১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর ।

১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর
১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর

 ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর

  • অথবা, ১৯৪৭ সালের বাংলা বিভক্তির কারণ ব্যাখ্যা কর। 
  • অথবা, ১৯৪৭ সালে ভারত কেন বিভক্ত হয়? এটা কি অপরিহার্য ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : ১৯০৫-এর বঙ্গবিভাগ এমনই অসন্তোষ সৃষ্টি করে যে নিজেদের ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ণ রাখতে গিয়ে ব্রিটিশরা অবশেষে ১৯১১ সালে তা রদ করতে বাধ্য হয়। ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভাগ হয়েছিল অনেকটা পূর্বেকার বিভাগ অনুসরণ করেই। তবে ভারত এবং এর সঙ্গে বাংলারও এ বিভাগ হয়েছিল মূলত হিন্দু-মুসলিম জনমত, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব এবং জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে। বাংলার প্রধানমন্ত্রী. হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেষ মুহূর্তে উদ্যোগ নেন বাংলাকে একটি অখণ্ড স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। বলা বাহুল্য, তাঁর এ প্রয়াস সফল হয়নি। মূলত যে সকল কারণে ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হয়ে গেল তা হলো :

১. মুসলিম প্রতিনিধিত্বের প্রাধান্য ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে বাংলায় যে কয়টি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছিল তাতে মুসলমান প্রতিনিধিত্বের প্রাধান্য ছিল। এতে হিন্দু জনগণের মধ্যে অনেক হতাশা বিরাজ করছিল। ফলে হিন্দুদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয় যে বাংলা অবিভক্ত থাকলে সেখানে হয়তো সংখ্যাধিক্যের জন্য মুসলমানদেরই আধিপত্য থাকবে চিরকাল। এ কারণে তারা বাংলাকে অখণ্ড রেখেই ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে দেখতে আগ্রহী ছিল, বাংলাকে পৃথক বা পাকিস্তানের অংশরূপে কেনোভাবেই মেনে নিতে চায়নি অপ ১ মুসলমানদের মধ্যে শঙ্কা ছিল যে বাংলা অখণ্ড ভারতের অঙ্গীভূত হলে এখানে নানা কারণে হিন্দুরাই প্রাধান্য বিস্তার করবে। উভয় সম্প্রদায়ের এসব নেতিবাচক মনোভঙ্গি।

২. ৩ জুন পরিকল্পনা : ১৯৪৭-এর ৩ জুন প্রকাশিত বাংলাবিভাগ পরিকল্পনায় বাংলাকে বিভাজনের বিস্তারিত পদক্ষেপ ও কার্যক্রম এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতিসমূহ বিধৃত হয়। এসবের মধ্যে ছিল (ক) বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত ও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পৃথকভাবে এবং অনুরূপ পাঞ্জাবেও গণভোট অনুষ্ঠান; (খ) আসামের সুরমা অববাহিকায় (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলায়) এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে গণভোট অনুষ্ঠান এবং (গ) প্রস্তাবিত রাজ্য/প্রদেশসমূহের সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠন। ১৯৪৭ সালের বাংলা বিভাগের এটিও ভূমিকা রাখে।

৩. গণপরিষদের রায় : ৩ জুন পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাবিভাগের সিদ্ধান্ত গণপরিষদে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৪৭- এর ২০ জুন। এরপর কয়েক দফা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে গণপরিষদের সদস্যবৃন্দ ১২৬-৯০ ভোটে ভারতের গণপরিষদের পরিষদ বিভক্তির সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচনি এলাকার গণপরিষদ সদস্যসমূহ পৃথক বৈঠকে ১০৬-৩৫ ভোটে বাংলা বিভাগ প্রস্তাব অনুমোদন করেন এবং পাকিস্তানের নতুন গণপরিষদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহের গণপরিষদ সদস্যবর্গ ৫৮- ২১ ভোটে বাংলা বিভাগের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে ।

৪. সংখ্যাসাম্য তত্ত্বের বিরোধিতা : অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের পদক্ষেপ হিসেবে চাকরি ও জনপ্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে বাংলায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সংখ্যাসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই সংখ্যাসাম্যকে গণতান্ত্রিক বলা যায় না, আর যে কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে সংখ্যাসাম্য মেনে নেওয়াটা একটা ত্যাগ হতো বটে; প্রতিষ্ঠিত সুযোগগুলো -উপভোগের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া। মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের এ ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা তথা সংখ্যাসাম্য তত্ত্বের বিরোধিতাও ১৯৪৭ সালের বাংলা বিভাগের জন্য দায়ী।

৫. সর্বভারতীয় বাঙালি নেতার অভাব : চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় এমন কোনো নেতা রইলেন না যিনি ভারতীয় মাপের এবং যিনি বাংলার সমস্যাকে স্বতন্ত্রভাবে দেখবেন, সারা ভারতের সমস্যা হিসেবে না দেখে। এরূপ পরিস্থিতিতেই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বাংলাকে গ্রাস করে ফেলল, একদিক দিয়ে গান্ধী এলেন, অন্যদিক দিয়ে জিন্নাহ। বাংলার ভাগ্য ভারতের ভাগ্য ও রাজনীতির সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই ভারত যখন ভাগ হলো বাংলাও তখন ভাগ হলো। না হয়ে উপায় রইল না।

৬. শরৎ বসুর ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা : কংগ্রেসের ইতিহাসে দেখা যায় প্রথম ছাব্বিশ জন সভাপতির মধ্যে ছয় জনই ছিলেন বাঙালি। কিন্তু ১৯১০-১১-এর পরে চিত্তরঞ্জন ও সুভাষ বসু ভিন্ন আর কোনো বাঙালিকে পাওয়া যায়নি। সুভাষ বসু দুবার সভাপতি নির্বাচিত হন । দ্বিতীয়বার যখন হলেন তখন কাজ করতে পারেননি, গান্ধীর অসহযোগিতার কারণে। গান্ধী তাঁকে চরমপন্থি ভাবতেন । তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শরৎচন্দ্র বসু উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বাধীন বঙ্গভূমি প্রতিষ্ঠার কিন্তু মানতেই হবে যে, সুভাষ বসুর ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব তাঁর কাছ থেকে আশা করা সঙ্গত ছিল না এবং তা পাওয়াও যায়নি। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হয়ে যায়।

৭. ফজলুল হকের অপরিণামদর্শিতা : ব্রিটিশ শাসনমলের শেষ দিকে বাঙালি মুসলমান সমাজের মধ্যবিত্তরাও শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন। বাঙালি মধ্যবিত্ত থেকেই এ. কে. ফজলুল হক বের হয়ে এসেছেন। তিনি অত্যন্ত বড়-মাপের নেতা; কিন্তু তাঁকেও রাজনীতি করতে হয়েছে নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যেই। অত উঁচুমানের নেতা ফজলুল হক, সর্বভারতীয় পর্যায়ে গণ্য হবার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ওই একজনই; কিন্তু সাতচল্লিশের বঙ্গভঙ্গের মতো ভয়ংকর ঘটনার সময় দেখা যাচ্ছে তাঁর তেমন কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা নেই ।

৮. বাংলায় বাঙালি নেতৃত্বের অভাব : তৎকালীন বাংলার মুসলমান নেতাদের কেউ কেউ আবার বাংলায় ছিলেন বটে কিন্তু বাঙালি ছিলেন না। সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের মধ্যে ব্যবধান বিস্তার। কিন্তু মিল এখানে যে, দুজনের কেউই যথার্থ বাঙালি নন। বাংলা তাঁদের ভাষা নয়; বাংলার স্বার্থও তাঁরা দেখতেন না, দেখতেন নিজেদের স্বার্থ। যেমন- ধরা যাক, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি। নাজিমুদ্দিন তো সরাসরিই উর্দুর পক্ষে 'বলেছেন, সোহরাওয়ার্দীও উর্দুর পক্ষেই বলেছেন, যদিও তিনি সরকারবিরোধী অবস্থানে ছিলেন তাই তাঁর মতটা তেমন প্রচার পায়নি। তাই বলা যায়, বাংলা ভাগের পেছনে প্রকৃত বাঙালি নেতৃত্বের অভাবই দায়ী ।

৯. নাজিমুদ্দিনের উস্কানিমূলক বক্তব্য : বাংলার রাজনীতিতে নাজিমুদ্দিনের ভূমিকা সবসময়েই ছিল প্রতিক্রিয়াশীল। ১৯৪৬- এর ১৬ আগস্ট কলকাতায় যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় তাতে তাঁর একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি বাংলা বিভাগে ইন্ধন যুগিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার আগে কলকাতার মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল যাতে নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, “আমাদের সংগ্রাম ইংরেজের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের সংগ্রাম হিন্দুদের বিরুদ্ধে।”

১০. সাংগঠনিক যোগাযোগের অভাব : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলির ঘোষণায় যখন বোঝা গেল ক্ষমতা হস্তান্তর আসন্ন, তখন স্বভাবতই হিন্দু-মুসলমান উভয় পক্ষের নেতারা ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠলেন। বাংলার ক্ষেত্রে হিন্দু মহাসভাপন্থিরা দাবি তুললেন প্রদেশটিকে ভেঙে দু'টুকরো করার। একদিকে ছিলেন সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম, অন্যদিকে শরৎ বসু। কিন্তু তাঁদের এই যৌথ উদ্যোগ যে সফল হবে না সেটা শুরুতেই বোঝা গিয়েছিল। কারণ চেষ্টাটি ছিল ওপরতলার বলা যায়, বৈঠকখানার এবং সংবাদপত্রে বিবৃতির । এর সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে লীগের বা কংগ্রেসের যোগ ছিল না ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অখণ্ড স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব কংগ্রেসের নেতা মহাত্মা গান্ধী এবং মুসলিম লীগ নেতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির কারণ উল্লেখ কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ