খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর  টি।

খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর
খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর

খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : আব্দুল মালিকের রাজত্বকাল প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের পর আব্দুল মালিক সংস্কার কার্যে মনোনিবেশ করেন। রাষ্ট্রকে সুদৃঢ় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে তিনি কয়েকটি নতুন ব্যবস্থা ও গ্রহণ করেন। অধ্যাপক হিট্টি তার রাজত্বকালকে উমাইয়া বংশের গৌরবময় যুগ বলে অভিহিত করেন। আব্দুল মালিকের বিবিধ সংস্কার কার্যের ফলে মধ্য যুগের তাহজীব ও তমুদ্দিনের ভিত্তি রচিত হয়। এ দিক দিয়ে তাকে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির পুরোধা বলা যায় ।

→ আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার : উমাইয়া শাসন সুদৃঢ়করণে খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. আরবী ভাষার প্রচলন : আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্যে অন্যতম হলো আরবী ভাষার জাতীয়করণ। তিনি বিভিন্ন প্রদেশে প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তে গোটা সাম্রাজ্যে আরবী ভাষাকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন।

২. আরবী লিপির উন্নতি সাধন : আব্দুল মালিকের উল্লে- খযোগ্য সংস্কার ছিল আরবি বর্ণমালার উন্নতি সাধন। তৎকালীন আরবি ভাষায় দুটি সমস্যা ছিল এই যে, তাতে শুধুমাত্র বর্ণের ব্যবহার ছিল কোনো হরকতের ব্যবহার ছিল না। অপর সমস্যাটি ছিল এতে কোনো নোকতার প্রচলন ছিল না ফলে পড়তে সমস্যা হতো এবং অর্থের তারতম্য ঘটতো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি হাজ্জাজের সহযোগিতায় আরবী লেখায় হরকত ও নোকতার প্রচলন করেন।

৩. আরবী মুদ্রার প্রচলন : আব্দুল মালিকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার হলো আরবী মুদ্রার প্রচলন। নবি করীম (সা.)-এর আমলে রোমান ও পারসিক মুদ্রার প্রচলন ছিল। ওমর (রা.)-এর সময় সর্বাধিক মুদ্রার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। কোনো নির্দিষ্ট ছাপ ওজন আকৃতি ও নির্ণয়মূল্য না থাকায় অসংখ্য জাল মুদ্রার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। আব্দুল মালিক ক্ষমতা গ্রহণ করে মুদ্রা সংস্কারের দিকে নজর দেন। তিনি দিনার দিরহাম ও ফালুস নামে স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন ।

৪. জাতীয় টাকশাল স্থাপন : আব্দুল মালিকের বহুবিদ সংস্কারের মধ্যে টাকশাল স্থাপনও একটি। তিনি উপরিউক্ত মুদ্রা নির্মাণের জন্য দামেস্কে ৬৯৫ সালে টাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন । প্রতিটিমুদ্রায় কালেমা, টাকশালের নাম, তারিখ লেখা হতো। এভাবে তিনি ইসলামি সাম্রাজ্যে আরবী মুদ্রার প্রচলন করেন। একক মুদ্রা প্রচলিত হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক প্রচার লাভ করল।

৫. ডাক বিভাগের উন্নতি সাধন : আব্দুল মালিকের খিলাফতকালে ডাক বিভাগের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। তিনি ঘোড়ার গাড়ির সাহায্যে একস্থান হতে অন্য স্থানে ডাক আদান প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এই বাহনগুলো আবার রাজকর্মচারী ও জনগণের যানবাহন হিসাবেও ব্যবহৃত হতো। এমনকি এ বিভাগ সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ হিসেবে ও ব্যবহৃত হতো। মুয়াবিয়ার আমলে ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠা হয় কিন্তু আব্দুল মালিকের সময় এ বিভাগের চরম উন্নতি সাধিত হয় এবং পূর্ণতা লাভ করে ।

৬. রাজস্ব সংস্কার : আব্দুল মালিকের আমলে নও মুসলিমের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তারা যাকাত ব্যতীত অন্য কিছু সরকারকে প্রদান করতো না। এছাড়াও সরকারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিলে সরকারের বিশেষ ভাতাসমূহ লাভ করতো। ইহার ফলে রাজকোষে অর্থের সংকট দেখা দেয়। এ সংকট নিরসনে খলিফা সকল মাওয়ালীকে গ্রামে ফিরে গিয়ে কৃষিকাজ করতে ও জিজিয়া খারাজ কর প্রদান করতে বাধ্য করেন। এর ফলে অনুর্বর জমি কৃষির অধীনে আসে বিধায় | উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রথম তিন বছর এই জমিগুলো করমুক্ত ছিল। অতঃপর উৎপাদিত শস্যের অর্ধেক রাজস্ব হিসেবে ধার্য করা হতো। এভাবে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করে খিলাফতকে আসন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন ।

৭. নির্মাণ সংস্কার : আব্দুল মালিক একজন খ্যাতনামা নির্মাতা ছিলেন ৬৯১ সালে তিনি জেরুজালেমে কুব্বাতুস সাখরা নামে বিখ্যাত মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের একটি অন্যতম নিদর্শন। এটা ইসলামের প্রথম গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। আব্দুল মালিক মক্কা হতে জেরুজালেমের প্রতি হজ্জ যাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করেন ।

৮. কৃষি সংস্কার : খলিফা আব্দুল মালিক কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। সাম্রাজ্যের সর্বত্র খাল খনন, জলসেচ জলাভূমি ও অনাবাদি জমি চাষাবাদের ব্যবস্থা করেন। কৃষি কার্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। তিনি মুসলমান কর্তৃক মাওয়ালীদের জমি ক্রয় নিষিদ্ধ করেন অনুর্বর ও পতিত জমি তিন বছর মেয়াদে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ ও কৃষিঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

৯. দিয়ানুর বাসায়েল স্থাপন : আব্দুল মালিক সরকারী কাগজপত্র দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের জন্য যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি দিওয়ানুর বাসায়েল ' নামের দলিলপত্র রক্ষণাবেক্ষণ ভাগের নির্দেশ করেন।১০. বিচার সংক্রান্ত সংস্কার : খলিফা আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহণ করে একটি সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ধর্মীয় নীতির ভিত্তিতে সাম্রাজ্যের একটি নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা কায়েম করতে সক্ষম হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আব্দুল মালিক প্রবর্তিত আরবীয়করণ বা জাতীয়করণ নীতি মুসলিম সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিল। আরব জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অপরিসীম। তার এই আরবীয়করণ নীতি ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা আব্দুল মালিকের প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ