উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ বর্ণনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ বর্ণনা কর।

উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ বর্ণনা কর
উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ বর্ণনা কর

উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ বর্ণনা কর

  •  অথবা, উমাইয়া শাসকদের পতনের কারণগুলো আলোচনা কর।
  • অথবা, উমাইয়া বংশের পতনের প্রধান কারণগুলো আলোচনা কর।

উত্তর :  ভূমিকা : মুয়াবিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ উমাইয়া বংশ নামে পরিচিত। ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৯০ বছর উমাইয়াগণ মুসলিম খিলাফত পরিচালনা করেন। মুয়াবিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের উত্থান, উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ ও পতন এ তিনটি ধাপে অতিক্রম করে। নানাবিধ কারণের পরিপ্রেক্ষিতে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে জাবের যুদ্ধে দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে উমাইয়া শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

→ উমাইয়া বংশের পতনের কারণসমূহ : উমাইয়া বংশের পতনের কারণগুলো নিম্নরূপ :

১. ঐতিহাসিক কারণ : প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে, “কোনো রাজবংশের এক শতাব্দীর অধিকাল শৌর্য-বীর্য এবং কর্মশক্তি বজায় রাখতে পারে না।” এর পরেই তার পতনের পালা শুরু হয়। উমাইয়া বংশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

২. খলিফাদের অযোগ্যতা ও দোষত্রুটি : সর্বমোট ১৪ জন উমাইয়া খলিফার মধ্যে মুয়াবিয়া, আব্দুল মালিক, আল-ওয়ালিদ, দ্বিতীয় ওমর ও হিশাম ব্যতীত অবশিষ্ট শাসকগণের অযোগ্যতা ও অদক্ষতা উমাইয়া বংশের পতনকে ত্বরান্বিত করে। অধ্যাপক কে আলী তার 'The study of Islamic History' গ্রন্থে বলেন, “শাসকদের অসামর্থ্যতা এবং চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি এ রাজবংশের পতনের কারণ হিসেবে সুস্পষ্ট।"

৩. রাজতন্ত্রের কুফল : উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া বিশ্বাসঘাতকতা, কপটতা ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে পুত্র ইয়াজিদকে মনোনয়ন দান করে পরবর্তী উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে ইসলামি গণতন্ত্রের পরিবর্তে মুসলমানগণ উমাইয়াদের প্রতি আস্থা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।

৪. সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব : উমাইয়া যুগে গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় খলিফার মৃত্যুর পর পরবর্তী খলিফা নির্বাচনে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি ছিল না। খলিফারা যোগ্যতার কথা চিন্তা না করে নিজ পুত্রদের পরবর্তী খলিফা নিয়োগে প্রাধান্য দিতেন। ফলে যোগ্যের চেয়ে অযোগ্য খলিফাই বেশি নিয়োগ পেতেন। ফলে সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে ।

৫. খলিফাদের বিলাসিতা ও ধর্মীয় কাজে অবহেলা : উমাইয়া খলিফাদের বিলাসিতা ও ধর্মীয় কাজে অবহেলা এবং শেষ পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। উমাইয়া খলিফারা যদিও মুসলমান তথাপি তাঁরা ইসলামি খেলাফত থেকে দূরে সরে পড়ে এবং স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় কাজের প্রতি অবহেলা শুরু করে এবং তারা মদ, জুয়া, নারী, সঙ্গীতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মুসলমানগণ তাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে।

৬. মন্ত্রিবর্গের বিশ্বাসঘাতকতা : অধিকাংশ উমাইয়া খলিফাই তাদের অযোগ্য ও অদক্ষ মন্ত্রীদের হাতে শাসনকার্য অর্পণ করে মদ, নারী ও সংগীতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। খলিফারা যখন ভোগ বিলাসে ব্যস্ত, সুচতুর উজিরগণ তখন নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে সিদ্ধহস্ত। মন্ত্রিবর্গ নিজ ইচ্ছা মোতাবেক কার্যকলাপ পরিচালনা করেন। এমনকি রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ করতে তারা কুণ্ঠবোধ করেননি। অনেক সময় বিদ্রোহীদের সাহায্য করেছেন এবং বিদ্রোহীদের দলে যোগদান করে খলিফাদের পতন ঘটান ।

৭. হাশেমী ও উমাইয়া দ্বন্দ্ব : উমাইয়া বংশের পতনের জন্য কুরাইশ বংশের দু'টি শাখা হাশেমী ও উমাইয়াদের মধ্যকার বিরোধ কম দায়ী ছিল না। হাশেমীদের হাত থেকে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করার ফলে হাশেমীয়রা উমাইয়াদের বিরোধিতা করতে থাকে। অপরদিকে, উমাইয়ারা হাশেমীয়দের দমনের জন্য নানাভাবে তাদের শোষণ করতে থাকে।

৮. মাওয়ালিদের প্রতি দুর্ব্যবহার : উমাইয়া খলিফারা মাওয়ালি মুসলমানদের প্রতি নানা ধরনের দুর্ব্যবহার করেন। তাদের কে অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট মুসলমান হিসেবে বিবেচনা করা হতো। নব্য মুসলমানগণ যদিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তথাপিও উমাইয়া শাসকগণ তাদের উপর জিজিয়া ও খারাজ ধার্য করেন। ফলে মাওয়ালিরা উমাইয়া শাসনের বিরোধিতা করেন।

৯. হিমারীয় ও মুদারীয়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব : আরব জাতির সাম্প্রদায়িক কলহ উমাইয়া বংশের পতনের আর একটি কারণ। আরব জাতির মুদার (হেজাযী আরব) ও হিমার (ইয়েমেনী আরব) গোত্রদ্বয়ের পারস্পরিক কলহ উমাইয়া সাম্রাজ্যের শক্তিকে দুর্বল করে ফেলেছিল। হিশাম ইয়েমেনীদের অনুগ্রহ প্রদর্শন করতেন এবং দ্বিতীয় ওয়ালিদ মুদারীয়দের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। সিরিয়ার ইয়েমেনী গোত্রের সমর্থন লাভ করে তৃতীয় ইয়াজিদ এবং মুদারীয়দের সহায়তায় দ্বিতীয় মারওয়ান ক্ষমতা লাভ করেছিল। তাঁদের এ পক্ষপাতিত্ব গোত্রীয় প্রতিহিংসাকে প্রজ্বলিত করে এবং সাম্রাজ্যের সর্বত্র দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের কারণ ঘটায় ।

১০. শিয়া সম্প্রদায়ের বিরোধিতা : শিয়া সম্প্রদায়ের বিরোধিতা ও উমাইয়া বংশের পতনের জন্য একটি কারণ ছিল। আলীর বংশের সমর্থক শিয়াগণ উমাইয়াদের কার্যকলাপে সন্তুষ্ট হতে পারে নি। হযরত আলী তাঁর পুত্র ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের প্রতি উমাইয়া খলিফাদের অন্যায় ব্যবহার তাঁদের অন্তরে গভীর রেখাপাত করেছিল। আলী বংশধরদের প্রতি ঘৃণা এবং খুতবাতে তাঁদের প্রতি নিন্দা প্রকাশ ও কুৎসা রটনা করায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই উমাইয়াদের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছিল।

১১. খারিজি বিদ্রোহ : খারিজি সম্প্রদায়ের ঘনঘন বিদ্রোহ উমাইয়া সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে দুর্বল করে ফেলেছিল। খারিজিরা ছিল গণতান্ত্রিক নীতির সমর্থক এবং তারা উমাইয়াদের বংশগত শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি। খারিজিগণ উমাইয়া বিরোধী শক্তিসমূহের সাথে মিলিত হয়ে উমাইয়া বংশের পতনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

১২. আব্বাসীয় আন্দোলন : সাম্রাজ্যের চতুর্দিকে যখন অসন্তোষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখন আব্বাসীয়গণ প্রচার করতে লাগলেন যে, তাঁরা হযরতের বংশকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্দোলন চালাচ্ছেন। আলীর বংশ ও আব্বাসীয় বংশ উভয়ই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অর্থাৎ হাশেমীয় বংশের অন্তর্ভুক্ত। কৌশলে হযরত আলীর (রা:) সমর্থকদেরকে নিজেদের দলে এনে আব্বাসীয়গণ উমাইয়াদের বিরুদ্ধে পূর্ণোদ্যমে আন্দোলন আরম্ভ করলেন। তাদের এ আন্দোলনের নেতৃত্ব নিলেন ইতিহাস বিখ্যাত আবু মুসলিম। উমাইয়ারা তাদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ভাগ্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। জাবের যুদ্ধে (৭৫০ খ্রিঃ) উমাইয়া বংশের শেষ খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ান পরাজিত ও নিহত হলে উমাইয়া সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অরাজকতা, দুর্বলতা, গোত্রীয় কলহ, কর্মহীনতা ইত্যাদি কারণে উমাইয়া বংশের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তাছাড়াও সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করে কোনো শাসন টিকে থাকতে পারে না। মূলত উমাইয়াগণ যে তরবারির জোরে একদিন ক্ষমতা দখল করেছিল ঠিক সেভাবেই আব্বাসীয়দের তরবারির আঘাতে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ উমাইয়া শাসকদের পতনের কারণগুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম উমাইয়া বংশের পতনের প্রধান কারণগুলো আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ