কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল  টি।

কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

 উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে কারবালা বিয়োগান্তক কাহিনী একটি সুদূরপ্রসারী ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইয়াজিদ যা কল্পনা করেছিল এর ফলাফল তদপেক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একে প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সিংহাসনের জন্য ইয়াজিদের একটি বিজয় বলে মনে হয়। কিন্তু এ বিজয় শেষ পর্যন্ত কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি, বরং ধ্বংস ও বিভীষিকার সৃষ্টি করেছিল। প্রায় ৬৩ বছর পর এটি উমাইয়া বংশের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে এনেছিল।

→ কারবালার হত্যাকাণ্ডের ফলাফল : কারবালার হত্যাকাণ্ডের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এ ঘটনার পর ইসলামের মোড় ঘুরে যায় । নিচে এর ফলাফল আলোচনা করা হলো :

১. ইসলামি ঐক্য বিনষ্ট : কারবালার মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড ইসলামি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের মূলে কুঠারাঘাত করে । এর ফলে মুসলমানদের জাতীয় ঐক্য ধসে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের গোত্র কলহ সৃষ্টি করে।

২. রাজনৈতিক বিপর্যয় : কারবালা যুদ্ধ ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য একটি রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এই রাজনৈতিক বিপর্যয় প্রথমে উমাইয়া খিলাফতের সর্বনাশ ডেকে আনে এবং পতনকে ত্বরান্বিত করে। পরবর্তীতে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে এ বিপদ সৃষ্টি করে ।

৩. শিয়া মতবাদের জন্ম : কারবালার ঘটনা মুসলিম সমাজকে দ্বিধা বিভক্ত করে এবং শিয়া মতবাদের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে শিয়ারা শুধু একটি দল নয় একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, “হুসাইনের রক্ত তার পিতার রক্ত অপেক্ষাও বেশি করে শিয়া মতবাদের বীজ রোপণ করেন। ১০ই মহররম শিয়া মতবাদের জন্ম হয়। এ ঘটনার পর হতে শিয়ারা মহরম এর প্রথম ১০ দিন শোক দিবস পালন করে।

৪. পারস্য জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান : কারবালার যুদ্ধ আসলে ছিল আরবদের দুই দলের মধ্যে একটি সংগ্রাম। কিন্তু কালক্রমে এটা আরব ও পারস্য এই দুই জাতির মধ্যে সংগ্রামের রূপ ধারণ করে। এ উদ্দীপনা পরবর্তীকালে উমাইয়াদের ধ্বংস সাধনে আব্বাসীয় বংশধরদের সহায়তা করেছিল।

৫. মক্কা ও মদিনায় বিদ্রোহ : কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার প্রত্যক্ষ ফলাফল ছিল যুবায়েরের নেতৃত্বে পরিচালিত মক্কা ও মদিনার বিদ্রোহ। কারবালার ঘটনা মক্কা ও মদিনাবাসীকে কঠিনতম আঘাত হেনেছিল। তারা ইয়াজিদের নিকট হজরত আলীর বংশধরের উপর কৃত অন্যায়ের প্রতিকার দাবি করল ।

৬. আব্দুল্লাহর খলিফা পদ ঘোষণা : আব্দুল্লাহ কারবালার দুঃখজনক ঘটনা শোনামাত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করলে মক্কা ও মদিনার জনগণ তাকে সমর্থন জানালো। সুযোগ বুঝে আব্দুল্লাহ নিজেকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করল। এ খবর পেয়ে ইয়াজিদ মক্কায় একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে তাকে দামেস্কে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

৭. হাররার যুদ্ধ : মদিনাবাসীগণ ইয়াজিদের অপকর্ম, জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ইয়াজিদের পদচ্যুতি ঘোষণা করে এবং তার নিযুক্ত শাসনকর্তাকে মদিনা হতে বিতাড়িত করে। ইয়াজিদ উকবার নেতৃত্বে মদিনা আক্রমণ করেন এবং হাররার যুদ্ধে মদিনাবাসীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।

৮. কাবা গৃহের ধ্বংস সাধন : মদিনা ধ্বংসের পর ইয়াজিদ বাহিনী মক্কার দিকে অগ্রসর হলো। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের নিজেকে সেখানকার খলিফা বলে ঘোষণা করেছিল। ৬৮৩ সালে হুসাইন বিন নুসাবের নেতৃত্বে এক অভিযান প্রেরণ করেন। হুসাইন বিন নুসার মক্কা অবরোধ করেন এবং কাবা ও অন্যান্য

৯. উমাইয়া হাশেমী বিরোধ : কারবালা হত্যাকাণ্ড পূর্বের উমাইয়া হাশেমী বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করে। কারবালা হত্যাকাণ্ড উমাইয়াদের দৃষ্টিতে ছিল হাশিম গোত্রের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ। তা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে যাবের যুদ্ধে উমাইয়ারা পরাজিত হলে আব্বাসীয়রা এর প্রতিশোধ গ্রহণ করে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কারবালার বিষাদময় ঘটনা শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয় বরং সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। পরবর্তীতে এটা কোনো সুফল বয়ে আনেনি বরং ধ্বংস ও বিভীষিকার সৃষ্টি করেছিল। তাই ঐতিহাসিক মূর বলেন, “কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা কেবল খিলাফতের ভাগ্যই নির্ধারণ করেনি, এটা খিলাফত ধ্বংসের অনেক পরে মুসলিম জাহানের ভাগ্যও নির্ধারিত হয়েছিল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কারবালার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ