শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান অবদান মূল্যায়ন কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর  টি।

শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর
শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর

শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর

উত্তর : ভূমিকা : খলিফা আব্দুল মালিক ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত খিলাফতে আরোহণ করে ইসলামি সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হন। তিনি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বারা অভ্যন্তরীণ সকল বিদ্রোহ দমন করে শাসন সংস্কারে মনোযোগ দেন। শাসন সংস্কারে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো আরবীয়করণ নীতি। এ নীতির দ্বারা তিনি আরবি ভাষাকে সকল ভাষার ঊর্ধ্বে স্থান দিতে সক্ষম হন। খলিফা আব্দুল মালিক তার কর্মদক্ষতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও চরিত্রগুণে উমাইয়া বংশকে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে একে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।

উমাইয়া শাসন সুদৃঢ়করণে আব্দুল মালিকের অবদান : দীর্ঘ ২০ বছর শাসন করে আব্দুল মালিকের অবদান চিরস্মরণীয়। তার শাসনকালের তিনটি দিক লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত, বিদ্রোহ দমন করে রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দ্বিতীয়ত হৃতরাজ্য পুনর্দখলের জন্য সামরিক অভিযান এবং তৃতীয়ত, শাসনব্যবস্থার পুর্নবিন্যাস ও পুনর্গঠন দ্বারা উমাইয়া প্রভুত্বকে দূরীকরণ। নিম্নে আব্দুল মালিকের অবদান আলোচনা করা হলো :

(ক) বিদ্রোহ দমন : খিলাফতে আরোহণ করেই আব্দুল মালিককে বিভিন্ন বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকতে হলো। খিলাফতের একমাত্র উত্তরাধিকারী প্রাপ্ত খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ও আমর ইবনে সাইদ ব্যতীত শত্রু, বিদ্রোহ, কোন্দল অসন্তোষ এবং অরাজকতা আব্দুল মালিকের বিশ বছরের রাজত্বকালকে বিপদসংকুল করে তোলে, তবে তিনি দৃঢ়তার সাথে এ সকল বিদ্রোহ দমন করেন। নিম্নে তার সময়কালে বিদ্রোহ দমনগুলো উল্লেখ করা হলো ।

১. মুখতারের বিদ্রোহ দমন: শিয়া মতাবলম্বী মুখতার প্রখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন। তার প্রধান সেনাপতি ইব্রাহীম ইবনে আসগর ৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে জারের যুদ্ধে কারবালার কসাই ওবায়দুল্লাহকে পরাজিত ও নিহত করে হুসাইন (রা.)-এর হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করেন এবং তার কর্তিত মস্তক মুখতারের নিকট পাঠানো হয়। কিন্তু ইরাকীদের বিরোধিতায় ৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে মার্চ অনুষ্ঠিত যুদ্ধে মুখতার পরাজিত ও নিহত হন।

২. খালিদ ও আমরের বিদ্রোহ দমন : আব্দুল মালিক সিংহাসনের দাবিদার খালিদ ইবনে ইয়াজিদকে স্বীয় দলভুক্ত করেন। এদিকে আমর ইবনে সাঈদ ৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। আব্দুল মালিক তাকে প্রলোভন দেখিয়ে প্রাসাদে আনয়ন করে স্বহস্তে হত্যা করেন। এভাবে দামেস্কে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে আব্দুল মালিক ইবনে যুবায়ের এবং মুসাব এর বিরুদ্ধে অভিযান করেন।

৩. মুসাবের বিদ্রোহ দমন : আব্দুল মালিক সিরিয়ার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করে ইরাকের শাসনকর্তা মুসায়াবের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। মুসায়াবও সসৈন্যে আব্দুল মালিকের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। এদিকে আব্দুল মালিক সুচতুরতার জোরে গোপনে ইরাকীদের নিজ দলে আনয়ন করেন। ফলে মুসাব এবং আব্দুল মালিকের মধ্যকার যুদ্ধের সময় ইরাকীরা মুসাবকে সাহায্য করেনি। ফলে মুসাব পরাজিত হন।

৪. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সঙ্গে সংঘর্ষ : ইবনে যুবাইর দীর্ঘ সাত বছর মক্কায় শাসন করে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এদিকে আব্দুল মালিক তাকে দমন করার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে পাঠান। হাজ্জাজ দীর্ঘ সাত মাস মক্কা অবরোধ করে রাখেন। এখানেও আব্দুল মালিক মক্কাবাসীদেরকে গোপনে নিজ দলে আনয়ন করেন । যার ফলে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর এর পতন হয়।

৫. খারেজিদের বিদ্রোহ দমন : মুসাবের সেনাপতি মুহাল্লাব খারেজিদের বিদ্রোহ দমনে নেতৃত্ব দেন। খারিজিরা ইরাক ও পারস্যে নিজেদের শক্তিশালী করে তোলে। ফলে আব্দুল মালিক খারিজিদের দমন করার জন্য মুহাল্লাবকে প্রেরণ করেন। মুহাল্লাব খারেজিদেরকে পরাজিত করে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। পরবর্তীতে আফতাবসহ কতিপয় খারিজি হাজ্জাজের হাতে প্রাণ বিসর্জন দেয় এবং অনেকেই আল আহসার মরুভূমিতে আত্মগোপন করে ।

৬. জানবিলের বিরুদ্ধে অভিযান : সিজিস্তানের রাজা জানবিল কাবুল হতে কান্দাহার পর্যন্ত একটি বিস্তৃত অঞ্চলের শাসন পরিচালনা করছিলেন। ইহা মুসলিম সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ ছিল। তাই হাজ্জাজ একটি বিশাল বাহিনী জানবিলের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। কিন্তু এ বাহিনী জানবিলের নিকট পরাজিত হয়। পরাজয়ের গ্লানি মোচনের জন্য হাজ্জাজ ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে ময়ূর বাহিনী নামে একটি সুসজ্জিত বিশাল সৈন্যবাহিনী তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। এ ময়ূর বাহিনীর নেতৃত্ব দান করেন আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মদ বিন আল আসাথ। ময়ূর বাহিনী জানবিলকে পরাজিত করে হৃতরাজ্য পুনরাধিকার করে। হাজ্জাজ ময়ূর বাহিনীকে অত্যাচার করার আদেশ দিলে ময়ূর বাহিনী তা অমান্য করেন। হাজ্জাজের কঠোরতা ও জিজ্ঞসামূলক প্রবৃত্তির জন্য আল আসাদের সৈন্যদল বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

৭. ইবনে আল-আসাদের বিদ্রোহ : হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফ হৃদয়হীন শাসনকর্তারূপে ইতিহাসে সুপরিচিত। জানবিলের বিরুদ্ধে অভিযান কালে হাজ্জাজ ময়ূর বাহিনীর প্রধান আসাদকে জানবিলের সমর্থকদের প্রতি নির্যাতন, অবিচার করার নির্দেশ দিলে আসাদ তা অমান্য করেন। আসাদের সৈন্যবাহিনীরাহাজ্জাজের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এদিকে হাজ্জাজের কুশাসনে অনেক লোক ময়ূর বাহিনীতে যোগদান করে। এ বাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১,০০,০০০ অবশেষে হাজ্জাজের বাহিনীর সাথে ময়ূর বাহিনীর মাসফিন নামক স্থানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে আসাদের বাহিনী পরাজিত হয়। ফলে বসরা ও কুফার উমাইয়া আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

(খ) হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার : আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহণ করে বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন । নিম্নে তার হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. বাইজান্টাইনদের সাথে যুদ্ধ : গৃহযুদ্ধের সুযোগে বাইজান্টাইন রাজা মুসলিম রাজ্যে প্রবেশ করে। ৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল মালিক তার সেনাপতিদের নিয়ে এশিয়া মাইনর, আর্মেনিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার উপকূলে বার্ষিক অভিযান প্রেরণ করেন। মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলনকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের সাথে বাইজান্টাইনদের সংঘর্ষ বাধে। বাইজান্টাইনরা এন্টিওক দখল করলে মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করে। তাদেরকে ইবজিরোম পর্যন্ত বিতাড়িত করে। অনেক দুর্গ মুসলিমরা অধিকার করে। আমীর আলী বলেন, “পূর্বদিকে কাবুল অঞ্চলে রাটবিল নামে যে একজন হিন্দু যুবরাজ রাজত্ব করতেন তা মুসলমানদের করতোলগত হয়।”

২. উত্তর আফ্রিকা পুনরুদ্ধার:  মুয়াবিয়ার খেলাফতকালে ওকবা ইবনে নাফীর নেতৃত্বে মুসলিম আধিপত্য উত্তর আফ্রিকায় বিস্তৃতি লাভ করে এবং নবঅধিকৃত প্রদেশের রাজধানী কায়রোয়ানে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওকবার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী কায়রোয়ান থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়। পরবর্তীতে আব্দুল মালিক মুসা-ইবনে-নুসাইরকে উত্তর আফ্রিকায় প্রেরণ করে গ্রীকদের কার্থেজ থেকে বিতাড়িত করে পুনরায় মুসলিম আধিপত্য আটলান্টিক পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

(গ) শাসনব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস : আব্দুল মালিক সকল প্রকার অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃশত্রুর বিদ্রোহ দমন করে শাসনব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের দিকে মনোযোগ দেন। নিম্নে তার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১আরবি ভাষা প্রচলন : আব্দুল মালিক শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি শাসনব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয়করণ করার জন্য আরবি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দান করেন। ৬৯৬-৯৭ খ্রিস্টাব্দে খলিফা এক আদেশে আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তে সরকারি দলিলপত্রাদি আরবি ভাষায় সংরক্ষণের প্রথা চালু করেন। ঐতিহাসিক বার্নাড লুইস বলেন, “বিভিন্ন প্রদেশে প্রবর্তিত পুরাতন বাইজান্টাইন এবং পারস্য শাসনব্যবস্থার স্থানে আরবিকে শাসন কার্য ও হিসাব রক্ষার জন্য সরকারি ভাষার মর্যাদা দান করে একটি নতুন আরব রাজকীয় ব্যবস্থার প্রচলন করা হলো।”

২. আরবি মুদ্রার প্রচলন : আব্দুল মালিক সাম্রাজ্যে একক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য খাটি আরবি মুদ্রা চালু করেন। পূর্বে মুসলিম সাম্রাজ্যে রোমান, পারস্য এবং হিমারীয় প্রভৃতি মুদ্রা চালু ছিল। আব্দুল মালিক ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে জাতীয় টাকশাল স্থাপন করেন। সেখান থেকে তিনি দিনার, দিরহাম এবং ফালুস নামে উন্নত আরবি মুদ্রার প্রচলন করেন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।

৩. আরবি লিপির উন্নতি সাধন : আব্দুল মালিকের রাজত্বের পূর্বে আরবি লিপির দুটি ত্রুটি দেখা যায় প্রথমত এতে কেবল ব্যঞ্জন বর্ণ ছিল। একই ধরনের উচ্চারণ হতো হরকতের অভাবে। দ্বিতীয়ত, নোকতা না থাকার কারণে একই আকৃতির হরফগুলোর পার্থক্য সৃষ্টি করা যেত না। ফলে অনারব মুসলমানগণ আরবি পাঠে এক বিরাট অসুবিধার সম্মুখীন হন। আরবি ভাষা সহজতর পঠন ও লিখনের জন্য আব্দুল মালিক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সহযোগিতায় বর্ণমালায় হরকত ও নোকতা প্রবর্তন করেন।

৪. ডাক বিভাগের উন্নতি সাধন : আব্দুল মালিকের খেলাফতকালে ডাক বিভাগের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়। সাম্রাজ্যের রাজধানী দামেস্ক থেকে দূরবর্তী স্থানে যোগাযোগের জন্য বদলি ঘোড়া নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়, ডাক বিভাগ গোয়েন্দা সংস্থার কাজও করাতো। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের পোস্ট মাস্টারগণ নিজ নিজ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন দ্বারা সরকারি মালপত্র যেমন | একস্থান হতে অন্যস্থানে তাড়াতাড়ি পাঠানো যেত, তেমনি পথিকরাও এর সাহায্যে যাতায়াত করতে পারতো।

৫. রাজস্ব বিভাগের উন্নতি : আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহণের পর সাম্রাজ্যের চরম অর্থনৈতিক সংকট অবলোকন করেন। তিনি এ চরম সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফের পরামর্শে রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন । সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে ইসলাম ও বিস্তার লাভ করে এবং নবদীক্ষিত মুসলমান বা মাওয়ালিরা শুধু ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতো, তারা কোনো প্রকার ভূমি রাজস্ব দিত না তারা সৈন্য দলে যোগদান করে নিয়মিত ভাতাও পেতো। তাই আব্দুল মালিক অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য রাজস্ব ব্যবস্থার দিকে মনোনিবেশ করেন। তার সমস্যা সমাধান করেন।

৬. সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা : আব্দুল মালিক সাহিত্যের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি নিজেও একজন উচু মানের লেখক ছিলেন। তিনি জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন। জারির আল আখতাল, আজ্জা, কুসাইর ও আল ফারাযদাফ প্রমুখ কবি তার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির জ্ঞানী ও গুণীদের সমাদর করতেন। বিশেষ করে অমুসলিমরা দরবারে বিশেষ মর্যাদা লাভ করতেন। তায়াযুফ নামক একজন খ্রিস্টান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। সারজিয়াস নামক একজন খ্রিস্টান তার প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন।

৭. স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক : আব্দুল মালিক একজন স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। আব্দুল মালিক হজ যাত্রীদেরকে জেরুজালেমের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে কুব্বাত আস সাখরা বা পাথরের গম্বুজ নির্মাণ করেন। এর দক্ষিণ পাশে তিনি মসজিদুল আকসা নামে অপর একটি সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি দজলা নদীর পশ্চিম তীরে ওয়াসিত নামে একটি শহর নির্মাণ করেন। যা বিশ্ব ইতিহাসে প্রসিদ্ধ অর্জন করেছে। তিনি দামেস্কে মহাফেজখানা বা সরকারি দলিল দস্তাবেজখানা স্থাপন করেন ।

৮. জনহিতকর কার্যাবলি : আব্দুল মালিক জনহিত কাজের জন্য ইতিহাসে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ স্থাপন করেন। তিনি কৃষিকাজের জন্য সেচ সুবিধা নিশ্চিত করেন। তিনি অনাবাদি ভূমিকে আবাদ করার ব্যবস্থা করেন এবং অনুর্বর ভূমিকে উর্বর করেন। তার সময় আরবি ভাষার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র জাল মুদ্রা উঠিয়ে খাটি আরবি মুদ্রার প্রচলন করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্দুল মালিক উমাইয়া বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি দক্ষতা, কূটনৈতিক জ্ঞানের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যের উন্নতি সাধন করেন। গৃহযুদ্ধ দমন করে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন, সংহতি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি দ্বারা উমাইয়া বংশের ভিত্তি সুদৃঢ় করেন। জনৈক ঐতিহাসিক বলেন, “আব্দুল মালিক শুধু উমাইয়া বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না তিনি এ বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ খলিফাও ছিলেন।” উমাইয়া বংশের শ্রেষ্ঠ খলিফা হিসেবে আব্দুল মালিকের জীবন সার্থক।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শাসক হিসেবে আব্দুল মালিক বিন মার ওমানের অবদান মূল্যায়ন কর  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ