলামের স্বীকৃতি : প্রত্যক্ষভাবে এ সন্ধি ইসলামি স্বার্থবিরোধী মনে হলেও পরোক্ষভাবে এটা ছিল প্রেরণাদায়ক । আরবের যেকোনো গোত্র রাসূল (সা.) এবং কুরাইশদের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে। এর ফলে কুরাইশদের কাছে চিরকাল অস্বীকৃত ইসলাম নতুনভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই শর্তটির ফলে গত ১৮ বছরে যা করা সম্ভব হয়নি তা মাত্র দেড় বছরে করা সম্ভব হয়।

৩. মক্কা বিজয়ের পথ প্রসার : হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তানুযায়ী নিজ নিজ ধর্ম প্রচারের অবাধ সুযোগ লাভ করলে যুদ্ধে লিপ্ত পৌত্তলিক আরবরা ইসলামের অন্তর্নিহিত গুণাবলিতে আকৃষ্ট হতে লাগলো। জোহরী ইমাম বলেন, পৌত্তলিক আরবদের এমন কোনো বুদ্ধিসম্পন্ন ও সুবিবেচক ব্যক্তি ছিল না যে, ইসলাম গ্রহণে প্রলুব্দ হয়নি। এ চুক্তির ফলে যেখানে ১৪০০ জন নিয়ে হুদায়বিয়া গিয়েছিলেন সেখানে মাত্র দুই বছর পর ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে মক্কা বিজয় করে।

৪. মদিনা প্রজাতন্ত্র : হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে কুরাইশরা মুসলমানদের একটি রাজশক্তি হিসেবে লিখিত স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে মদিনা রাষ্ট্র একটি প্রজাতন্ত্র আর রাসূল (সা.) একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর ফলে মদিনা প্রজাতন্ত্র এবং রাসূল (সা.)-এর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।

৫. শান্তি প্রতিষ্ঠা : হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে কুরাইশদের ক্রমাগত ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেয়ে মুসলমানরা শান্তিতে বসবাস করতে শুরু করলেন। ইসলামি বিশ্ব কোষের ভাষ্য মতে, “এ চুক্তির ফলে মুসলমানগণ ক্রমাগত যুদ্ধ-বিগ্রহ হতে অব্যাহতি পেল এবং তা ছিল বিজয়ের প্রথম পর্যায়।”

৬. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলাম : হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলেই মুসলমানরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলাম প্রচারের সুযোগ পেলো। এর পরে মহানবি (সা.) রোম, পারস্য, মিশর, বসরা, সিরিয়াসহ বহু দেশে ইসলাম প্রচারের সুযোগ গ্রহণ করে দাওয়াত দেওয়া শুরু করে।

৭. রাজনৈতিক প্রজ্ঞা : ঐতিহাসিকগণ নির্দ্বিধায় হুদায়বিয়ার সন্ধিকে মহানবি (সা.)-এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ বলে স্বীকার করেছেন। সন্ধি সম্পাদনের ফলে মক্কার পবিত্র কা'বাগৃহের উপর কুরাইশদের একচেটিয়া | আধিপত্য নষ্ট হয়। রাসূল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার ফলেই ইসলাম এতো দ্রুত প্রসার লাভ করে।

৮. যুদ্ধ বিরতির সুফল : হুদায়বিয়ার চুক্তির আগে সবসময় মুসলমানদের সাথে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকতো। কিন্তু এ চুক্তির ফলে যুদ্ধ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। PK. Hitti বলেন, “This treaty practically ended the war of Muhammad (sm) with his people the Quraysh. "

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি একটি যুগান্তরকারী ঘটনা। যার ফলে মহানবি (সা.) যেখানে মাত্র ১৪০০ লোক নিয়ে হজ পালন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে মাত্র দুই বছরে ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। এই কারণে মন্টোগোমারী ওয়াট বলেন, “এ সন্ধি মহানবি (সা.)-এর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার একটি দলিল।”

আর্টিকেলের শেষকথাঃ হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ